আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতনির্ভরতাই বিএনপির কাল

সারা দেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও সমর্থক থাকলেও স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে সুবিধা করতে পারছে না দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টিকারী দল হিসেবে পরিচিতি লাভকারী জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য আর সহিংসতায় ভেস্তে যাচ্ছে বিএনপির আন্দোলন। সারা দেশের সামষ্টিক আন্দোলনের কথা বাদ দিলেও রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের এ নাজুক অবস্থার জন্য দলটির জামায়াত-শিবিরনির্ভরতাকেই দায়ী করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তারা বলছেন, বিএনপি যদি জামায়াত-শিবিরের কবল থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারে তবে তাদের আন্দোলনও যেমন নতুনমাত্রা পাবে, তেমনি সরকারও আর মুক্তিযুদ্ধের বাজার এককভাবে দখলে রাখতে পারবে না। কারণ প্রকৃত হিসাবে দেখা যাবে- বিএনপিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়েও '৭১-এর রণাঙ্গনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক বেশি। তারপরও যে এ দলটি কেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে অাঁকড়ে ধরে আছে তা বোধগম্য নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জোট ছাড়লে বিএনপির আন্দোলনে আরও গতি বেড়ে যাবে। বিশেষ করে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের গণফোরামসহ স্বাধীনতার পক্ষের অনেক রাজনৈতিক দলই সব রাখঢাক ঝেড়ে ফেলে সরাসরি বিএনপি জোটে এসে যোগ দিতে প্রস্তুত বলেও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে। এমনকি দেশের সবচেয়ে বড় বাম সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) পর্যন্তও বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী সর্বাত্দক আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে একটি মাত্র বাধা হলো জামায়াত-শিবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, এই জামায়াতে ইসলামীর কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কূটনৈতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রেও বিএনপিকে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বিএনপির জোরালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আজকের এই দুর্দিনে সেটিকে ক্যাশ করতে পারছে না বিএনপি। বিশেষ করে পাশর্্ববর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আজ যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে তার অন্যতম প্রধান কারণও এই জামায়াতে ইসলামী। কারণ ভারত জামায়াতে ইসলামীকে শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীই নয়, বরং আপদমস্তক একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন হিসেবেই মনে করে। তারপরও ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর ভারত সফরকালে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, দেশটির জাতীয় প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে বিজেপি প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করে তার এবং তার দলের সঙ্গে আবারও কাজ করার ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। সফরের শেষ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ৩ নভেম্বর ঢাকায় ফেরার প্রাক্কালে বেগম জিয়া তাকে বাংলাদেশ সফরের জন্য তার দল ও জনগণের পক্ষ থেকে উষ্ণ আমন্ত্রণও জানিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে হরতালের অজুহাতে তিনি ঢাকায় থেকেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে যাননি। আর সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে খুশি করার জন্যই এটি করেছেন বলে জানা যায়। এসব মিলে জঙ্গিবাদী এ সংগঠনটির কারণেই ভারতের সঙ্গে বিএনপি প্রধানসহ তার দলের সম্পর্কটি আরও নেতিবাচক ও তিক্ত হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কূটনৈতিক স্তরের কর্মকর্তা বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে যখন ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্কটিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম তখনই জামায়াত-শিবিরের কারণে তা ভেস্তে গেছে। অথচ জামায়াতের ভোট এখন সারা দেশে তিন থেকে সর্বোচ্চ চার শতাংশের বেশি হবে বলে আমরা মনে করি না। তা ছাড়া জামায়াতের নিজস্ব কৌশল হলো_ তারা তাদের দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবিতে কিংবা তাদের সংগঠনের নিজস্ব কর্মসূচিগুলোতে যেভাবে সর্বশক্তি দিয়ে অংশ নেয়; তার বিপরীতে ১৮ দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচিতে তার দশ ভাগের একভাগও শক্তি নিয়েও অংশ নেয় না। 'মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক' শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল কখনো স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতের 'বি-টিম' হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আজ সেটিই হয়েছে। আর এ জন্যই আজ বিএনপির আন্দোলন কিছুতেই সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.