আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত চীন মিয়ানমার নিয়ে বাণিজ্যজোটের পরিকø

রাজনৈতিক অর্থনীতির নতুন মেরুকরণ ঘটতে যাচ্ছে এ অঞ্চলে। এশিয়ার দুই শক্তি ভারত এবং চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করতে যাচ্ছে একটি অর্থনৈতিক জোট, যার নাম হতে পারে বিআইসিএম কো-অপারেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ফোরাম। এটি হলে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের আদলে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ সম্পর্ক (করিডর) স্থাপনের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হবে, যার প্রধান লক্ষ্য থাকবে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ। সুফল মিললে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একযোগেকাজ করতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় এই চার দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি সহায়তা ফোরাম গঠনের ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও ভারত। এ প্রসঙ্গে দেশ দুটির স্টাডি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবপত্র তৈরি করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও জোট গঠনে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জোট গঠনে আগ্রহী ভারত, চীন ও মিয়ানমার এই তিনটি দেশই তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে কারণে বর্তমান সরকারের আমলে জোট গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জোটের প্রস্তাবক দুই দেশ চীন ও ভারত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। এর বাইরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকেও ভাবা হচ্ছে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসেবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ভারত ও চীনের পর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে গুরুত্ব দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। এ ধরনের সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থার পাশাপাশি এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাগুলোরও উৎসাহ রয়েছে। বিআইসিএম ফোরাম সংক্রান্ত এক ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। সামগ্রিক জিডিপির পরিমাণ প্রায় ৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার (২০১১)। চারটি দেশের করিডরের পরিমাণ প্রায় এক দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। সে কারণে সংশ্লিষ্ট চার দেশের মধ্যে একটি জোট হলে সেটি দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে, যার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নব্বই দশকে বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয় যেটি 'বিআইসিএম উদ্যোগ' বলে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত এক বেসরকারি সম্মেলনে এই ধরনের আঞ্চলিক জোট গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হওয়ায় এটিকে 'কুনমিং উদ্যোগ' বলেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বেসরকারি ওই উদ্যোগটিই এখন বিআইসিএম কো-অপারেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ফোরামের দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, বিআইসিএম কো-অপারেশন গঠনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মতামত চেয়ে সম্প্রতি সরকারের কাছে একটি ধারণাপত্র পাঠিয়েছে চীন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। এর আগে গতবছর চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেসিয়াং ভারত সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর গত মাসে বাংলাদেশের মতামত জানতে চিঠি পাঠায় চীন সরকার। জানা গেছে, আগামী মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সফর করবেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে একটি কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট গঠনের বিষয়ে দেশটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর সংস্থা 'বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন' (বিমসটেক) সম্মেলনে যোগ দিতে মিয়ানমার সফরের সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এদিকে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিটোতে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের বৈঠকে চার দেশীয় এই আঞ্চলিক সহায়তা সম্পর্কের (বিআইসিএম কো-অপারেশন) সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ওই বৈঠকে অংশ নেন।

দেশে ফিরে মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এজেন্ডায় না থাকলেও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারকে (বিআইসিএম) নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্ক শুরু হতে পারে। সচিব আরও জানান, নতুন সরকারের প্রতি মিয়ানমারকে অনেক বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে ভারত ও চীনের সঙ্গেও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.