আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আখেরি মোনাজাত আজ

রাজধানীর উপকণ্ঠে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ অনুষ্ঠিত হবে ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু করার কথা রয়েছে। ইজতেমা আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, দিলি্লর শীর্ষ মুরবি্ব মাওলানা যোবায়রুল হাসান এবার আখেরি মোনাজাত পরিচালনার সম্ভাবনা রয়েছে। আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রপতির অবস্থানের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের কাছে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে মোনাজাতে শরিক হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাটা সু কোম্পানি অথবা সেনা কল্যাণ কমপ্লেঙ্রে ছাদে বসে মোনাজাতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া এটলাস কোম্পানির ছাদে বিশেষ জায়গায় বসে মোনাজাতে শরিক হবেন। আখেরি মোনাজাত চলাকালে ইজতেমা মাঠের চারপাশের আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেবে। এ ছাড়া পূর্বাহ্ন থেকে মাঠের চারপাশে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আজ টঙ্গীর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা করা হয়েছে।

গতকাল শীর্ষ মুরবি্বদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসলি্লদের জিকির-আসগারের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। ইজতেমায় আগত প্রতিটি খিত্তার জিম্মাদারের মাধ্যমে মুসলি্লদের তাবলিগের মূল বিষয়বস্তু এর সুফল ও ধর্মীয় আদেশের ব্যাপারে তালিম দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার বাদ আসর ইজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চে শতাধিক জুটির যৌতুকবিহীন বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাবলিগের ৬ উসূলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর গতকাল বাদ ফজর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন পাকিস্তানের শীর্ষ মুরবি্ব মাওলানা মো. আবদুল ওহাব।

বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা জামশেদ, বাদ আসর বয়ান করেন দিলি্লর মাওলানা যোবায়েরুল হাসান এবং বাদ মাগরিব বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমেদ লাট। মুরবি্বদের বয়ান চলাকালে পুরো ইজতেমা ময়দান জুড়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। শত কষ্ট উপেক্ষা করেও মুসলি্লদেরকে মনোযোগ সহকারে মুরবি্বদের মূল্যবান বয়ান শুনতে দেখা গেছে। গতকাল ইজতেমা ময়দানে একজন অজ্ঞাতনামা ও বিদেশি নাগরিকসহ ৪ জন মুসলি্লর মৃত্যু হয়েছে।

বয়ানে যা বলা হয় : গতকাল বাদ জোহর দিলি্লর মাওলানা জামশেদ আমল, জান্নাত, জাহান্নাম ও দাওয়াতে মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন।

তিনি বলেন, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। মহান আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া দুনিয়ার জিন্দিগির কোনো মূল্য নেই। দুনিয়ার কামাই-রোজগার দুনিয়াতেই কাজে লাগবে। যখন মায়ের পেটে ছিলাম তখন পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে পারিনি। আবার পৃথিবী থেকে বুঝতে পারছি না যে আখেরাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে।

তিনি আরও বলেন, জান্নাত হলো চিরস্থায়ী শান্তির জায়গা। জান্নাতে একবার কেউ গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। জান্নাতের জমিনের ঘাস হবে সুগন্ধি জাফরানের মতো। জান্নাতের ইটের জোরা (গাঁথুনি) হবে রুপার তৈরি। আর প্লাস্টার হবে হিরা-মুক্তা-জহরত দিয়ে।

দুনিয়াতে যার যে পরিমাণ গুনাহ হবে পরকালে তাকে সে পরিমাণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাবলিগ জামাতের মুরবি্ব মাওলানা জামশেদ বলেন, ইমান-আমল-আখলাক ভালো থাকলে এবং দুনিয়ার সম্পদ আল্লাহর পথে কোরবানি করলে আখেরাতে কামিয়াব হওয়া যায়। জান-মাল আল্লাহর পথে খরচ করলে আল্লাহ আরও বাড়িয়ে দেন। মাওলানা জামশেদ আরও বলেন, দুরিয়ার মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান পাঠানো হয়েছিল। দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ইমান মজবুত হয়।

ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবী হয়।

বিদেশি মেহমান : ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরবি্ব ও বিদেশি মেহমানদের তাঁবুর জিম্মাদার প্রকৌশলী মো. মুহিবুল্লাহ জানান, বিশ্বের অর্ধ শতাধিক দেশের প্রায় ২০-২৫ হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করেছেন। এখনো যারা বাকি আছেন তারা আখেরি মোনাজাতের আগে ময়দানে এসে পেঁৗছবেন। এবার ভারত, কাতার, দুবাই, ইরান, ব্রুনাই, নিউজিল্যান্ড, কলম্বিয়া, মালয়, মরিসাস, হল্যান্ড, ফিজি, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফান্স, জার্মান, কেনিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তুর্কি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপিন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, ফৌজি, মালয়েশিয়া, মালে, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, চীন, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, চিলি, কম্বোডিয়া, ভেনিজুয়েলা, তিউনেশিয়া, ইতালি, সুইডেন, সৌদি আরব, জর্ডান, ওমান, আলজেরিয়া, সোমালিয়া, লেবানন, ইথিওপিয়া, মৌরিতানিয়া, জিবুতি, সুদান, মরক্কো, ইয়েমেন, ডেনমার্ক, সিরিয়া, চাদ, মিয়ানমার, ইরাক, মিসর, নরওয়ে, মাদাগাস্কার, নাইজেরিয়া, পানামা, সেনেগাল, তানজানিয়া, ত্রিনিদাদ, ক্যামেরুন, কোরিয়া, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া এসব দেশের মুসলি্লরা ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।

ইজতেমায় যাতায়াত : সরকারিভাবে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলি্লদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশেষ ট্রেন, বাস, লঞ্চ, স্টিমারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মূল ইজতেমা ময়দানের সঙ্গে তুরাগ নদের পশ্চিম তীরে যোগাযোগের জন্য ৮টি পন্টুন ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করেছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের দিনও সেনাবাহিনী এবং সিটি করপোরেশন ট্যাংক লরির মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। এ ব্যবস্থা থাকবে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের শেষ পর্যন্ত।

এ ছাড়া আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠের চারপাশের সড়ক ও মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

 

 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.