আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বস্তায় বস্তায় টাকা উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে আলোচিত সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত হাবিব ওরফে সোহেল (৩৭) এবং তাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ইদ্রিস ওরফে মোতাহার নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল বিকালে রাজধানীর শ্যামপুর বালুর মাঠসংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ব্যাংকের লুট হওয়া ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ১৬ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বক্তব্য দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান।

উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ও র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই পাঁচটি বস্তায় ভরে লুণ্ঠিত টাকা এবং গ্রেফতার দুজনকে সেখানে হাজির করা হয়। মোখলেছুর রহমান বলেন, ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনাটি এমন একটি অপরাধ যা গোটা দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ব্যাংকে চুরির খবর পাওয়ার পর র‌্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করে, যার ফলে লুণ্ঠিত টাকাসহ তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। পরে কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেকের কাছে উদ্ধারকৃত টাকাসহ আসামিদের হস্তান্তর করে র‌্যাব।

ওসি মালেক সোনালী ব্যাংকের ঢাকা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সরদার নুরুল আমীনকে ১৬ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ টাকা বুঝিয়ে দেন।

যেভাবে ডাকাতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

দুবাইফেরত গ্রেফতার হাবিব তার মামাশ্বশুর সিরাজ ফোরম্যানকে ৫ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। তবে সিরাজ ওই টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হাবিবকে ব্যাংক ডাকাতির পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী হাবিব নাম পরিবর্তন করে দুই বছর আগে সোহেল নামে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার কাছে একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেন। হাবিব কাঠের কাজ করেন বলে এলাকায় প্রচার করেন।

বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রায় এক-দেড় মাস পর হাবিব ওরফে সোহেল সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। যানবাহনের শব্দের সুবিধা নিয়ে তিনি খোঁড়াখুঁড়ির উপযুক্ত সময় হিসেবে দিনের বেলাকেই বেছে নেন। তবে বৃষ্টির সময়, রাতে এবং ঢাকায় অবস্থিত ওই টিনশেড বাড়ির মালিক কিশোরগঞ্জে এলে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ বন্ধ থাকত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন হাবিব। ব্যাংকের পাশে অবস্থিত একটি টিনশেড ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ২৫ ফুট লম্বা এবং সাড়ে ৩ ফুট চওড়া একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়।

সুড়ঙ্গটি রাতের আঁধারে তৈরি এবং সেখানে আলোরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

সেখান দিয়ে একজন মানুষ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। সুড়ঙ্গটি যাতে ভেঙে না পড়ে সে জন্য কাঠ ও বাঁশের সাহায্যে প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা ছিল। দীর্ঘ দেড় বছর পর অর্থাৎ গত কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ পরে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ হয়। পরে ২৩ জানুয়ারি হাবিব সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংক থেকে টাকা লুটের। পর দিন ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে হাবিব সুড়ঙ্গের সাহায্যে ব্যাংকের ভল্টরুমে প্রবেশ করেন।

ভল্টের টেবিলে খোলা অবস্থায় থাকা প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাঁচটি বস্তায় ভরে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে লুট করে নিয়ে যান। পরে হাবিব প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা খরচ করে আটরশির একটি উরসে ৩০০ বস্তা চাল কিনে দেন। ওই চালের বস্তার সঙ্গেই টাকার বস্তা ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

হাবিব দাবি করেন, টাকা বহনকারী পিকআপের ড্রাইভার বস্তা খোলা থাকায় সেখান থেকে কিছু টাকা সরিয়ে ফেলেছেন।

কে এই হাবিব : হাবিব ওরফে সোহেলের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়।

তার বাবার নাম সিরাজ উদ্দিন। হাবিব পলি ক্যাবলস কোম্পানিতে দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি কিশোরগঞ্জের সাদিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্রমিক পেশায় দুবাই চলে যান। ২০১১ সালে দুবাই থেকে উপার্জিত ৭ লাখ টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।

তবে পটুয়াখালীতে তার বাড়িটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় হাবিব কিশোরগঞ্জ সদরে নগুয়া নামক স্থানে তার স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

 

 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।