আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারিদিকে মৃত্যুর গন্ধ

হয়ত এই লেখাটা কখনোই লেখা হয়ে উঠতো না। ১৫ ডিসেম্বর বাসার ভেতর কোন ভাবে পড়ে যেয়ে মাথায় আঘাত পাই। মাথা ফেটে যায়, অচেতন হয়ে পড়ি। বোধশক্তি যখন কিছুটা ফেরত পাই তখন বুঝতে পারি আমি হয়ত কোন হাসপাতালের বেড এ। যদিও আমি তখনো বুঝতে পারিনি আমার কি হয়েছে।

তবে ডিউটি ডাক্তার যখন আমাকে চেকাপ করতে আসেন তাকে তারিখ জিজ্ঞেস করাতে তিনি বলেন ১৭ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর ছিল আমার ২৫ তম জন্মদিন। কখনোই ভাবিনি এইদিন টি জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ১৪ ডিসেম্বর রাতের কিছু ঘটনা আমার মনে আছে। তারপর ১৭ তারিখ ডিউটি ডাক্তার এর সাথে কথোপকথন।

আজ পর্যন্ত আমি এখনও ঘোরের মধ্যেই আছি। মাথা ব্যাথা, চোখে ঝা্পসা দেখা, এগুলো তো আছেই। ডাক্তার নাকি বলেছেন, কম্পিউটার নিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করার কারনে হয়ত আমার এ সমস্যা হয়েছে। এটা আমার এক বন্ধু যখন বাসায় আসে তখন সে আমাকে এসব জানায়। তারপর থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ সব আমার কাছে থেকে দূরে সড়িয়ে রাখা হয়।

মোটামোটি দৈনিক ১৬-১৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটিয়েছি মাথা ব্যাথায় অতিষ্ট হয়ে। প্রতি রাতেই দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যেত। প্রতিবার ই কোন না কোন দূর্ঘটনা/মারামারি দেখতাম। এতে আরো বেশি মাথা ব্যাথা করত। ৩/৪ বার বিশ্বজিতের যায়গায় নিজেকে দেখতে পেয়েছি স্বপ্নে।

আরো দেখেছি রোড এক্সিড্যান্ট এ আমি নিহত। গত ১৫ দিনে হাস্পাতাল থেকে ঘরে ফেড়ার পর থেকে আর ঘর থেকে বের হয়নি। পেপার খুল্লেই দেখতাম খুন, ছিন্তাই, রাহাজানি। এজন্য পেপার দেখাও আমার জন্য এক প্রকার নিষিদ্ধ হয়। ২/৩ দিন আগে দেখলাম ১৬ তারিখ ভারতে একটি ধর্ষনের ঘটনায় ম্যাডিকেল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

এবং অতি দ্রুত দোশীদের গ্রেপ্তার ও করা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া (প্রিন্ট, অনলাইন,টেলিভিষন) খুব ভালো ভাবেই কভার করেছে স্টোরি টা। ভালো লাগলো তাদের আইন শৃংলার এ নমুনা দেখে। যে চিন্তা টা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তা হল আমার সোনার বাংলাদেশেও তো এরকম একটি অপরাধ ঘটেছে। তার কোন কভারেজ তো আমি দেখিনি মিডিয়াতে! আজকে (৩১ ডিসেম্বর) দেখলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিষন হাইলাইট প্রচার করছে, ভারতে গন ধর্ষনে নিহত মেয়েটির সম্মানার্থে ভারতের নামী নামী হোটেল গুলো নতুন বছর উদযাপন থেকে বিরত থাকছে।

আর আমার দেশের টেলিভিষন গুলো কক্সবাজাড়ে কনসার্টের আয়োজন করছে। আমি যখন হাস্পাতালে ছিলাম তখন পাশের বেড এর এক রোগী মারা যায়। তিনি যখন শেষ নিঃশাষ ত্যাগ করেন তখন আমি জেগে ছিলাম। সেই রোগীর কোন এক আত্মীয় আমার বেড এর পর্দা টেনে দেন যেন আমি না দেখি। আমি দেখেছি মৃত্যুকে, খুব কাছ থেকে।

সেজন্যই হয়ত বাসায় ফেরার পর প্রতিনিয়ত নিজেকে দূর্ঘটনায় কবলিত হিসেবেই স্বপ্নে দেখেছি। "যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো" এটি হল বহুল প্রচারিত ও পঠিত দৈনিক পত্রিকার মোটো। আজকে সেই পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রচার হয়েছে সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা হত্যার দায়ে পাচ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনি অন্য দেশের নাগরিক ছিলেন বলেই হয়তো দ্রুত বিচার কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এরকম হাজারো অপরাধের বিচার কবে করবেন আমাদের দেশের বিচারপতিরা? যদি এই ধরনের অপরাধের বিচার না হয় তবে হয়তো নাগরিকত্ম পরিবর্তন করে এ দেশে বসবাস করতে হবে।

আজ শুনলাম টাঙ্গাইলেও পনেরবছরের এক তরুনী গনধর্ষনের শিকার হয়েছে। আদোও কি এর বিচার করবে আমাদের দেশের আইন? লেখাটা গুছিয়ে লেখতে পারলাম না। ছাড়া ছাড়া হয়ে গেল। মাথা ব্যাথা করছে অনেক। চোখ ও ব্যাথা করছে।

আমাকে চিন্তা করতে মানা করা হয়েছে। ডাক্তার, পরিবার, বন্ধুমহল সবাই এই কথাই বলে। কিন্তু আমি এগুলো লিখেই আমার ক্ষোভটুকু প্রকাশ করছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।