আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদ্মায় অর্থ দেবে চীন

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করবে চীন। এ ব্যাপারে চীনের আগ্রহের কথা যোগাযোগমন্ত্রী ও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে জানিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন। সরকারের আগের মেয়াদেও চীন একাধিক বৈঠক করে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছিল। কিন্তু সরকার তখন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এবার দায়িত্বভার নিয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতু বিভাগ প্রাথমিক কাজগুলো শুরু করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ হচ্ছে অ্যাপ্রোচ (সংযোগ) সড়ক। আগামী জুনে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও চলছে। জানা গেছে, ২৮ জানুয়ারি সেতু বিভাগের একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এতে ১. সেতুর নির্মাণকাজ, ২. নদীশাসন এবং ৩. তত্ত্বাবধানকারী পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) নিয়োগের মতো তিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি বিস্তারিত জানানো হয়েছে। চিঠিতে সেতু বিভাগ এ কাজের ঠিকাদারি পক্ষগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রায় (ফরেন কারেন্সি) অর্থায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, মূল সেতুর নির্মাণকাজের জন্য (কনস্ট্রাকশন) তিনটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সি অ্যান্ড টি করপোরেশন, চীনের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ কারবারি প্রতিষ্ঠান ডায়েলিম-বাম-ভিসিআই। জমা পড়া এ প্রস্তাবগুলো আগামী মে-র মধ্যে পর্যালোচনা শেষ করা হবে।

নদীশাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ভারতের পাঁচটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের ২০ ফেব্রুয়ারি সময়সীমা দিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি ফার্মকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রেখে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) জারি করে ১৮ মার্চের মধ্যে বিস্তারিত আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান কনসালট্যান্টের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত থাকায় এর পরই নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, নানা ঘটনাপ্রবাহে আগে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন বছর পিছিয়ে যাওয়ায় সেতু নির্মাণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আগে এ নির্মাণ খরচ ছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। তখন ২০১৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এখন ২০১৮ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণ ব্যয় বাড়বে। নকশা ও অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত হলেই এখন কত ব্যয় হবে তা জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সেতু বিভাগের বর্তমান হিসাব অনুসারে, পূর্বনির্ধারিত ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এর ১৫ শতাংশ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেই অগ্রিম হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। চিঠিতে সেতু বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে, সরকারের অর্থায়নে সেতু বাস্তবায়ন হলে বিদেশি মুদ্রায় বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া কী হবে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের জন্য বলেছে সেতু বিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এ প্রকল্পে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সরকার আগেই নিয়েছে।

এর বাইরে সভরেইন বন্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে অক্টোবর নাগাদ পূর্বপরিকল্পিত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষেত্রে ১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি অংশও এ প্রকল্পে ব্যয় করার প্রাথমিক পরিকল্পনা আছে সরকারের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতিও জানিয়েছে। এ প্রকল্পের দুটি সংযোগ সড়ক বা অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ ও অন্যান্য কাজে এরই মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে যে ছয়টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে সবার আগে স্থান দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে।

গত মেয়াদে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েনে পড়ে এ সেতু বাস্তবায়ন নিয়ে একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রথমে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত ঋণ চুক্তি স্থগিত করেছিল। একই পথে হেঁটেছিল অন্যান্য দাতা সংস্থা জাইকা, এডিবিসহ অন্যরা। বরাবরই দুর্নীতির এ অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করা সরকার শেষে এসে নিজেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এবং কেউ এগিয়ে না এলে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.