আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিডনিতে পাথর এর চিকিৎসা ও সমাধান

"" যে দুর্বিনীত, সে ভালো কথা বলতে পারে না" কনফুসিয়াস ।
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/171277/small/?token_id=a1d89a9876e1a24f35d650d03095b7f5

মূত্রতন্ত্রে যত রোগ আছে এর মধ্যে পাথরজনিত রোগ বেশি। প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন কিডনির পাথরে ভোগেন। পাথর আকারে খুদে শস্যদানা থেকে শুরু করে টেনিস বল আকৃতির হতে পারে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট পাথরগুলো প্রস াবের সঙ্গে বের হয়ে আসে।

যাদের পাথর উপসর্গ তৈরি করে তাদের চিকিৎসা নিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার (সার্জারি) প্রয়োজন হয় না। পাথর হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কাদের বেশি হয় :
নারীর তুলনায় পুরুষের পাথর হওয়ার হার বেশি। ৪০ বছরের পর থেকে পুরুষের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, ৭০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।

নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়স থেকে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তবে যে কোনো সময়েই যে কারও কিডনি বা মূত্রতন্ত্রে পাথর হতে পারে। যাদের একাধিকবার পাথর হয়েছে, তাদের বারবার হতে পারে। যাদের প্রস্রাবে প্রদাহ বেশি হয়, টিউবুলার এসিডোসিস রয়েছে, তাদেরও পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। টিউবুলার এসিডোসিস একটি বংশগত রোগ।

এ রোগীর ৭০ শতাংশের কিডনিতে পাথর হয়। লক্ষণ কিডনিও মূত্রতন্ত্রে পাথর হলে অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। তবে পাথর আকারে বড় হলে লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- কোমরের পেছন থেকে ব্যথা শুরু হয়ে কোমরের পাশে, কুঁচকি, তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথা জননেন্দ্রিয়েও হতে পারে।

থেকে থেকে ব্যথা তীব্র মাত্রায় আসে। ব্যথা এতই তীব্র হয় যে শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করলেও কোনো উন্নতি হয় না। বমি বমি ভাব থাকে, বমিও হতে পারে। প্রস্রাবের রং লাল হতে পারে বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশন থাকলে জ্বর ও কাঁপুনি হয়।

বৃক্কনালি দিয়ে পাথর মূত্রপথের কাছাকাছি চলে এলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। পাথর মূত্রতন্ত্রের নালি বন্ধ করে দিয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রোগ নির্ণয় প্রথমত, রোগের ইতিহাস জানতে হবে। আগে কখনও কিডনিতে বা মূত্রতন্ত্রে পাথর ধরা পড়েছিল কি না, বর্তমানে ব্যথা খাকলে, এর প্রকৃতি ইত্যাদি জানতে হবে। দ্বিতীয়ত, কিছু পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।

এর মধ্যে রয়েছে এক্স-রে ও আলট্রাসাউন্ড। অনেক ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর নীরব থাকে। উপসর্গবিহীন অবস্থায় পাথর নির্ণয় করতে হলে আলট্রাসনোগ্রাম জরুরি। তৃতীয়ত, প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা জানা দরকার। চিকিৎসার জন্য পাথর কোথায় অবস্থান করছে, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করার জন্য আইভিইউ এক্স-রে বা হেলিকেল সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে।

চতুর্থত ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড, সিস্টিন ইত্যাদির পরিমাণ দেখা হয়। এ পরীক্ষা মূলত পাথর প্রতিরোধের জন্য দরকার।
চিকিৎসা :
বেশিরভাগ পাথরই বড় ধরনের কোনো অস্ত্রোপচার ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। বৃক্কনালিতে পাথরের আকার পাঁচ মিমি বা তার কম হয়, শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে তা প্রস্রাবের সঙ্গে আপনা-আপনি বেরিয়ে যেতে পারে। তবে ১০ মিমির বেশি হলে, তা বেরিয়ে যেতে পারে না।

বেশি পরিমাণে পানি পান করা দরকার। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর এক গ্লাস পানি পান করা যেতে পারে। জগিং করা প্রয়োজন এর সঙ্গে ট্যামসলোসিন এবং ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার-জাতীয় ওষুধ, নিফিডিপিন যোগ করলে বৃক্কনালি স্ফীত হয় এবং পাথর প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।
শল্যচিকিৎসা :
পাথরের আকার যদি এত বড় হয় যে নিজে থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই তাহলে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন। যদি বারবার প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়, পাথরের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দেয়, পাথরের আকার বেড়েই চলে, পাথরের কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে শল্যচিকিৎসা লাগে।

প্রধানত চার ধরনের শল্যচিকিৎসা রয়েছে। এগুলো হল- এক্সট্রা করপোরিয়াল শকওয়েভ লিথোট্রিপসি (ইএসডব্লিউএল), পিসিএনএল, ইউরেটেরোস্কোপিক পদ্ধতি ও ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি।
ইএসডব্লিউএল :
এ ব্যবস্থায় শক্তিশালী তরঙ্গ পাথরে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে দেয়। পরে টুকরো পাথর প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। বেশি বড় পাথর হলে এবং সংখ্যায় বেশি হলে এ পদ্ধতিতে তা বের করা যায় না।

বৃক্কনালি ও মূত্রথলির পাথর এ ব্যবস্থায় বের করে আনা সম্ভব নয়। এ পদ্ধতির সুবিধা হল মাত্র ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে। রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না। চিকিৎসার দু-তিন ঘণ্টা পর রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পিসিএনএল :
যদি পাথরের আকার বড় হয়, তখন ভাইব্রেশন দিয়ে কিডনির পাথর গুঁড়া করা হয়, যা প্রস্রাবের সঙ্গে নেফ্রোসটমি টিউব দিয়ে বেরিয়ে আসে।

পরে প্রয়োজবোধে ইএসডব্লিউএল করা হয়।
ইউরেটেরোস্কোপি : এ ব্যবস্থায় ছোট ফাইবার স্কোপ মূত্রপথ, প্রস্রাবের থলি হয়ে বৃক্কনালি থেকে পাথর গুঁড়া করে অথবা বাস্কেট দিয়ে ধরে পাথর বের করে নিয়ে আসা হয়।
ল্যাপারোস্কোপিক :
এখন এ পদ্ধিতিতে বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। ছোট ছোট দু-তিনটি ছিদ্র করে ক্যামেরার মাধ্যমে সহজেই পাথর বের করা যায়। এ ব্যবস্থায় জটিলতা কম।

প্রতিরোধমূলক খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন আপনাকে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত রাখতে পারে। পাথরের কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস, রক্ত ও ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাব পরীক্ষা করে পাথর সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান শনাক্ত করা জরুরি। নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করা যায়- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। প্রতিদিন গড়ে তিন-চার লিটার পানি পান করা উচিত। যারা বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন, যেখানে প্রচণ্ড ঘাম হয়, যেমন গ্লাস ফ্যাক্টরি, স্টিল মিল তাদের বেশি পানি পান করতে হবে।


মনে রাখতে হবে, প্রস্রাবের রং যেন পানির মতো হয়। বলা হতো, ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার খেলে ক্যালসিয়াম পাথর বেশি হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, খাবারের সঙ্গে ক্যালসিয়াম খাদ্যনালিতে পাথর সৃষ্টিকারী অক্সালেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পায়খানার সঙ্গে বের করে দেয়। কাজেই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার, যেমন- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া যাবে। তবে যাদের একটি কিডনিতে একবার পাথর হয়েছে, তাদের অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ও ভিটামিন ডি খাওয়া একেবারেই অনুচিত।

যাদের কিডনিতে একবার পাথর ধরা পড়েছে, তাদের ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মাংস, মাছ ও পোলট্রি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। খবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। যাদের হাইপারপ্যারাথাইরয়েড রোগ রয়েছে, তাদের অতি শিগগির তা অস্ত্রোপচার করা উচিত। বংশে কিডনিতে পাথর রোগের ইতিহাস অথবা কারও একাধিক পাথর থাকলে তাদের আবার পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে পাথর সৃষ্টি সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব। কারও কারও ক্ষেত্রে পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হতে পারে।

সূত্র : দৈনিক যুগান্তর।

 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।