আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি নিয়ে শঙ্কা উৎকণ্ঠা ó

মধ্যপ্রাচ্যের জনশক্তি বাজার নিয়ে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে সরকার। ভিসা জটিলতা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নতুন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক লক্ষ্যমাত্রার অগ্রাধিকারে আছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সৌদি আরবকে নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য মার্চে প্রতিবেশী মিয়ানমারের পর সৌদি আরবই হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় বিদেশ সফর। সৌদি আরবে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়ে যাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। মুসলিম-অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহদের সঙ্গে একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা এরশাদকে কাজে লাগানোর জন্যই বিশেষ দূত নিয়োগ করা। এরশাদ বলেছেন, অফিস পেলেই কাজ শুরু করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার অফিস খোঁজা শুরুও করেছে। আরব আমিরাত, কুয়েতের বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার চেষ্টার পাশাপাশি অন্য সব মুসলিম দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও ঝালাই করে নেওয়া হবে দ্রুততার সঙ্গে। সরকারের সংশ্লিষ্ট নানা মহলে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদারকিতে পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস করবেন। অবশ্য দুই বছরের কাছাকাছি সময় ধরে অচলাবস্থা নিরসনে মিশন ও মন্ত্রণালয়গুলোর সব প্রস্তুতি আছে। এখন প্রয়োজন প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক উদ্যোগ। এর আগে দরকার বাংলাদেশে জনশক্তি প্রেরণ কাঠামোর সংস্কার, যা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। তবে দেশের সর্বশেষ চূড়ান্ত জনশক্তি নীতিমালা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন আছে বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কূটনীতিকদের। 'বাহুল্য ও যথার্থ'তা দোষে দুষ্ট নীতিমালার সংস্কারের লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রদূত ও সিনিয়র কূটনীতিকদের অজ্ঞাত রেখে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা নিয়ে আশ্চর্য হলেও ব্যক্তি-উদ্যোগেই পররাষ্ট্র ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা পুরো নীতিমালার বিষয়ে নিজেদের 'লাইন টু লাইন' পরামর্শ জানাচ্ছেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন করে সফর শুরু করবেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশেষ দূত এরশাদের দাফতরিক বিষয়গুলোর দেখভাল করবেন। সমন্বয়ের কাজ করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী না থাকাকে দুর্বলতা বলছেন পররাষ্ট্র খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ডাকসাইটে একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষত সারানোর বিষয়টি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার (প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ) মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত। এখানে ২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান ভিসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভিসা। শ্রমিক, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসার পর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ট্রানজিট ভিসাও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। ট্রানজিট ভিসায় গিয়ে আমিরাতে অবস্থান করা বন্ধ করতেই এই কঠোরতা। নারীশ্রমিকদের ভিসার পাশাপাশি শুধু ঢাকার আমিরাত দূতাবাসের সম্মতিতে স্বল্প-সংখ্যক দেওয়া হচ্ছে ট্রানজিট ভিসা। অবশ্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিএনপি সরকারের সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জটিলতার কারণে দুবাইয়ের ট্রানজিট ভিসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, আমিরাতের ভিসা বন্ধ করা হয়নি, স্থগিত করা হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানিকারক ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ওয়ার্ল্ড এঙ্পো ২০২০-এ ভোটদানের ক্ষেত্রে সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দুর্বলতার কারণে এটি হয়েছে। কূটনীতিকরা বলছেন, মূল কারণ খুন, চুরি-ডাকাতি, চোরাচালান, মারামারি, জুয়া, মানব পাচার, দেহব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধে ব্যাপক হারে বাংলাদেশিদের জড়িয়ে পড়া। তবে আমিরাতে প্রস্তাবিত নিরাপত্তাবিষয়ক চুক্তির মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে বলে আশা করছেন তারা। অবশ্য শুধু আরব আমিরাত নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশেই নতুন শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুয়েতের মতো বাজার সাত বছর বন্ধ। ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাতারের বাজারে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা। সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশেও সীমিত হয়েছে নতুনদের যাওয়া। যে দেশগুলোতে যাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে নেই কাজের সুযোগ। আর মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করাদের একটি বড় অংশও নানা সমস্যায় পড়ছে। নতুন ভিসা বন্ধ থাকায় তারা আগের কাজ ছেড়ে নতুন কাজে যোগ দিতে পারছেন না। আবার কারও আগের কাজ শেষ হলে নতুন ভালো কাজের অফার থাকলেও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফিরে আসতে হচ্ছে দেশে। প্রবাসে অবস্থান করা ভুক্তভোগী বাংলাদেশি ও জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মতে, সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারের যে দূরদৃষ্টি প্রয়োজন ছিল, তা সঠিক সময়ে নেওয়া হয়নি। যে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ দরকার ছিল, তাও নেওয়া হয়নি যথাসময়ে। এ কারণেই বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে। গবেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাতময় রাজনীতির নানা বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় সরকার জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কাজ করেনি। ফলে সমস্যা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে বড় এই বাজারগুলোকে। সমস্যা জটিল হচ্ছে ক্রমেই। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রের খবর, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দ্রুততার সঙ্গে সব চেষ্টার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করবেন ক্ষমতায় থাকাকালে মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক বাদশাহ ও যুবরাজের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বে পরিণত হওয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অফিস ও লোকবল ছাড়া কাজ শুরু সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। অফিস পাওয়ার পরই তিনি তার সব সম্পর্ক কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন। এর বাইরে কূটনৈতিক পর্যায়ের চেষ্টাগুলোকেও জোরদার করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের আগ্রহের কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করলে মার্চে সফর আয়োজনের জন্য সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে সময় নির্ধারণ করে। সফরের আগের প্রস্তুতি হিসেবে আলোচ্যসূচি নির্ধারণে কাজ করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর নির্দেশনাও রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় এ সফরে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচ্যসূচির মধ্যে দেশটিতে জনশক্তি পাঠানোর বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জনশক্তিসহ বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারই হবে এবারের সফরের লক্ষ্য। চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে একটি বক্তব্যও সৌদি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত বিনা সুদে অর্থ পরিশোধের সুযোগসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটন ও যুবকল্যাণ খাতে সহযোগিতার আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সফরকালে সৌদি আরবের বিভিন্ন দায়িত্বশীলের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধি থাকবেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের বাইরে স্বাস্থ্য খাতে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, তথ্য, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় অন্যতম। কৃষি খাতে সম্ভাব্য সহযোগিতাগুলোর মধ্যে পশুখাদ্য উৎপাদনের অভিজ্ঞতা বিনিময়, বাংলাদেশে সৌদি কৃষিপণ্য, বিশেষ করে খেজুর বিপণন, ধান উৎপাদনে অংশীদারি প্রতিষ্ঠা অন্যতম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.