আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিরিয়ার সেই ছবি নিয়ে প্রথম আলোর উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশন

শুভেচ্ছা

গতকাল আলোতে একটি ভয়ংকর নিউজ ছাপা হয়। ফেসবুক ইউজের জন্য বাশার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আল কায়দা সমর্থক সিরিয়রা এক সিরীয়ান নারীকে পাথর মেরে হত্যা করা করছে। খবরটি পড়ে আরো অনেকের মত আমি রীতিমত হতভম্ব হয়ে যাই। কতটা নিষ্ঠুরতা হতে পারে! ঘটনাটি ঘটিয়েছে যারা তারা যেন একেকটি পশু!

আমি এতকাল বাশার সরকারের গনহত্যায় রীতিমত উদ্বিগ্ন ছিলাম। প্রায় ১০০০০ শিশু হত্যা সহ সিরিয়ায় এক মৃত্যু উৎসব চালাচ্ছে বাশার সরকার।

স্বভাবতই বিদ্রোহীদের প্রতি ছিল এক ধরনের সহানুভূতি। কিন্তু পাথর মেরে হত্যার নিউজটি পড়ার পরে তাদের উপর থেকে আমার সব সহানুভূতি যায় উবে। মনে হয় বিদ্রোহীরাও যেন বাশার সরকারেরই আরেক ছায়া।

কিন্তু হায়। আজ দেখলাম সেই পাথর নিক্ষেপে হত্যার খবরটি ছিল পুরো ভুয়া।

সেরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। একটি বানোয়াট ঘটনাকে প্রথম আলো নিউজ করেছে। এবং এ নিয়ে কোন ক্ষমা প্রার্থনাও করেনি কিংবা আগের সংবাদ ভুল ছিল বলে কোন ব্যখাও দেয় নি। একটু বিরক্ত হলেও অবাক হইনি মোটেও। কারন প্রথম আলোর এ অবস্থান অপ্রত্যাশিত নয়।

অন্তত আমার কাছে।

কিন্তু কেন প্রথম আলোর এ অবস্থান। এর মূল কারন আদর্শিক মতৈক্য। আলোর সাথে বাশার সরকারের আদর্শিক মিল রয়েছে। বাশার সরকার যেমন রাজনৈতিক ইসলামের চরম বিরোধী, তেমনি প্রথম আলোর অবস্থান রাজনৈতিক ইসলামের বিপরীতে।

শুধু এ কারনেই বোধ করি বাশার সরকার গনহত্যা চালানো সত্ত্বেও তার গনহত্যা আলোতে সেভাবে কভারেজ পায় না । অন্যদিকে বিদ্রোহীদের নিয়ে ভুয়া নিউজ করতে আলোর উৎসাহের কমতি নেই। এই একই প্রতিফলন দেখা যায় এরদোগানের বিরুদ্ধে কিংবা মুরসির বিরুদ্ধে প্রথম আলোর সংবাদ পরিবেশনে। আদর্শিক শত্রুর বিরুদ্ধে অতিরন্জিত সংবাদ পরিবেশনে এরা যেন এক পায়ে খাড়া। তা সেই শত্রু যতই জন সমর্থিত হোক না কেন কিংবা যতই ন্যায় পথে থাকুন না কেন?

প্রথম আলো সহ বাংলাদেশের মিডিয়া সবসময়েই একপাক্ষিক অবস্থান নিয়েছে।

যে মিডিয়া বিএনপির ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে চরম সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল, সেই একই মিডিয়া আবার ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন প্রশ্নে নমনীয়। গনহত্যা কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ এরা তখনই করে যখন সেই অন্যায়টি সংঘটিত হয় নিজেদের ঘরানার আদর্শ কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তাদের বিপরীতমূখী অবস্থানের বিরুদ্ধে যত বড় গনহত্যা কিংবা অন্যায়ই হোক না কেন - সেখানে তাদের মুখ তালাবদ্ধ।


নীচে সিরিয় ভুয়া নিউজের লিংক:

ফেসবুক ব্যবহার করায় সিরিয়ার এক তরুণীকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার ঘটনার ছবিটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শনিবার আরবি সংবাদ মাধ্যম আল রাই আল ইয়াওম ও ইরানের ফার্স সংবাদমাধ্যম এ ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশ করে।

পরে এটি ইন্টারনেটের নানান মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু সংবাদটির সাথে যে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে তার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফেসবুক ব্যবহার করার দায়ে যে নারীকে হত্যা করা হয়েছে সংযুক্ত ছবিটি ঠিক তার নয়।

সংবাদের সাথে যুক্ত ছবিটিতে দেখা যায় পাথর নিক্ষেপে এক তরুণীকে হত্যা করা হচ্ছে। আর তার শরীর থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছে।

এ সময় চারদিক ঘিরে অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে ছবিটি সত্য নয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইরানের বিখ্যাত পরিচালক ও নির্মাতা সাইরাস নওরাস্তেহ এর ‘The Stoning of Soraya M.’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য থেকে নেয়া হয়েছে ছবিটি।

চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। এতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ইরানের মোজান মারনো ও নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন শোহরেহ আগদাসলো।



চলচ্চিত্রটি ইরানের প্রত্যন্ত গ্রাম কুফায়েহ এর একটি পরিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়। তাতে পেশায় সাংবাদিক স্বামীকে স্ত্রী নির্যাতনকারী হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু স্বামী এক পর্যায়ে নিজের স্ত্রীকে গ্রামের কট্টর ‘মোল্লাদের’ কাছে নিয়ে যায় বিচারের জন্য। এরপর তাদের বিচারের রায় অনুযায়ী স্ত্রী সুরাইয়েহকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়।

চলচ্চিত্রটির একেবারে শেষের দিকে পাথর নিক্ষেপে সুরাইয়েহকে হত্যার দৃশ্যটি দেখা যায়।

দুই হাত বেঁধে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে দেয়ার পর তার ওপর পাথর ছোঁড়া হয়।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.