আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের কিছু দুর্বলতা



আসছে ২৩ ফেব্রুয়ারী দি এ টিম মাঠে ইসলামী সেমিনারের আয়োজন চলছে। ‘ইসলামী জ্ঞান চর্চা মিশন’-এর উদ্যোগে এ সেমিনারে ‘কুরআন সুন্নাহ’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোচনা রাখবেন আমন্ত্রিত বক্তাগণ। কুরআন ও সুন্নাহকে রেখে গেছেন আখেরি নবী মহাম্মদ (স) তাঁর উম্মতের জন্য। তিনি মদীনার বুকে সমাজ ও শাসন ব্যবস্থা, অর্থনীতি যুদ্ধনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ থেকে ১৪শ বছর পূর্বেকার নিয়মনীতি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, বিভিন্ন বক্তার মুখ নিসৃত ভাষণে আমরা জানতে পারব।


সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়েছেন প্রধান আলোচক হিসেবে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ্য সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। তিনি একজন লেখক। তিনি নামীয় হয়েছেন তাঁর একটি গ্রন্থের জন্য, যে গ্রন্থের নাম হাদীসের নামে জালিয়াতি। এ গ্রন্থে কোন কোন হাদীস জা’ল বা বানাওটি তা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আবার তাঁর অনেক উক্তিতে দুর্বলতাও রয়েছে বেশ কিছু।

কিন্তু তার এ গ্রন্থে কুরআন সুন্নাহ আকড়ে ধরার জন্য কোন হাদীস দেখাননি। আশা করা যায় আসছে সেমিনারে তিনি উক্ত বিষয়ের উপর জোরালো ভুমিকা রাখবেন। তিনি প্রচলিত ৫ কলেমার বিরোধিতা করে বলেছেনÑ প্রকৃত পক্ষে একমাত্র কালিমা শাহাদতই হাদীস শরীফে ঈমানের মুল বাক্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা বলার পরই আবার বলেছেন কালিমা তাইয়্যিবার দুটি অংশ পৃথক ভাবে কুরআন কারীমে ও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় বাক্যই কুরআনের অংশ এবং ঈমানের মুল সাক্ষ্যের প্রকাশ।

উভয় বাক্যকে একত্রে বলার মধ্যে কোন প্রকারের অসুবিধা নেই। ড: সাহেব প্রথমে কালিমা শাহাদতকে সমর্থন করে কার ভয়ে শেষ পর্যন্ত কালিমা তাইয়্যিবায় কোন প্রকার অসুবিধে নেই বলে বসেছেন কেন তা জিজ্ঞাস্যই বটে। ড. সাহেব রছুল সম্পর্কে তাঁর গ্রন্থের ২৮৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, রসুলুল্লাহ (স) কে হাযির নাযির হওয়ার দাবি করা সঠিক নয় যারা দাবি করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, রসুলুল্লাহ (স) সর্বত্র বিরাজিত হতে পারেননা। কিন্তু রসুলুল্লাহর ক্ষেত্রে উপরক্ত মন্তব্য সঠিক করলেও আল্লাহর সংগে তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, এই গুণটি আল্লাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ড. সাহেবের আল্লাহর ক্ষেত্রে এ তুলনা সঠিক হয় নি কারণ আল্লাহ তায়ালা আরশের উর্ধে অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব থেকে পৃথক অস্তিত্ব।


ড. সাহেব ওলীগনের সঠিক পরিচয় দিয়ে নির্ধারিত ওলী আওলিয়া হওয়ার বুঝ নিরসন করেছেন। পারলৌকিক জীবন বিষয়ক আলোচনায় তিনি সিররুল আসরার কিতাবের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে হোচট খেয়েছেন নবীগণের ব্যাপারে। যেমন নবীগণ ও ওলীগণ তাদের কবরের মধ্যে সালাত আদায় করেন, যেমন তারা তাদের বাড়িতে সালাত আদায় করেন। ড. সাহেব একথার প্রেক্ষিতে বলেছেন আমরা ইতোপুর্বে দেখেছি যে, নবীগণের ক্ষেত্রে হাদীসটি সহিহ তবে এখানে ওলীগণ শব্দটির সংযোগ বানোয়াট।
ড. সাহেবের এ কথায় বুঝা যায় যে, নবীগণ মৃত্যুর পরেও নামায পড়েন তাদের কবরে।

প্রশ্ন জাগে মৃত্যুর পরে নবীগণই বা কি করে বন্দিগী করবেন? কারণ মৃত্যুর পরে তো আলোমে বরযখে সকলেই নিদ্রায়িত থাকেন। অতএব, কিয়ামতের সিঙ্গা ফুক দেওয়ার আগে কোনো মানুষই তো জাগ্রত থাকতে পারেন না। নামাজ পড়তে হলে আযান-একামত দিতে হয়, পানি দিয়ে অজু করতে হয়।
ড. সাহেব নবী সংক্রান্ত বিষয়ে সুরা মায়েদার একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় দুবর্লতা দেখিয়েছেন। তিনি রসুলুল্লাহকে মাটির মানুষ বলার প্রশংসনীয় উক্তি রেখে বলেছেন যে, আমরা বলতে পারি কুরআন ও হাদীসের নিদের্শনা অনুসারে নি:সন্দেহে রাসুলূল্লাহ (ছ) মানুষ।

একথা বলার পর আবারও বলেছেন তবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মানব জাতির পথ প্রদর্শনের আলোক বর্তিকা হিসেবে তাকে নুর বলা যেতে পারে। পৃ: ২৬৪
ড. সাহেব যে মানুষ প্রমান করার পরও রসুলুল্লাহ (স) কে আলোক বর্তিকা বলা যেতে পারে বলে উক্তি করেছেন, তাতে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত আসেনি।
সেই যাই হোক, ড. জাহাঙ্গির ও আরোও যেসব আমন্ত্রিত বক্তা আসছেন তাঁরা কুরআন সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান যুগে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তার উপর ব্যাপক আলোচনা রেখে শ্রোতাদের সচেতন করে তোলার সহায়ক হবেন। কারণ কোরআন সুন্নাহর পরিধি ব্যাক্তি থেকে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত সু বিস্তারিত। আমাদের দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিমদেশ।

জাতির জনক শেখ মজিবর রহমান এ ঘোষনা দিয়ে কোরআন ছুন্নাহ প্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টি করে গেছেন। ইসলামী সেমিনারের আলোচকগণ সেই নিরিখে আলোচনা রেখে সেমিনারকে সাফল্য মন্ডিত করবেন। আমরা সকলেই যাতে আলোচকগণের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হতে কুরআন সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মত সঠিক বুঝ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে রছুল (ছ)-এর আদেশ মান্য করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবো বলে আশা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.