আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে বাঙালির অহঙ্কারের মিনার

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বাঙালির শোক আর অহংকারের মিনার। সব বয়স আর শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণে মুখরিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। হাতে ফাগুনের ফুল, কণ্ঠে ‌'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ......'। হৃদয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষ পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে ভাষা শহীদদের।

পথে পথে আজ শহীদের প্রতিকৃতি। রেললাইনের পাশে তিনটি ইট দাঁড় করিয়ে মিনার তৈরি করে পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে অবুঝ শিশুটিও।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়েছিল ভাষা শহীদরা। তাই এ দিনটি বাঙালির জীবনে একাধারে অহঙ্কারের, গৌরবের ও শোকের।   দিনটি সারা বিশ্বের মানুষ 'আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস' হিসেবে পালন করে।

১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পরই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় বেজে ওঠে অমর একুশের গানের করুণ সুর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি....’।

এর পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

চিফ হুইপ ও ১৪ দলের নেতাদের পর রাত ১২টা ছয় মিনিটে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া করেন। এর পর একে একে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিকেরা, তিন বাহিনীর প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও ডিনরা, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাত একটা এক মিনিটে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন ছাড়াও ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, শিশু-কিশোর সংগঠনগুলো এবং শত শত মানুষ সারিবদ্ধভাবে একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানান ভাষাশহীদদের প্রতি। ভোরের আলো ফুটতেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ফুল হাতে, কণ্ঠে একুশের গান নিয়ে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হতে থাকে শহীদ মিনার চত্ত্বরে। ভোরের আলো ফুটতেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রভাতফেরী বের করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শহীদ মিনারে আসা মানুষের পোশাকেও রয়েছে একুশের চেতনার ছাপ।

পোশাকে সাদা আর কালো রঙের ব্যবহার বেশি। তাতে খচিত বর্ণমালা, কবিতার চরণ বা গানের কলি। আবার লাল-সবুজের বাংলাদেশকে ধারণ করতে দেখা গেছে অনেককে। সকালে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনেকেই বইমেলায় যাচ্ছেন। আজ বইমেলার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে সকাল আটটায়।

ফলে সকাল থেকে মেলায় ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

আজ দেশে সাধারণ ছুটির দিন। ভাষাশহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা স্মরণ করে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.