আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"হ্যা আমি বাঙালী... হ্যা আমি নোয়াখাইল্যা..."

আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা... চির উন্নত মম শীর

বাড়ি কোথায় ?

"ফেনী"...

ও নোয়াখাইল্যা... হ্যাহ...। ফেনী, নোয়াখালীর মানুষ তো বাটপার, সুবিধাবাদী...
অনেক ছোট বেলা থেকেই ব্যাপারটার সাথে আমি পরিচিত। আমি কেন, যে কোন নোয়াখাইল্যা ট্যাগ প্রাপ্ত মানুষ সভ্য সমাজে প্রায়শই এই পরিস্থিতির শিকার হন।

বেশ কিছুদিন আগের কথা,
ক্যাম্পাস থেকে বাসায় আসছি। বাসের মোটামুটি মাঝামাঝি একটা জায়গায় বসেছি, কিছুদূর আসার পর একজন মধ্যবয়সী মহিলা বাসে উঠলেন।

বাসে যথেষ্ট ভীড় এবং এই মহিলার পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব; তাই আমিই সীটখানা ছেড়ে দিলাম, (এরকম একটা কালচার শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। পাঠক আপনি একবার মনে করার চেষ্টা করে দেখুন তো শেষবার কবে দেখেছেন একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছেন? আমি অন্তত কখনো দেখিনি. আমাদের দেশে বয়স্কদের সীট ছেড়ে দেয়ার ভদ্রতাটা এখন আর মানবিকতার মধ্যে নাই; এটা এখন আমাদের বৈশিষ্ট্য, আমাদের কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ চীন, জাপান কিংবা আমাদের পাশের ''দাদাদের'' দেশেও বাসে, ট্রামে বয়স্ক মানুষদের দুর্দশার এধরনের দৃশ্য হরহামেশা দেখা যায়) এই লেখাটা কিন্তু আত্মপ্রশংসা মূলক না; গল্পের আরও খানিকটা বাকি আছে বইকি।

কিছু দূর এসে বাসের সামনের দিকে কয়েকটা সীট ফাঁকা হলো। মহিলাটির সাথে আসা পুরুষ আত্মীয়টি প্রথম দিকে বসে ওনাকেও উঠে এসে তার পাশে বসতে বললেন।

; এবং মহিলাও উঠে সামনে চলে গেলেন।
প্রায় সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক সীটখানা বগলদাবা করলেন।

এই দৃশ্য দেখে সাথে সাথেই আরেকজন দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ সীটে বসে পড়া ভদ্রলোকের হঠাৎ বলে উঠলেন
"আপনার বাড়ি কি নোয়াখালী না ফেনী..."

"ক্যান ভাই..."

"না... ঐ ছেলেটা(আমাকে ইঙ্গিত করে) সীট ছেড়ে দিলো মহিলা দেখে, আর আপনি মিয়া বইসা গ্যালেন... এইসব তো নোয়াখাইল্যা স্বভাব... আপনার বাড়ি আসলে কই ?"

ভদ্রলোক দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বললেন,
"আমার বাড়ি তো কুমিল্লা..."

"ঐ তো কাছাকাছি... ঠিকই আছে... আশেপাশের মানুষদের স্বভাব তো গায়ে লাগবেই..."

আমি লোকটার কানের কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বললাম,
"ভাই... আমার বাড়ি ফেনী..."

জন্ম ঢাকাতে হলেও শেকড়টা গ্রামেই পোঁতা ছিলো। এই শহরে আছি তেরো বছর পার হতে চলল, গ্রামে কয়বার গিয়েছি আঙুল গুনে বলে দিতে পারবো, তবু নিজেকে ঢাকাইয়া দাবী করার মধ্যে অনেকের মত খুব যেন সার্থকতা খুঁজে পাই না। শহরে জন্ম হলেই কি বাড়ি শহরে হয় ? বাড়ি তো আত্মা... ওটাকে সবসময়ই হতে হয় গ্রামে, আর শহরেরটা তো বাসা... টেলিফোন বুথ।



কোন মানুষ একটা এলাকা থেকে এলেই সেই এলাকা নিয়ে শুরু হয় গবেষণা, কোন এলাকার মেয়ে ভালো কোন এলাকার ছেলে খারাপ, কে চোর, কে ডাকাত সব এলাকা দেখে বলে দেই আমরা। একটা ঘটনা ঘটলেই "অমুক এলাকার মানুষ, এটাই তো হবার কথা" ভাবখানা এমন কিছু বিশেষ বিশেষ এলাকার মানুষদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে "চুরি, ডাকাতি, খাছ্রামি, বাটপারি" ট্রেনিং দেয়া হয়। অথচ এত ছোট একটা দেশে ভূতত্ত্বের ভিত্তিতে মানুষের বৈশিষ্ট্য যে অল্পই পরিবর্তিত হয় সেটা কে কাকে বোঝাবে? আমারও মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে "এলাকার বাতাস..." জিনিসটা কি... এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা কি বলে।

একটা মেয়ের ব্যাবহারে কষ্ট পেলেই গোটা নারীজাতিকে তুলে গালি দ্যান,
একটা ছেলে ফ্লাড করলেই পুরুষ জাত'টাই খারাপ হয়ে যায়।
এক এলাকার একটা মানুষ খারাপ হলেই পুরো গুষ্ঠিই অপবিত্র হয়ে যায়।



অথচ নারীজাতিকে গালি দিলে গালটা নিজের মা, নিজের বোনের গায়েই পড়ে।
আর পুরুষ জাতটাকে গালি দিচ্ছেন যেই ল্যাপটপে সেটা কিন্তু ঐ জাতেই "আব্বু"ই কিনে দ্যায়।

এত গালিগালাজ খেয়েও আমি ফেনীর মানুষ... কিংবা নোয়াখাইল্যা হিসেবে খুব গর্ববোধ করি,
কারণ এই মাটিতে তো জন্মেছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার,
ভাষা আন্দোলনের প্রথম সেনানী গাজিউল হক,
আর কথা সাহিত্যিক "জহির রায়হানের" মত মানুষ।

শাহবাগে স্লোগান তুলেছিলাম "জহির রায়হানের বাঙলায়, রাজাকারের ঠাই নাই"। জহির রায়হান যদি নোয়াখাইল্যা হতে পারেন তাহলে তো আমি এই উপাধী মাথা পেতে নেবো।



আমার মত মানুষের জন্য এক জহির রায়হানই যথেষ্ট

"হ্যা আমি বাঙালী... হ্যা আমি নোয়াখাইল্যা..."

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।