আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আম্মু টা জিপিএ ৫ পেয়েছে ।

আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে । জানিনা, ব্লগে ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো শেয়ার করা ঠিক কি না । আজকে আমার খুব আনন্দের দিন । এই আনন্দটুকু সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই । আমার বড় আম্মু 'মাশফিহা মাহি' তার জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা পিএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে ।

সে সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুলে ইংরেজি ভার্সনে পড়াশোনা করেছে । আমার আম্মুটার জন্য সবাই দোয়া করেন, যেন জীবনের সব পরীক্ষাতেই সে সফল ভাবে উৎরে যেতে পারে । আমার আম্মুটা খুব খুব লক্ষী, এতটাই লক্ষী যে বাবা-মা'র কাছে তার কখনই কোন আবদার নাই । কোন কিছু কিনতে গিয়ে তাকে পছন্দ করতে বললে বলবে 'তোমাদের যা খুশি' । রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে বলবে 'তোমাদের যা খুশি' ।

কোন কিছুতেই তার আবদার নেই, নেই অভিযোগ । সেই ছোট বেলা থেকেই আমার মেয়েটা এই রকম । স্কুলে টিচারদের কাছে আমার মেয়ে খুব আদরের । স্কুলের প্রতিটা অনুষ্টানে নাচ-গান-আবৃত্তি-উপস্থাপনা কোন না কোন বিষয়ে ও সুযোগ পাবেই । সেশন জটের কারনে আমার ইউনি লাইফটা ছিলো অনেক দীর্ঘ, প্রায় সাত বছর ।

ক্যাম্পাস লাইফ অনেক মজা করে কাটিয়েছি । পড়াশোনার পাশাপাশি জাহাংগীরনগর থিয়েটারে নাটক করতাম, ঢাকায় বিভিন্ন ব্যান্ডশো তে লাইট ডিজাইন করতাম । কিন্ত ক্যাম্পাস জীবনের শেষের দিকটা কিছু ব্যক্তিগত টানপোড়ন আর সমস্যার জন্য সুখকর হয়নি । এর প্রভাব পরবর্তিতে আরো কিছুদিন বইতে হয় । যাক শেষে একটা ছোট জব নিয়ে চলে আসি নিজের এলাকা সিলেটে ।

তার বছর দুয়েকের মধ্যেই বাধ্য ছেলের মত বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করি । বিয়ের আগে পাত্রী দেখা এবং কথা বলার আয়োজন ছিলো, কিন্তু ইচ্ছে করেই তা করিনি । তবুও বিষয়টা নিতান্তই সরল ছিলোনা, একটা ভিন্ন পরিবেশ ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা কারো সাথে 'রচি মম ফাল্গুনি' এত সহজ নয় । এর ভিতরেই আমাদের কোল আলো করে এলো আমার বড় আম্মু । সে এসে শুধু ঘরই আলো করেনি, আমাকেও ফিরিয়েছে জীবনে ।

যে জীবন স্বাভাবিক, যে জীবন সুন্দর । এরও বছর পাঁচেক পর আবার ঘর আলো করে এলো আমাদের ছোট মেয়ে 'তাজফিহা ওহি' । এসেই সে জানান দিলো আপু যদি হয় দিঘীর শান্ত জল, আমি তবে উচ্ছল ঝরনা । বড় আম্মুটা বাসায় আছে কিনা টেরই পাওয়া যায়না । হয় পড়ছে, লিখছে না হয় গেম খেলছে, টিভি দেখছে- চুপচাপ শান্ত নিরবধি ।

আর আমার ছয় বছরের ছোট আম্মু, হাইপার এ্যাক্টিভিজম কাহাকে বলে ওরে দেখলেই বুঝা যায় । সকালে ঘুম ভাংগার পর রাত ১২টা/১টা পর্যন্ত খেলতে খেলতে ক্লান্ত হতে হতে নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সে আছে । এবং সারাক্ষন বাসাটা মাতিয়ে রাখছে । সে বড়টার মত এত সুবোধ নয়, সবকিছুতেই তার শর্ত আছে । এটা না হলে নিব না, ওটা না হলে হবে না ।

আর আমার বউ, ওর জন্য সত্যিই কস্ট হয় । ভোর ছয়টা থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত আমাদের তিনজনকে সামলায় । মাঝে মাঝে মনে হয় আমরাই সেই গর্বিত সৌভাগ্যবান শেষ প্রজন্ম যারা মাত্র ৮/১০ ঘন্টা অফিস করে বাকী সময়টা জমিদারি করে কাটাতে পারি । কারন আমাদের আছে সর্বংসহা গৃহিনী বধু । ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের অনুভূতি জানিয়ে আপনাদের অনেক সময় নষ্ট করলাম ।

শেষে আরেকটা সুখবর জানিয়ে দেই । বুড়ো বয়সে এমবিএ করছি । শুক্র-শনিবার বউ-বাচ্চারা একটু-আধটু ঘুরতে চায় । তাদের এই আনন্দকে পাশ কাটিয়ে ঐ দুই দিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাসে থাকি । আজই আমার ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়েছে, পেয়েছি ৩.৯০ আউট অব ৪ ।

না, আমাকে এত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ভাবার দরকার নাই । ফার্স্ট সেমিস্টারে বিজনেস ম্যাথ-ফিনান্স-একাউন্টিংয়ে কুপাকুপি মার্কস পেয়েছি, আর মার্কেটিং আমার ১৬ বছরের পেশা । সেকেন্ড সেমিস্টার থেকে আর কুপাকুপি করার কোন সাবজেক্ট নেই, সব ডেসক্রিপটিভ এবং কেস এনালাইসিস । তবু ভালো লাগছে একই দিনে আমার আম্মু আর আমি ভালো রেজাল্ট করেছি । দুঃখ শুধু একটাই, এমন আনন্দ দিনে মেয়েরা আমার পাশে নাই ।

ওরা দাদু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।