আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে জঙ্গি আশ্রয় দাতা কারা?



বাংলাদেশ থেকে যে জঙ্গিরা নির্মূল হয়নি তা আবারো প্রমাণিত হলো। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জঙ্গিদের যে সুসম্পর্ক ছিল, তা যে এখনো অটুট আছে তাও প্রমাণিত হলো। ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির মৃত্যুদন্ড-প্রাপ্ত তিন কয়েদিকে ছিনিয়ে নেয় তাদেরই সহযোগী জঙ্গিরা। এই ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম নিহত হন। ঘটনার মাত্র ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি রাকিব হাসান ও গাড়িচালক জাকারিয়াসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

২৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি রাকিবকে নিয়ে অন্য আসামিদের সন্ধানে বের হলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বন্দুকযুদ্ধে রাকিব নিহত হয়। পরে ছিনিয়ে নেওয়া অন্য দুজন জঙ্গি আসামিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট হলো জঙ্গিরা আবারও সক্রিয়। ঘটনার পর অবশ্য সারা দেশে কারাগারে ও সীমান্তে কড়া সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এ ধরণের দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

মাত্র ক’দিন আগে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দেয়। বার্তায় বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে, সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। ইন্টারনেটে প্রচারিত আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির এই বার্তার অল্প ক’দিন পরেই জেএমবি কমান্ডো স্টাইলে প্রিজন ভ্যানে এমন হামলা চালিয়েছে। জেএমবির এই জঙ্গিরা যে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন নামে বিভিন্ন গোপন সংগঠনের সঙ্গে এরা জড়িত রয়েছে।

জাওয়াহিরির জিহাদি বার্তাই কি জঙ্গিদের উজ্জীবিত হতে প্রেরণা যুগিয়েছে, এ প্রশ্ন এখন অনেকের। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার কাজে প্রয়োজন হয়েছে প্রচুর অর্থের এই অর্থের যোগানদাতা কে বা কারা, তাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবির ঘটনায় গোটা পরিস্থিতি নতুনভাবে পর্যালোচনা করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশে জঙ্গিরা নির্মূল হয়নি। তারা এতোদিন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল।

বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি কানেকশনের খবর ইতোপূর্বে বহুবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতায় জামায়াত-শিবির যেভাবে জনগণ ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, যেভাবে দেশব্যাপী সহিংস তা-বের সৃষ্টি করেছেÑ তাতে এখন তাদের মোটেই নিয়মতান্ত্রিক দল বলা যায় না। সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক ঘোষণায় বাংলাদেশে আল কায়েদা নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকার কথা বলা হয়েছে। আল কায়েদা নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত জামায়াত-শিবির ও জেএমবি-জেএমজেবি-হুজিসহ অনেক জঙ্গি সংগঠন যে জড়িত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দেশে-বিদেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস জেন্স টেরোরিজম অ্যান্ড ইন্সারজেন্সি সেন্টারের জরিপে ২০১৩ সালে বিশ্বে বিভিন্ন দেশের ১০টি সক্রিয় অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র সংগঠনের তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনÑছাত্রশিবির বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত রাখার জন্য এসব জঙ্গি সংগঠনগুলোকে বরাবরই ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
জঙ্গিরা যে দলেরই পরিচয় বহন করুক না কেন, তারা দেশের শত্র“, জাতির শত্র“। এরা দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের প্রধান শত্র“। দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা জরুরি।

জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে তাদের সঙ্গীদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তার ফলে সংশ্লিষ্ট অনেকের মনেই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আরও বড় ধরনের বিধ্বংসী হামলা চালাতে পারে। সরকার ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিদের হামলার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকার যদিও অঙ্গীকারবদ্ধ তারপরও বলতে হয় জঙ্গি উত্থান বন্ধ এবং পালিয়ে যাওয়া অন্য জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকে আরও সতর্ক-সজাগ হতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করতে হবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে।



বাংলার মাটি জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত করতে না দেওয়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ শেখ হাসিনা:
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। সেসময় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও নাদিম মোস্তফার পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানরা রাজশাহী অঞ্চলে তালেবানি রাষ্ট্র কায়েমের এক ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল হাওয়া ভবনের। এমনও শোনা গিয়েছিল যে, তখন বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই টেলিফোনে কথা হতো তারেক রহমানের। বাংলা ভাই মামা বলে সম্বোধন করতো তারেক রহমানকে।

জঙ্গিরা তখন সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর আর্থিক সহযোগিতায়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে জঙ্গি উত্থানের শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় তিনি বলেছিলেন, বাংলার মাটিকে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হতে দেওয়া হবে না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি তাঁর অঙ্গীকারে বদ্ধপরিকর থাকেন। ফলশ্রুতিতে মহাজোট সরকারের পুরো পাঁচ বছরে দেশে জঙ্গি তৎপরতা ছিল শূন্যের কোটায়।

বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানসহ ছয় জঙ্গির ফাঁসি হওয়ার পর মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত অন্তত ২৭ জঙ্গি বন্দি ছিল দেশের বিভিন্ন কারাগারে। ২০১৩ সাল জুড়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যস্ত থাকায় সরকারও ব্যস্ত থাকে এই দুই জোটকে নিয়ে। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখলেও তারা ঠিকই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর আন্দোলন ম্রিয়মান হয়ে পড়ায় বিষয়টিকে চাঙ্গা করার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল একটি ব্রেকথ্রুর। সেটিই তারা ঘটায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনতাই করে।

উদ্দেশ্য, ছিনতাই করা জঙ্গিদের দিয়ে আবারো সারা দেশে নাশকতার পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা।
কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই জানিয়ে দেন বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন। দেশের প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকার আগামী পাঁচ বছরে যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে তেমনি দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকেও নির্মূল করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.