আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃ ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার মিস নিশাত এবং আমার অসমাপ্ত প্রেমের গল্প !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

-তোমাকে বলেছিলাম না কাকু, আমাদের মিস অনেক সুন্দর !!

নিলিমের কথা শুনে সুন্দরী মিস আরও একটু লজ্জা পেয়ে গেল !
সুন্দরী মিস আসলেই বেশ সুন্দরী ! এই রকম মেয়ে স্কুল টিচার ঠিক দেখে বিশ্বাস হয় না ! এই মেয়ে কাজ করবে কোন কর্পোরেট অফিসে ! এখানে কি করে ?
অবশ্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও খারাপ না !

এতো সুন্দরী মিস টিচার হলে আমি তো একদিনও স্কুল কামাই করতাম না ! প্রতিদিন স্কুলে আসতামই পারলে ছুটির দিনও হাজির হতাম !

আমি নিলিমের মিস কে বললাম
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ! আসলে রাস্তায় এভাবে আটকে যাবো বুঝতে পারি নি ! ওকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ !
মিষ্টি হেসে মিস বলল
-কোন সমস্যা নেই !
আমি নিলিম কে নিতে যাবো তখনই নিলিম বলল
-কাকু ! মিস তো আমাদের এলাকাতেই থাকে !
আমি কৌতুহলী চোখে মিস এর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তাই নাকি ?
-জি !
-আরে তাহলে চলুন ! আমাদের সাথে চলুন !
-না না ! ঠিক আছে ! আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাবো !
-আরে আমি আপনাকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে চাইছি আর আপনি রিক্সা করে যেতে চাইছেন !
-না আসলে.....
-দেখুন গাড়ি আমার না হতে পারে তবে আমি কিন্তু গাড়ি ভাল চালাই ! আর একজন সুন্দরী মিস গাড়িতে উঠবে এটা কে না চায় বলুন ! তবে আপনি আমার সাথে উঠতে না চাইলে কথা ভিন্ন !

একটু ইতস্তত করে মিস গাড়িতে উঠে বসল ! চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে ।



-আপনি কি করেন ?
-আমি ? আপাতত কিছু না ! হাওয়া খেয়ে বেড়াই বলতে পারেন ! আর নিলিম কে আনা নেওয়ার কাজ করি ! ভাই ভাবীর সংসারে আছি চিন্তাহীন !
আমার কথা শুনে মিস নিশাতের খুব বেশি পছন্দ হল বলে মনে হল না ! আসলে কোন মেয়েই এই টাইপের ভবঘুরে ছেলে কে পছন্দ করে না ! বিশেষ করে কোন কর্মজীবি মেয়ে তো নয়ই !
মিস নিশাত বলল
-এভাবে কি জীবন যাবে ?
-যাবে না কেন ? দেখুন আমার কোন পিছু টান নেই ! আর আমার বদ্ধজীবন ভাল লাগে না ! সময় করে অফিসে যাওয়া এটা আমার ঠিক পছন্দ না ! এতো নিয়ম নীতি আমার ভাল লাগে না !

কথা বলতে বলতে কখন যে বাসার কাছে চলে এসেছি বুঝতেই পারলাম না ! আমাদের বাসা থেকে কয়েক ব্লক পরেই মিস নিশাতের বাসা ! উনাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে হাজির হলাম !



পরদিন আবারও হাজির হয়ে গেলাম নিলিম কে আনার জন্য ! নিলিম আসার পরেও যখন আরও একটু সময় অপেক্ষা করছি তখন নিলিম বলল
-কাকু ! কি হল যাবে না ?
-চুপ করে বসে থাক !
-চল না ! ক্ষুদা লেগেছে !
-কি খাবি বল !
-আইসক্রিম !
-আইসক্রিমে পেট ভরে ?
-হুম ভরে !
আইসক্রিম কিনে দিলাম ! নিলিম পুরো আইসক্রিম শেষ করে ফেলল কিন্তু মিস নিশাতের কোন খোজ নাই ।
শেষে না পেরেই বললাম
-তোর মিস কইরে ?
-কোন মিস কাকু ?
বদ টা সব বুঝে কিন্তু তবুও জিগায় !
-জানিস না কোন মিস ?
-ও সুন্দরী মিস !
-হুম !
-মিস এর তো আজকে অফ ডে ?
-কি ? এই কথা আগে বলবি না ?
নিলিম দুষ্টমির হাসি দিয়ে বলল
-তাহলে আইসক্রিম মিস হয়ে যেত !
ফাজিল কয় কি ? এই বয়সেই এতো কিছু বুঝে গেছে !


রাতের বেলা খাবার সময় ভাবি হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো
-কি রে বিয়ে শাদী করবি না ?
-ভাবী, এখন না ! আগে কিছু করি ! তারপর ?
-বিকেল বেলা আম্মা ফোন করেছিল ! তোর জন্য নাকি মেয়ে দেখছে ! এবার গ্রামে গিয়ে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবে !
-ভাবী আমি গ্রামে বিয়ে করবো না !
-তো কোথায় করবেন জনাব ? ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার চলবে ?

নিলিমের দিকে তাকিয়ে দেখি বদটা মিশমিশ করে হাসছে । নিশ্চই এসে সব কিছু বলে দিয়েছে !
আমি বললাম
-যদি ম্যানেজ করতে পারো তাহলে আমি রাজি !
ভাবী মনে হয় আমার এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না ! কারন এর আগে বেশ কয়েকবার সে আমার বিয়ের জন্য আমাকে অনেক বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ! আজকে এভাবে এক কথায় রাজি হয়ে যাবো ভাবতে পারে নি !
খানিকটা অবাক হয়েই বলল
-সত্যি ?
-হুম ! সত্যি !
-এতো ভাল লেগে গেছে ?
-হুম ! বলতে পারো !
-পরে কিন্তু না করলে হবে না !
-আরে বাবা কে না করছে ! আগে কথা বার্তা বল তো !


আমি তো মনে সুখেই দিন কাটাতে লাগলাম ! প্রতিদিন নিলিম কে নিতে যাই ! এখন একটু আগে আগেই যাই ! মিস নিশাতের সাথে টুকটাক কথা বলি ! তাকে একদিন আইসক্রিম খাওয়ার দাওয়াত দিলাম ! সে খুশি মনেই রাজি হল ! আর এদিকে ভাবী খোজ খবর চালাতে লাগলো !
দিন তো ভাল কাটবেই !

একদিন আমি নিলিমের জন্য অপেক্ষা করছি, ওর স্কুল ছুটির পরে ! দেখলাম একটু পরেই নিলিম বের হয়ে এল ! সাথে মিস নিশাত ! আজকে বলতে হল না ! নিশাত নিজেই গাড়িতে এসে বসলো !
একটু অবাক হলাম ! তবে আমার জন্য আরও অপেক্ষা করছিল ! যখন বাসার কাছে পৌছালাম নিশাস নিজ থেকে নিলিম কে বলল
-আম্মু তুমি বাসায় যাও তো একটু ! তোমার কাকুর সাথে আমার একটু কথা আছে !
আমি একটু অবাক হলাম ! নিলিম চলে গেল ! আমরা দুজনে গাড়ির ভিতরে বসে আছি চুপচাপ !
কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না ! কিংবা কি বলা উচিৎ !
নিশাত হঠাৎ করেই বলল
-আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান ?
একেবারে সোজাসুজি কথা জানতে চাইলো ! এটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ! ইতস্তত করে বলল
-হ্যা !
-আমি চাই না !
একটু ধাক্কার মত খেলাম ! মনটাও খারাপ হল ! বললাম
-কেন জানতে পারি ?
-আপনাকে বিয়ে করার মত কিছুই আপনার ভিতর নেই ! আপনি কিছু করেন না, হয়তো আপনারা অনেক বড় লোক কিন্তু তার কিছুই আপনার নয় ! আমি এরকম ছেলে পছন্দ করি না ! আমি চাই নিজের পায়ে দাড়ানো ছেলে ! সিরিয়াস একজন, যে নিজের জীবন নিয়ে ভাবে ! একটা সংসারের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত !
আমি চুপ করে রইলাম ! আগেই বলেছিলাম যে মেয়েটা চাকরি করে সে কিছুতেই আমার মত ভবঘুরে ছেলেকে পছন্দ করবে না !

-আপনি দয়া করে আপনার ভাবীকে মানা করবেন আমাদের বাসায় যেন আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে না যায় !
আর কিছু না বলে নিশাত গাড়ি থেকে নেমে গেল !

আমি কিছুক্ষন বসে রইলাম গাড়ির ভিতর ! কেন যেন বুকের ভেতর একটা অচেনা কষ্ট হতে লাগলো ! বুঝতে পারছিলাম না কিসের কষ্ট !


####

-আরে আপনি এখানে ?
-আরে আপনি ! এখানে ?
-আমারও তো একই প্রশ্ন !

নিশাতের সাথে প্রায় সাত বছর পরে দেখা হয়ে গেল ! হঠাৎ করেই ! ও দেখলাম একটু মোটা হয়েছে ! তা ছাড়া সব কিছু আগের মতই আছে ! বুকটার ভিতর একটা চিনচিনে ব্যাথা শুরু হল কেন জানি !

বললাম
-অফিস থেকে ট্যুরে এসেছি ! অফিস গেট টুগেদার বলতে পারেন !
-অফিস !
-কতদিন আর ভবঘুরে থাকবো বলেন ?
কিছু একটা বলতে গিয়েও নিশাত আটকে গেল যেন !
আবার বললাম
-আপনি এখানে কি করছেন ?
-আমার হাসব্যান্ড এখানে জব করে ! আমরা কাছেই থাকি !
-ও !
-আসুন ! একবার ঘুরে যাবেন !
-না আজকে না ! আজকে তাড়া আছে !
-ও ! আছেন তো কদিন ?
-না ! আজই ব্যক করবো !
-ও হো !! তো আপনার ওয়াইফকে দেখছি না !
-নেই !
-আসে নি ?
-হুম ! আমার জীবনেই আসেন নি ! একজন কে পছন্দ করেছিলাম ! কিন্তু সে পছন্দ করে নি আমাকে !
নিশাত চুপ করে গেল !
বললাম
-তারপর আর কাউকে পছন্দই হল না যে !
আরও কিছুক্ষন নিরবতা !
শেষে আমি বললাম
-আচ্ছা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ! আসি !
-শুনুন !
-হুম ?
নিশাত কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না । বলল
-না থাক ! ভাল থাকবেন !
-আপনিও !


উল্টো দিকে ঘুরে হাটা দিলাম ! সাত বছর আগেই সেই কষ্ট টা কেন যেন আবার নড়ে চড়ে উঠলো ! অনেক বার নিজেকে প্রশ্ন করেছি নিজেকে ! এমন কেন হল ?
উত্তর পায় নি ! কেন একটা মেয়ের জন্য জীবনটা এমন হয়ে গেল ! যাকে কোনদিন বলি নি ভালবাসি, কোন দিন ডেট করি নি, কোনদিন হাত ধরি নি, কোন দিন যাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি নি, কেন তার জন্য জীবন টা এমন হয়ে গেল ! কেন তার জন্য কষ্ট হতে লাগলো !
আশ্চার্য ! মানুষের মন আসলেই বড় আশ্চার্য !!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।