আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হালের আউটসোর্সিং নামে ডিজিটাল প্রতারনা ও সাইবারক্রাইমের বংশবৃদ্ধি।

সাম্প্রতিক সময়ে পেশা নিয়ে সবছেয়ে বেশি যে কথাটা শুনেছি, সবছেয়ে বেশি যে বিজ্ঞাপন গুলোতে আমার ফেসবুকের ওয়াল ভরে যায় তা হল আউটসোর্সিং। সর্বত্র আজ আউটসোর্সিং এর জয়জয়কার। প্রায়ই আড্ডায় এই আলোচনাটা উঠে আসে বন্ধুদের মধ্যে। অনেকের মাঝে আউটসোর্সিং নিয়ে হাহাকার ও দেখি। আমার এক বন্ধু তো রীতিমত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ৩ মাসের কোর্স করে আউটসোর্সিং করবে।

হাজার হাজার ডলার কামাবে। পাবলিক বাসে উঠে প্রায়ই দেখি লিফলেট লাগানো " আউটসোর্সিং শিখুন মাসে ১০০০০- ৫০০০০টাকা কামান ঘরে বসে। " নিচে মোবাইল নাম্বার দেওয়া। কোন অফিসিয়াল ঠিকানা নাই। দ্বিতীয় সারির পত্রিকাগুলোতে রেগুলার বিজ্ঞাপন থাকে - "আউটসোর্সিং শিখুন স্বাবলম্ভী হউন"।

একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক-২০০০ সালের পরপর দেশে হঠাৎ করে আবির্ভাব ঘটে ডেসটিনির। সেই ডেসটিনি লোকজনের টাই ঝুলিয়ে দিয়ে কি করে হাজার হাজার মানুষের পকেট মেরেছে তা সকলে জানি। নতুন করে বলার কিছু নাই। " ইনভেস্ট করুন ঘরে বসে লাখ টাকা কামান" এই ফালতু কথাগুলো বলে হাজার হাজার মানুষের ব্রেন ওয়াশ করেছে। হাজার হাজার গৃহিনীর পরিবার ধ্বংস করেছে,হাজার হাজার ছাত্রের শিক্ষাজীবন শেষ করে দিয়েছে।

এই বিষয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, রংচটা জিন্স নিয়মিত পরা বুন্ধুটির গায়ে হঠাৎ রঙ্গিন পোশাক গলায় টাই। কিরে দোস্ত এত চেঞ্জ ব্যাপার কি? আলাদিনের চেরাগ পাইছ নাকি!! বন্ধুর সরল উত্তরঃ নারে দোস্ত , এমএলএম কোম্পানিতে জয়েন করছি। পালটা আমার প্রশ্নঃ তো দোস্ত তোমার পড়াশোনা অনার্স কি কমপ্লিট করবা না? বন্ধুর উত্তরঃ না রে দোস্ত পড়াশোনা করে কি হবে। এম এল এম করতাছি ফিউচার ব্রাইট। এই ছিল এমএলএম কোম্পানী।

যাই হোক ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। এম এল এম আমার লেখার বিষয়বস্তু না। তো হালের আউটসোর্সিং নিয়ে যা শুরু হয়েছে তা অনেকটা M L M কোম্পানীর প্রতারনার মত। আবার ও লাখ টাকা কামানোর স্বপ্নে বিভোর বাংলার যুব সমাজ। আরেকটি অভিজ্ঞতা বলছি- ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে কোন এক তারিখের কথা, আমার এক পরিচিত ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা রাত ১০ টায়।

জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কেমন আছো?কোথায় যাচ্ছ এত রাতে? -জ্বি ভাইয়া ভাল, যাচ্ছি অফিসে । একটা অফিসে কাজ করি নাইট শিফটে। পালটা আমার প্রশ্নঃ তা কি কাজ কর তুমি? -জ্বি আমি ক্যাপচা মানে ডাটা এন্ট্রির কাজ করি। আপডেট খবর সেই ছোট ভাই ক্যাপচার পাল্লায় পড়ে পড়াশোনাটাই বাদ দিয়ে দিল। আউটসোর্সিং এর আড়ালে কি হচ্ছে তা জনাব রাগিব হাসান যিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামাতে সিএসই ডিপার্ট্মেন্টে এ্যাসিন্ট্যাট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত তার এই স্টাটাস থেকে বাস্তবসম্মত একটা চিত্র উঠে এসেছে।

উনার কথার সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলব আউটসোর্সিং যদি করতেই হয় তবে অবশ্যই বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ , গ্রাফিক্স ডিজাইন , ওয়েব ডিজাইন ভালভাবে শিখুন। সফলতা আপনার আসবেই। ফেসবুকে মেয়েদের নামে ফেক একাউন্ট খুলে ক্লিক ব্যবসায়ী, লাইক ব্যবসায়ী হবেন না। এতে সাইবার ক্রাইম দিন দিন বেড়েই চলছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

ডিজাইন, ডেভেলপমেণ্ট করে আউটসোর্সিং এ সফল হয়েছেন এমন অনেক আছেন। তাদের পদাংক অনুসরন করুন। সস্তা কথায় কান দিয়ে প্রতারিত হবেন না। নিজের পড়াশোনাটা নস্ট করবেন না। আমি হলফ করে বলতে পারি এডুকেশন সার্টিফিকেট আপানার জীবন সত্যি বদলে দিবে।

আর যাই হোক ক্লিক ফ্লিক শিখে বড়জোর চায়ের বিলের টাকাটা পাওয়া যাবে। বিয়ে করতে গেলে কাজির ফিস দেওয়ার টাকাটা ও পাওয়া যাবে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.