আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেধার কুদৃষ্টি (সম্পূর্ণ)

তুই রাজাকার, তুই রাজাকার রাজাকারের ফাঁসি চাই। ৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। যতই সময় যাচ্ছে ততই পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের মানসিক, শারীরিক এবং সেই সাথে মেধার। মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন আমরা খেয়াল করি এবং করতে পারি, কিন্তু মেধার পরিবর্তন আমরা খুব একটা খেয়াল করিনা।

একটু ভেবে দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা যখন একটা নির্দিষ্ট সময় পার হই তখন আমরা আমদের ৭-৮ বছরের ছোট কাওকে কিছু করতে দিলে সে তখন না পারলে আমরা মনে মনে এই ভেবে বিরক্ত হই যে এই সোজা কাজটা না পারার কি আছে? একটু উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার ভাবে বুঝানো যায়। ধরুন আপনি ইন্টারমিডিয়েট লেবেলের একজন শিক্ষার্থী। আপনি প্রাইমারী লেবেলের কোন ছাত্র কিংবা ছাত্রীকে কোন কিছু শিখতে দিলে দেখবেন সে তা সম্পূর্ণ করতে অনেক সময় নিবে। সময় টা নির্ভর করবে যা শিখতে দেয়া হয়েছে তার বিষয় বস্তুর উপর।

কিন্তু তার যতই সময় লাগুগ না কেনো, আপনার থেকে সেটা সম্পূর্ণ করতে তেমন কোন ব্যাপারই মনে হবে না। তখন হয়ত দেখা যাবে ওই শিক্ষার্থীর শিখতে যদি বেশি সময় লাগে আপনি বিরক্ত হয়ে বলেও দিতে পারেন,এই সামান্য জিনিসটা শিখতে এতো সময় লাগে ? এখানে তার শেখার সময়টা যেমন নির্ভর করে কি শিখতে দেয়া হয়েছে তার বিষয় বস্তুর উপর, ঠিক তেমনি আপনার বিরক্ত হওয়ার সময়ও নির্ভর করবে আপনার মন মানসিকতার উপর। এখন প্রশ্ন হল আমরা কি কখনো নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি বয়সের পার্থক্যে আমাদের মেধার এই অসামঞ্জস্যতা কেন? হয়ত বেশীরভাগই বলবেন আমিতো তা আগেই পড়েছি এবং শিখেছি। একটু ভেবে বলুন তো আপনি ৭-৮ বছর আগে শিখেছেন এমন কোনো জিনিস কি এখনও মনে আছে, আর আপনার ওই সময়টাতে শিখতে কি কোন সময় লাগে নি? নাকি আপনি বিষয়টা একবার পড়ে জানার সাথে সাথেই শিখে ফেলেছেন? না, আমরা কেওই একবারেই কোন কিছু শিখতে পারি না। মেধার সাথে আরো একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আর সেটা হল অধ্যাবসায়। আমি আমার লেখায় এই জিনিসটার ব্যাপারে তেমন কিছুই আলোচনা করব না কারণ আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমার উদ্দেশ্য হল আমি যে প্রশ্নটা তুলে ধরেছি তার উত্তর খুঁজে বের করা। এবং সেই উত্তরের আলোকে কেনো এমনটা হয় তার একটা সমাধান খোঁজা। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের আকারো বাড়তে থাকে ।

সেই সাথে আমাদের মেধার বিকাশ। তাছাড়া আমরা অনেক কিছু দেখতে দেখতে অনেক অভিজ্ঞতাও অর্জন করি। তবে তখন মেধার বিকাশটা বেশিই হয়। যার ফলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ৭-৮ বছরের আগের জিনিসগুলো আমাদের কাছে অনেক সোজা মনে হয়। আর এজন্যই আমরা যারা কর্মক্ষেত্রে সফল হই না তারা তাদের বাকি জীবনটা আফসোস করি আর বলতে থাকি আমিও চাইলে পারতাম।

এই কথাটাই বলতে বলতে মাথা ঠুকতে ঠুকতে কারো কারো দিন পার হয় “ওই সময়টাতে কেন যে ঠিক মত কাজগুলো করি নাই”। এ ব্যাপারটা সকল ক্ষেত্রেই ঘটে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটে এ ধরণের আফসোসের বন্যা। কিন্তু একটা কথা কি ভেবে দেখেছেন আমাদের কাছে এখন যেটা সহজ মনে হচ্ছে ৭-৮ বছর আগে কেন তা লাগে নি। কারণ তখন না লাগাটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু একজন আপনাকে সাহায্য করতে পারতো। তিনি হলেন আপনার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। তিনি যদি তখন আপনার মেধার বিকাশের সঠিক সুযোগটা করে দিতে পারতেন হয়ত আজ আপনাকে আমাকে আর আফসোস করতে হত না। কারণ শিক্ষকরাই পারে ছাত্রের সঠিক মেধার বিকাশ ঘটাতে। আমরা মনে করি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক নাই, কিন্তু আমি বলব আমাদের শিক্ষক ব্যবস্থা ঠিক নাই।

এ কাজটা আগে ঠিক করতে হবে। কয়জনি বা ছাত্রদের সাথে পুরোপুরি মিশতে পারে তাদের বন্ধুর মত। কয়জন শিক্ষক আছেন যারা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন । অথচ তারা মানুষ গড়ার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। শিক্ষকতায় অংশগ্রহণ করা আর অন্য সব চাকরীতে যুক্ত হওয়া কিন্তু এক কথা নয়।

এ কথাটা কয়জন শিক্ষক জানে কিংবা বিশ্বাস করে? আমরা ছোট বেলা থেকে জেনে আসছি “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং যে জাতি শিক্ষায় যত উন্নত সে জাতি , জাতি হিসেবে তত বেশি উন্নত” । কিন্তু আমরা কি কখন ভেবে দেখি জাতির উন্নতির মেরুদণ্ড শক্ত করার দায়িত্ব যার হাতে উনার কি সেই দিকে কোন খেয়াল আছে কিনা। ছাত্রছাত্রীরা কখনই নিজের ভুল ধরতে পারবে না, কারণ তারা তখন অন্যের ভুল ধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদেরকে হাজার চেষ্টা করেও তাদের ভুল ধরিয়ে দেয়ার সম্ভব না। তবে হ্যাঁ একটা নির্দিষ্ট সিস্টেমে আগালে হয়ত তাদের মাঝে তাদের ভুলের গতিধারা গুলো দেখিয়ে দেয়া সম্ভব।

আমরা আমাদের কাছের মানুষ থেকে যেমন বেশি কষ্ট পাই, ঠিক তেমনি কাছের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি বেশি। আর সবাই এক কথায় স্বীকার করবে তার কাছের মানুষ তার বন্ধুরা এবং তার মনের মানুষ। তবে আমি এ কথাও মানি যে কিছু কিছু ছাড়া মনের মানুষের চাইতে মানুষ তার বন্ধুদের সঙ্গই বেশী পছন্দ করে। তাই বেশিরভাগের কথা চিন্তা করে শিক্ষকদের ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধু সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিৎ। এখন কথা হল কয়জন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এমন করে চিন্তা করে ? কার এতো ঠেকা পড়ছে যে আরেকজনের ছেলেমেয়ে নিয়ে এতো চিন্তা করা।

কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য , জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই এসব নিয়ে ভাবতে হবে । কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের আরও কাছে যাওয়া যাবে? কিভাবে তাদের বন্ধু হওয়া যাবে? কিভাবে তাদের মনের কথা জানা যাবে? কিভাবে পড়ালে সেটা তাদের মনে গেথে যাবে? কিভাবে পড়ালে তাদের শিখতে সুবিধা হবে? কি পড়ালে তাদের বাস্তব জীবনেও টা কাজে লাগবে? এসকল কিছুই শিক্ষকদের ভাবা উচিৎ। এ ছাড়াও আমরা আরেকটা সমস্যায় ভুগছি এবং তা হল বৈষম্য। আমি এখানে শ্রেণী বৈষম্যের কথা বলছি না। আমি বলছি মেধা বৈষম্যের কথা।

আমি মেধা বৈষম্যটাকে আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ৩ ভাগে ভাগ করব। প্রথম ভাগে আমি রাখবো যারা সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে কে কার চাইতে কত ভাল ফলাফল করতে পারবে। দ্বিতীয় ভাগে আমি রাখবো যারা পড়ালেখায় তেমন একটা মনযোগী না এবং সবশেষে তৃতীয় ভাগ। যাদেরকে আমি বলবো তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী, এরা মোটামুটি টাইপের পড়ালেখা করে এবং ফলাফলের দিক থেকে প্রথম ভাগের ছাত্রছাত্রীদের রাজত্ব মেনে নেয়। এবং তারা সবসময় মনে করে তাদের দ্বারা যা করছে তাই সম্ভব আর ভাল করা যাবে না।

এই হল ৩ ধরণের ছাত্রছাত্রী। এবার আসুন এদের মাঝে বৈষম্যটা কোথায় তা দেখি। বৈষম্যটা হল এই ৩ ভাগের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শিক্ষকদের দৃষ্টিকোণ। আমাদের শিক্ষকরা এই তিন ধরণের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তিন ধরণের আচরণ করেন। প্রথম শ্রেণীর প্রতি তাদের আচরণ এবং দৃষ্টিকোণ অনেক সুন্দর এবং ভালো থাকে।

আমি নিজে একটা জিনিস অনুভব করতাম, কোন টিচার যদি আমাকে দেখলে আমার নাম ধরে দেকে যে কোন খোঁজ খবর জিজ্ঞেস করতে তখন আমার ওই টিচারের প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা দুইটাই বেড়ে যেত। আর সাথে বাড়ত ওনার বিষয়ের উপর বিশেষ মনযোগ। কারণ ওনার বিষয়ে পারদর্শী হতে না পারলে আমি আমার অবস্থানটা তার কাছ থেকে হারাবার একটা ভয় থেকে যায়। তাই আমাদের সমাজে ভালো ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এরকম বন্ধুসুলভ দৃষ্টিকোণ থাকেই। তবে হ্যাঁ এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে একটু সমস্যা থাকে।

স্কুলে থাকতে যদি কোন টিচার ভালো ছাত্রছাত্রীদের দোহাই দিয়ে ও সব পারে / পারবে বলে তার প্রতি আর কোন খেয়াল না রাখে তবে সে খেত্রেও সমস্যা আছে। তখন দেখা যাবে স্কুলে ভালোভাবে পার হয়ে গেলো পরের ধাপে ওইভাবে পার নাও হতে পারে। এ গেলো ১ম ভাগের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি টিচারের আচরণ। এবার আসি ২য় ভাগের ছাত্রছাত্রী। এদেরকে টিচারদের মনোভাব বরাবরি একি থাকে।

আর টিচাররা এদেরকে সবার আগে মার্ক করতে পারেন। মার্ক করতে পারাটা একটা ভালো দিক। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখনি যখন তারা যে ৩য় ভাগের ছাত্রছাত্রী আর সে জন্য তাদেরকে দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যাবে না এ চিন্তা ভাবনাটা টিচারদের মধ্যে কাজ করে যখন। আমাদের টিচাররা সবসময় তাদেরকে ওই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে যে তারা খারাপ ছাত্র এবং তারা কিছু পড়লেও কি না পড়লেও বা কি হবে। কিন্তু তাদের যে মেধার বিকাশ যথাযথ ভাবে হয় নাই, তাদের যে একটু অতিরিক্ত যত্নের দরকার, তাদের মেধার বিকাশের একটা আলাদা পরিবেশ দরকার হয় তা খুব একটা কেও চিন্তা করে না বলে আমার ধারণা।

যার ফলে এই ৩য় ভাগের ছাত্রছাত্রীরা সবসময় ৩য় ভাগেই পড়ে থাকে। এদের আর উন্নতি হয় না। তবে হ্যাঁ, হয়ত ভালো পরিবেশ পেলে কিংবা ভালো সুযোগ পেলে তারাও হয়ত ভালো কিছু করতে পারবে আমার ধারণা এবং বিশ্বাস। এবার আসি ৩য় ভাগ বা ৩য় শ্রেণী। এরা আমার মতে সবচাইতে অবহেলিত।

আমি আগেও বলেছি এরা সবসময় নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এরা নিজে থেকে কিছু বলে না , বলার চেষ্টাও করে না। এদের অবস্থা এমন, ভালো এবং খারাপের মাঝে পড়ে এরা দিন দিন টিচারদের থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া টিচাররাও তাদেরকে চিনার খুব একটা চেষ্টাও করে না। কিন্তু যা করে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়।

এদের মেধার বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ থাকে, কিন্তু এদের নিজেদের লুকিয়ে রাখার মনভাবের জন্য কিছুই করতে পারে না। আমাদের টিচারদের উচিৎ এদেরকে খুঁজে বের করা এবং এদেরকে মেধার প্রকাশের সুযোগ করে দেয়া। কিন্তু আবারো একি প্রশ্ন এসে যায় আরেকজনের ছেলেমেয়ে নিয়ে চিন্তা করে আমার কি লাভ? যাই হক আর বেশী কিছু বলার নাই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই সংস্কৃতিটা চলে আসছে এবং চলতে থাকবে। কারণ শিক্ষকদের মধ্যে ওই মনমানসিকতা না আসবে যে উনি সমাজ গড়ার দায়িত্ব নিছেন , একটা উন্নত জাতি তার মাধ্যমেই হবে ততদিন পর্যন্ত এ মেধা বৈষম্য চলতে থাকবে।

এ থেকে পরিত্রাণের উপায় শিক্ষকদের ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আমরা কবে একটা উন্নত জাতি পাবো এ আসায় বসে না থেকে কিভাবে জাতিকে উন্নত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই আমাদের দেশ মেধার কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে। আসুন দেশকে জানি, দেশ ভ্রমণ করি । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।