আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষন্নতা একটি মারাত্মক মানসিক রোগ


বিষন্নতা এমন এক নীরব ঘাতক যা একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে গ্রাস করতে থাকে আর তাকে এনে দেয় একাকীত্ব। আর এই একাকীত্ব তার এই অসুখকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। সে ঢুকে পড়ে বিষন্নতা-কষ্ট-একাকীত্বের এক দুষ্টু চক্রে। স্বপ্নহীন,আনন্দহীন এক দূর্বিসহ জীবন নিয়ে আমাদেরই মাঝে বাস করে আমাদেরই কেউ একজন। আসুন এই মানসিক রোগটি সম্পর্কে ভালভাবে জানি এবং বিষন্ন মানুষগুলোকে আত্মসংহার ও আত্মহননের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করিঃ-


উপসর্গসমূহঃ১ নং বা ২ নং উপসর্গসহ নিম্নোক্ত যে কোন ৫ টি উপসর্গ যদি ১৫ দিনের বেশী আপনার মধ্যে থাকে(যে কোন কারণেই হোক না কেন) তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে মারাত্মক মাত্রায় বিষন্নতায় ভুগছেন যা চিকিৎসা না করালে আপনার সুন্দর জীবন ধ্বংসের মুখোমুখি চলে যাবে।

উপসর্গগুলো হলোঃ

১) প্রায়ই মন খারাপ থাকা বা একাকী মনের কষ্টে কান্নাকাটি করা বা ভিতর থেকে কান্না ঠেলে আসছে এমন লাগা।

২) অধিকাংশ কাজে আনন্দ না পাওয়া এমনকি যেসব কাজে মানুষ যথেষ্ট আনন্দ পায় যেমন ঈদ, বিয়ে, জন্মদিন ও অন্যান্য পারিবারিক/সামাজিক অনুষ্ঠান বা শপিং-এ অনীহা তৈরী হওয়া বা অংশগ্রহন করে আনন্দ না পাওয়া কিংবা এ ধরনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য অজুহাত তৈরী করা। মানুষের সাথে মেলামেশা করতে ভাল না লাগায় দিন দিন একা হয়ে যাওয়া।

৩) খাওয়ার ব্যাপারে অরুচী/অনীহা; এমনকি ক্ষুধা না লাগলেও খেতে ইচ্ছে না করা(এরা সাধারণতঃ সকালের নাস্তা দেরী করে করে)। দিন দিন শরীর শুকিয়ে যাওয়া।

অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করে এবং মোটা হতে পারে।

৪) শরীর খুব দুর্বল বা ক্লান্ত লাগা। বিশেষত: কোন কাজ আরম্ভ করার আগেই মনে হওয়া যে দূর্বলতার জন্য কাজটা করতে পারব না।

৫) ঘুম না হওয়া বা ঘুম খুব পাতলা হওয়া বা বিছানে শোয়ার পরও সহজে ঘুম না আসা বা বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া। বিশেষতঃ শেষ রাতে ঘুমটা আসে ফলে রোগী সকালে ঘুম থেকে দেরী করে উঠে।

কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে অবশ্য কারো কারো ঘুম বেড়ে যায়।

৬) দিন দিন মেজাজ চড়ে যাওয়া বা অল্পতেই বেশী বিরক্ত বা উত্তেজিত হওয়া। এমনকি রোগীরা অন্যের দেয়া ভাল উপদেশও সহ্য করতে পারে না।

৭) নিজেকে খুব অসহায় লাগা বা সকলের জন্য নিজেকে একটা বোঝা মনে করা অথবা সকল কষ্টের জন্য নিজেকে বা ভাগ্যকে বার বার দায়ী করা। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।

ভবিষ্যত অন্ধকার দেখা।

৮) কাজে-কর্মে মন না বসা বা কথা মনে রাখতে না পারা অর্থাৎ অমনোযোগী হওয়া।

৯) বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া। রোগী অনেক সময় বলে থাকে “অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি; তার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। ” ক্ষেত্র বিশেষে রোগী আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করে থাকে।



(REF.:RIVIEW OF GENERAL PSYCHIATRY,4th edt,DSM-IV)


আনুষঙ্গিক লক্ষণঃএগুলো বিষন্নতার প্রত্যক্ষ উপসর্গ না হলেও বিষন্ন রোগীদের মাঝে প্রায়ই দেখা যায়। যেমন খুব অস্থির লাগা, বুক ধড়ফড় করা, ঘাড় বা মাথার পিছনে ব্যাথা হওয়া, জ্বর জ্বর লাগা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হওয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, হজমের অসুবিধা বা পায়খানা কষে যাওয়া, যৌন ইচ্ছা বা ক্ষমতা কমে যাওয়া, ভয়/আতঙ্ক অনুভব করা, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বা ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখা, চারপাশের মানুষকে শত্রু ভাবাপন্ন/ক্ষতিকর মনে হওয়া, নিজের মতামতকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া ইত্যাদি।

পরিণতিঃ চিকিৎসা না করালে একজন বিষন্ন রোগী নিজ, পরিবার ও সমাজের কাছে বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। লেখাপড়ায় ফলাফল খারাপ করে,চাকুরীক্ষেত্রে উন্নতি হয় না,ব্যবসায় সফলতা আসে না,জীবনে উন্নতি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়,কর্মক্ষমতা বা দক্ষতা কমে যাওয়ায় দারিদ্রতায় ভূগতে হয়,নিকটজনের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে,বিয়ের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখা দেয়,পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে,কর্মে ও আচরণে অপরাধপ্রবণ হযে উঠে,বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে,মাদকাসক্ত হতে পারে,আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে,তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয যা টেষ্টে ধরা পড়েনা। অর্থাৎ একজন বিষন্ন মানুষ সকল অশান্তির উৎস্য বা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।




চিকিৎসাঃবিষন্নতাবিরোধী ঔষধ দিয়েই মূলতঃ এর চিকিৎসা করা হয়;তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের সাথে সাথে কাউন্সেলিংও বেশ ভাল কাজ করে। বিষন্নতাবিরোধী ঔষধগুলো বেশ ধীরগতিতে কাজ করে তাই অবস্থার উন্নতি হতে ২-৩সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। আবার একই ঔষধ একই মাত্রায় সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে কাজ নাও করতে পার। তাই ২-৩সপ্তাহ পরপর চিকিৎসক ঔষধ বা ঔষধের মাত্রা পুণঃনির্ধারন করে থাকেন। বিষন্নতাবিরোধী ঔষধগুলোর কোনটিই পাশ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়।

তবে সময়ের সাথে সাথে অধিকাংশ ঔষধই সহনশীল হয়ে যায়। তাই প্রতিটি ঔষধ সেবন করার সাথে সাথে এগুলো সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। এসব তথ্য আপনি ঔষধের প্যাকেটের ভিতরের লিফলেটেই পাবেন।


কতদিন ঔষধ খেতে হয়ঃসাধারণতঃ উন্নতি হওয়ার ৩মাস পর চিকিৎসক ঔষধ বা এর মাত্রা কমাতে শুরু করেন এবং উন্নতি অব্যাহত থাকলে আস্তে আস্তে তা বন্ধ করে দেন। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটা ৬মাস বা ১২মাস কিংবা তারচেয়েও বেশী সময় লাগতে পারে।

একটা বিষয়ে রোগীদের খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন উন্নতি দেখে হঠাৎ করে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন না;করলে এ রোগের উপসর্গ আবার দ্রুত ফিরে আসতে পারে।

কোথায় চিকিৎসা পাবেন?-জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট,শ্যামলী,ঢাকা;বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউ. হাসপাতাল(পিজি হাসপাতাল)-এর মানসিক রোগ বিভাগে;সকল মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগে। এছাড়াও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনি এ চিকিৎসা পাবেন।

ধন্যবাদ যারা কষ্ট করে আর্টিকেলটি পড়লেন। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।