আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি

রাজধানীর মগবাজারে অস্ত্রধারীরা গুলি করে হত্যা করে আবদুল আলীম নামে এক আনসার সদস্যকে। টিঅ্যান্ডটি কলোনির গেটের কাছে এ ঘটনা ঘটিয়ে অস্ত্রধারীদের প্রায় প্রত্যেকেই পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তুরাগ এলাকায় উদ্ধার হয় গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ। উত্তরায় এক রাতে চার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মুখে ডাকাতরা লুটে নেয় কয়েক লাখ টাকার মালামাল।

গুলিস্তানে দিনে-দুপুরে ককটেল ফাটিয়ে এক ব্যবসায়ীর সোয়া লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা।

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র এখন এমনই আশঙ্কাজনক। প্রায় প্রতিদিনই লাশ পড়ছে। নিজ বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি শত শত মানুষের সামনেই খুনের ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনা বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। চলছে নীরব, সরব আর টেলিফোনে চাঁদাবাজি। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ গতকাল সাতসকালে চাঁদাবাজরা গুলি করে হত্যা করেছে আনিসুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে।

এ ছাড়া গত তিন মাসে গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের সব ঘটনার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায় অস্ত্রধারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলের ডেপুটি এসাইনমেন্ট এডিটর মাহবুব আলম লাবলুর মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ এখনো তা উদ্ধার করতে পারেনি।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে রাজধানীতে খুনের ঘটনা ঘটে ৬০টি। এসব ঘটনায় জড়িত খুনিদের অধিকাংশই লাপাত্তা।

এ ছাড়া একই সময়ে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সহস্রাধিক। অর্ধশতাধিক অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জামিনে মুক্তি পাওয়া দাগি অপরাধী ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্ট থাকার কথা থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। বেশিরভাগ সময় জামিনে মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসীদের তথ্যও পৌঁছে না সংশ্লিষ্ট থানা পর্যন্ত।

এসব কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামানো সম্ভব হচ্ছে না। টার্গেট করে খুন করে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে পুলিশকেই দায়ী করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এতে অপরাধীরা আসকারা পেয়ে যাচ্ছে।

তাদের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে কম। এ ছাড়া পুলিশের মধ্যে জবাবদিহিতা কমে গেছে। প্রতি মাসে ডিএমপির অপরাধ পর্যালোচনা সভা না হওয়ায় ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা থাকছে না। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এএসএম শাহজাহান বলেন, চাঁদাবাজির ১০০টি ঘটনা ঘটলেও সব ঘটনায় মামলা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ঝামেলা এড়াতে কোনো কোনোটি আবার জিডি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

আবার মামলা হলেও ভুক্তভোগীরা ভয়ে অনেক সময় সাক্ষ্য দিতে যান না। এসব কারণে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যায়। তিনি বলেন, এসব দমনে দরকার দক্ষ বাহিনী। তা ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশ্রয় বন্ধ না হলে এ অপরাধ কমবে না। রাজধানীর অপরাধ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি এলাকায় চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

চাঁদা না পেলেই তারা অ্যাকশনে যাচ্ছে। গুলি চালাচ্ছে। হামলা করছে। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও তারা টার্গেট করছে। গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজদের হাতে অন্তত ১৫ জন গুরুতর জখম হয়।

চাঁদা না পাওয়ায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে আর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে তাদের। প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতাদের টার্গেট করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া খেটে খাওয়া মানুষও চাঁদাবাজদের হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত। ডিএমপির কোনো না কোনো থানায় প্রায় প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত জিডি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজদের ভয়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

সূত্র জানায়, জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাচ্ছে দাগি অপরাধীরা। তারাই এখন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে। অস্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিংবা বাসাবাড়িতে। এ ছাড়া কারাগারে আটক ও বাইরে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেও চলছে ভয়ানক চাঁদাবাজি। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিগত তিন মাসে চাঁদা দাবির অভিযোগে আড়াই শতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।

ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এসব ডায়েরি করেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও র‌্যাব শতাধিক চাঁদাবাজকে গ্রেফতারও করেছে।

জানা গেছে, গত মাসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় মগবাজার এলাকার একটি সিএনজি স্টেশনের মালিক মোস্তাফিজুল হক মিলনকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। একই কারণে আশকোনায় বাড়ি নির্মাণের সময় চাঁদাবাজরা বাড়ির মালিকসহ তিনজনকে গুলি করে আহত করে। বাড্ডায় জয়নাল আবেদীন নামে এক দোকান ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করে চাঁদাবাজরা।

মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের কোঅপারেটিভ মার্কেটের এক কাপড় ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই রাতেই মলি্লকা হাউজিং এলাকায় তার বাসায় মিষ্টির প্যাকেটে কাফনের কাপড়, ককটেল ও হাতবোমা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ওই ব্যবসায়ী এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেন। মিরপুর শাহআলী মার্কেটের এক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, 'শাহাদাত বাহিনীর' সদস্য পরিচয়ে তার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা।

তিনি থানায় জিডি করেছেন। এ ছাড়া ডিসেম্বরে উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগে চাঁদাবাজদের গুলিতে ফারুক হাওলাদার ও মিলন হাওলাদার (২৮) নামে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। ময়নারবাগের সাত নম্বর লাইনের ৩৩/৫ নম্বর প্লটে এ ঘটনা ঘটে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আরেক নির্মাণ শ্রমিক ও নিহত মিলনের ভগ্নিপতি মাহমুদ (৩২)। চাঁদাবাজরা ভবনের মালিককে না পেয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, চাঁদাবাজির অনেক ঘটনা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে থানায় লিপিবদ্ধ হওয়ার কারণে আসামি গ্রেফতার হয় কম। ভুক্তভোগীরা জানান, আগে থানায় মামলা করা সহজ হলেও এখন পুলিশ সহজে মামলা নিতে চান না। এতে চাঁদাবাজির মামলা কম হয়।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।