আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যাপস বানিয়ে ১৮ লাখ টাকার পুরস্কার

আর্থিক পুরস্কারের অঙ্কটা শুনলেই চমকে যেতে হয়—১০, পাঁচ আর দুই লাখ টাকা। তাও আবার মোবাইল ফোনের একটা অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) বানিয়ে। এ প্রতিযোগিতাটা শুরু হয়েছিল গত বছরের ১ জুলাই। আর জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার দেওয়া হলো গত ২৯ মার্চ। তরুণ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে উৎসাহ দেওয়ার এ আয়োজনের নাম ‘ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৪’।


নয় মাস ধরে প্রতিযোগীদের পেরোতে হয়েছে নানা ধাপ। প্রথমে ধারণাপত্র জমা দেওয়া, তারপর বিচারকদের সামনে উপস্থাপন। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রস্তুতিমূলক কর্মশালা। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের বিচারকাজ। ইতিমধ্যে প্রতিযোগী দলগুলো অ্যাপসও বানিয়ে ফেলেছে।

তৃতীয় পর্বের বিচারে নির্ধারিত হয় সেরা ১০ অ্যাপ। এরপর বিচারকদের দেওয়া নম্বর ও অনলাইন ভোটের হিসাবে নির্ধারিত হয় পুরস্কার।
চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী শীর্ষ তিন অ্যাপসে রয়েছে শিক্ষা, ঐতিহ্য ও বিনোদননির্ভর নানা বিষয়। প্রথম পুরস্কার ১০ লাখ টাকা জিতেছে সিক্রেট ট্রেজার অ্যাপ। পারিবারিক খেলা লুডুর অ্যাপটি পেয়েছে দ্বিতীয় পুরস্কার পাঁচ লাখ টাকা।

আর খেলার ছলে ইংরেজি শেখার অ্যাপ ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ তৃতীয় হয়ে জিতে নিয়েছে দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া ছিল ফেসবুক গেম বিভাগে বিশেষ পুরস্কার এক লাখ টাকা। যা পেয়েছে ফিলকার্ট নামের গেমের অ্যাপ। পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাপগুলো পাওয়া যাবে www.eatlapps.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে।
প্রতিযোগিতা নিয়ে এথিক্স অ্যাডভান্স টেকনোলজিস লিমিটেডের (ইএটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান বলেন, ‘সফলভাবে আমরা প্রতিযোগিতাটি শেষ করতে পেরেছি।

ধারণাপত্র তৈরি করা থেকে শুরু করে অ্যাপস নির্মাণের ক্ষেত্রে সব রকম মান উন্নয়নের কাজ করেছে শিক্ষার্থীরা, ফলে তাদের দক্ষতা বেড়েছে বহু গুণ। প্রতিযোগিতা চলার সময় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আমরা পূর্বঘোষিত সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পেরেছি। সবার সহযোগিতায় প্রতিযোগিতাটি একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হয়েছে। আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অংশগ্রহণে আরও বড় করে আয়োজন করা হবে এই প্রতিযোগিতা। ’

সিক্রেট ট্রেজার
সিক্রেট টেজার অ্যাপটির শুরুতে দেখা যাবে টিংকু হেঁটে যাচ্ছে।

রাস্তায় সে একটি মানচিত্র পাবে, সেখানে একটি মন্ত্র লেখা আছে। টিংকু সেটি পড়বে, এবার এক দৈত্যের সঙ্গে দেখা হবে তার। দৈত্যই তাকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পুরস্কৃত করবে।
অ্যাপটিতে মূলত খেলার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে আছে পাঁচটি ধাপ—পিরামিড, জঙ্গল, ব্ল্যাক ফরেস্ট, কেজ ও আন্ডার ওয়াটার।

প্রত্যেক ধাপে আছে ১৫টি লেভেল। পাঁচটি ধাপই সাজানো হয়েছে গল্প বলার ধাঁচে। বাচ্চারা শিখতে পারবে গণিত, বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের নানা বিষয়। এটি একটি মাল্টিপ্লেয়ার গেম। মানে একসঙ্গে কয়েকজন এটা খেলতে পারবেন।

মাধ্যম হবে তারহীন ব্লুটুথ।
অ্যাপটির নির্মাতা দল ওমলেটের চারজন সদস্য। দলনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘পুরস্কারের অর্থ আমরা সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করতে চাই। গবেষণা কিংবা তথ্যপ্রযুক্তির মান উন্নয়ন বিষয়ে টাকা কাজে লাগানোর ইচ্ছা আছে। আমাদের ল্যাপটপ ও আইফোনের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো কেনার পরিকল্পনাও আছে।

’ এ দলে আরও আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশীষ কুমার চন্দ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) অনিক ইসলাম ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির তৌহিদুল ইসলাম।

লুডু
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলা লুডুর অ্যাপ এটি। এখন হয়তো ঘরের বারান্দায় মাদুর পেতে লুডু খেলা সব সময় সম্ভব হয় না, তবে খেলা যাবে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটারে। এই লুডুতে ছক ও সাপলুডু দুটোই রয়েছে। ছকলুডু খেলা যাবে দুইজন মিলে।

সাপলুডু খেলা যাবে সর্বোচ্চ চারজন মিলে। স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পর্দা ছুঁয়ে ঘর গুনে এগিয়ে যাবে খেলাটি। স্মার্টফোন ঝাঁকালেই নড়তে থাকবে লুডুর গুটি, এরপর ছুড়ে দিলেই মিলে যাবে নম্বর। নম্বর গুনে কখনো পড়তে হবে সাপের মুখে, কখনো বা মই বেয়ে তরতরিয়ে উঠতে হবে ওপরে। অ্যাপটিতে রয়েছে চমৎকার গ্রাফিকসের কাজ, যেন সেই কাগজের ছককাটা লুডু।


লেজি কোডারস দলের চারজন বানিয়েছেন গেমটি। সবাই আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। দলনেতা অনিক সাহা বলেন, ‘আপাতত পুরস্কারের অর্থ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের। তবে একটা তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান চালু করার ইচ্ছা আছে আমাদের। ’ এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ আরমান, মঈনুল হাসান ও আসিফ মুজতবা।


ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ
বাংলা ভাষা থেকে সহজে ইংরেজি শেখার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটিতে গেম ও পাজল ব্যবহার করে ইংরেজি শেখার দরকারি কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেকোনো বয়সের যে কেউ অ্যাপটি ব্যবহার করে ইংরেজি শিখতে পারবেন। শেখা যাবে ইংরেজি ব্যাকরণ, ইংরেজিতে কথোপকথন, ভাষারীতি এবং প্রচলিত ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ। অ্যাপের যে অংশটি পড়া হয়ে যাবে তার ওপরেই থাকবে একটি পরীক্ষামূলক খেলা।

এ পরীক্ষায় বোঝা যাবে ব্যবহারকারী কতটুকু জানলেন ও শিখলেন। অ্যাপটিতে রয়েছে একটি বিশেষ সুবিধা। ব্যবহারকারী কোনো অধ্যায় বুঝতে না পারলে সে অংশটি চিহ্নিত করে অন্য একজনের কাছে সাহায্য চাইতে পারবেন।  
এ অ্যাপের নির্মাতা লাটিম এক্স দলের চারজন সদস্য। দলের প্রধান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেখ তানভীর আহমেদ বলেন, ‘কাজ করার জন্য আমরা একটা প্লাটফর্ম পেয়ে গেছি।

আমাদের কাছে বেশ কিছু অ্যাপসের প্রাথমিক ধারণা আছে। সেগুলোর মান উন্নয়ন করে আরও কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাপস নির্মাণ করতে চাই। সবার মত নিয়ে এ কাজেই পুরস্কারের অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা আছে। ’ 
এ দলের বাকি তিন সদস্য হলেন—বুয়েটের অনিক চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ও জাওয়াদ উদ্দিন।

ফিলকার্ট
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ফেসবুক গেম বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ফ্যাট বয়েজ দলের ফিলকার্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মফিজুল ইসলাম ও আশীষ কুমার চন্দ, এআউইউবির শিক্ষার্থী অনিক ইসলাম এবং নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির তৌহিদুল ইসলাম নির্মাণ করেছেন ফেসবুক গেমের এই অ্যাপটি।
গেমটি মূলত ফ্লাপি বার্ড গেমের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এখানে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করতে হবে। খাবার সংগ্রহের সময় আপনি কিছু বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। বাধা পেলে আপনার লাইফ কমে যাবে।

এখানে আছে দুই ধরনের খাবার— একটি ভালো অন্যটি খারাপ। ভালো খাবার খেলে পয়েন্ট বেড়ে যাবে, আর খারাপ খাবার খেলে পয়েন্ট কমে যাবে। গেমটি খেলে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করতে পারলে সেটি চলে যাবে আপনার ফেসবুক ওয়ালে। দলের প্রধান মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কাজের মাধ্যমে আমরা একটি দক্ষ দল গড়ে তুলতে চাই। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করব।

এক নজরে
ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৪
উদ্বোধন: ২৯ জুন ২০১৩
প্রতিযোগিতা শুরু: ১ জুলাই ২০১৩
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার কর্মশালা: ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৩৭টি
ধারণাপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩
জমা পড়া ধারণাপত্র: ৮০৫টি
অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: ৯৭
প্রাথমিক বাছাই করা ধারণাপত্র: ১২৫
দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ অ্যাপস: ৩৫টি
গ্রুমিং সেশন: ৩টি; তৃতীয় পর্বে উত্তীর্ণ অ্যাপস: ১৫টি
চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ অ্যাপস: ১০টি
আয়োজক: এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেড (ইএটিএল) ও প্রথম আলো
কৌশলগত অংশীদার: তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ; পৃষ্ঠপোষক রূপালী ব্যাংক লিমিটেড; এক্সক্লুসিভ টেলিকম পার্টনার: রবি; মিডিয়া পার্টনার: চ্যানেল আই; রেডিও পার্টনার: এবিসি রেডিও

পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যান্য অ্যাপস

 

চতুর্থ
হজ উইজার্ড। হজযাত্রীদের জন্য নির্দেশনামূলক অ্যাপ। নির্মাতা: টিম পিওরিটি। সদস্য: মফিজুল ইসলাম, একরাম হোসেন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অনিক ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম (নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি)।
পঞ্চম
স্মার্ট এলসিসি।

ধানের পাতার ছবি থেকে ধানগাছের অবস্থা জানার অ্যাপ। নির্মাতা: আইআইটি কিটক্যাটস। সদস্য: ইফতেখার আহমেদ, রায়হান হোসাইন ও শরিফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ষষ্ঠ
ফায়ার ফাইটার। অগ্নিকাণ্ডসহ জরুরি প্রয়োজন বা দুর্ঘটনায় সহায়তা পাওয়ার অ্যাপ।

নির্মাতা: রিটার্ন ওয়ান। সদস্য: ফয়সাল আমিন, মুজাহিদুল করিম, তানজিম তাহমিম ও তুহিন চৌধুরী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
সপ্তম
পিঠা-পুলি। পিঠা তৈরির অ্যাপ। নির্মাতা: ইএসপিএম।

সদস্য: আবু হাসান, নাসির উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান ও মো. শহিদুল্লাহ, (রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)।
অষ্টম
খেলতে খেলতে শেখা। অটিস্টিক শিশুদের জন্য বাংলা বর্ণমালা শেখার গেম। নির্মাতা: নাইট কোডার। সদস্য: রায়হান হোসেন, শরিফ রহমান ও ইফতেখার আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ইশফার-ই-আলম (ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি)।


নবম
সহজ সঞ্চয়। মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাব কষার অ্যাপ। নির্মাতা: ডিইউ ড্রিমারস। সদস্য: অমিত কুমার দাশ, সাইফ আযাদ, তমাল অধিকারী ও নাজমুস সাকিব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
দশম
মা ও শিশু।

মাতৃত্বকালীন ও শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাপ। নির্মাতা: অ্যান্ড্রু ব্যাবুনস। সদস্য: অভিজিত সাহা, মাশুক সাদমান, সৌরভ পাল ও সাজু সাহা (রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.