আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি বনাম ধর্মহীন রাজনীতি

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বয়স ৪১ বছর আর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বয়স ৩৩ বছর, ৩৩ বছর পূর্বে আয়াতুল্লাহ্ রুহুলুল্লাহ্ খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে সংগঠিত হয় এক ঐতিহাসিক ইসলামী বিপ্লব। চলুন একটু দেখার চেষ্টা করি ধর্মকে আকড়ে ধরে ইরান বাংলাদেশ থেকে কতটা পিছিয়ে গিয়েছে? আপনাদের একটু অবাক হতেই হবে। কারণ সত্য কথা শোনার মত সৎ সাহস খুব কম মানুষেরই আছে।

প্রথমেই আসি সামরিক শক্তিমত্তায়, www.globalfirepower.com এর ভাষ্যমতে সামরিক শক্তিতে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ১২, আর তুরস্কের অবস্থান ষষ্ঠ। তুরস্কের কথা এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো, গত তিনটি নির্বাচনে তুরস্কের ইসলামপন্থী একে পার্টি ক্ষমতায়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, প্রথম ৫৫ টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তান থাকলেও বাংলাদেশ নেই। উন্নত প্রযুক্তি ও পারমাণবিক শক্তিতে ইরানের অগ্রগতির কথা প্রায়শই সংবাদ মাধ্যমে আসে। আর তুরস্কতো আরো অনেক এগিয়ে।

বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্ক আর ইরান যে ভূমিকা পালন করে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও সেরকম কোন ভূমিকা রাখতে পারি না, বিশ্ব রাজনীতিতে তো প্রশ্নই উঠে না। এবার চলুন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশগুলোর অবস্থান জানার চেষ্টা করি। জিডিপি অনুসারে উইকিপিডিয়াতে যে তালিকা পেলাম তাতে তুরস্ক রয়েছে ১৮তম অবস্থানে, ইরান রয়েছে ২২তম অবস্থানে আর বাংলাদেশ রয়েছে ৫৮তম অবস্থানে। ফেরদৌসী, খৈয়াম, রুমি, হাফিজের ইরান অবশ্যই সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অনেক অনেক সমৃদ্ধ। ইরানের ছায়াছবিও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

অতি সম্প্রতী মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যে পরিবর্তনে হাওয়া বইছে, তার ফলে অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে প্রধাণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো। আমি প্রশ্ন করি, মুসলিম ব্রাদারহুডের মিশর কোন দিক দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে? কিছুদিন আগে ফিলিস্তিনে ইসরাঈলের আগ্রাসন বন্ধে বিপ্লব পরবর্তী নতুন মিশরীয় সরকার যে ভূমিকা রেখেছে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আমাদের দেশের নাস্তিক, বাম, সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদরা প্রায়শই ধর্মীয় রাজনীতির বিষোদগার করেন আর উদাহরণ হিসেবে তালেবানদের তুলে ধরেন, অত্যন্ত সুকৌশলে তুরস্ক আর ইরানের কথা পাশ কাটিয়ে যান। তারা এটাও ভুলে যান, কি পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মাও, স্টালিন, পলপটরা সমাজতন্ত্র কায়েম করেছিল। তারা ভুলে যান গণতান্ত্রিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রই হিরোশিমা নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা মেরে কি ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

কোন দেশের উন্নতি অগ্রগতির পেছনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে ধর্ম। ধর্ম কে বাদ দেয়া মানে সমাজকে কলুষিত করা, দেশ জাতির পবিত্রতা ভুলুন্ঠিত করা। সত্যি করে বলুনতো, বাংলাদেশের আজ এই দুরাবস্থার কারণ কি ধর্মীয় রাজনীতি? অবশ্যই না। এই দুরাবস্থার অন্যতম কারণ আমরা ধর্ম থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছি, যার ফলে সমাজের নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে, বেড়েছে অন্যায়, অত্যাচার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। আর ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই আমরা ব্যর্থ হয়েছি যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দিতে।

শেখ মুজিবরের মত মহাণ নেতা চাটুকার দ্বারা পরিবেষ্টিত হবার কারণে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশ গঠণে সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেননি যেভাবে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন যুদ্ধপূর্ববর্তী সময়ে। আমাদের দূভার্গ্য যে তাকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল। এর পর দেশে জিয়ার মত একজন ক্যারিশমেটিক নেতার আবির্ভাব হয়, যাকে আমরা কাজ করার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করি। গত ৪১ বছরে এই দুজন নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা এরশাদ, খালেদা আর হাসিনাকে দিয়ে বিন্দুমাত্রও পূরণ হয়নি। আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর এম এ জলিলও এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

জাসদ থেকে তার পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি তার ‘কৈফিয়ত ও কিছুকথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, "“দলীয় জীবনে জাসদের নেতা-কর্মীরা ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দেয়ার ফলে নৈতিকতার ক্ষেত্রে অবক্ষয় ঘটে, ব্যক্তিজীবনে আসে বিশৃঙ্খলা এবং ধর্মীয় নৈতিকতা এবং মূল্যবোধে পরিচালিত সমাজদেহ থেকে নিজেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও সমাজে বসবাসরত জনগণকে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সাংস্কৃতিক জীবন এবং মূলবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে মোটেও সক্ষম হয়নি। প্রচলিত পারিবারিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনধারা থেকে কেবল নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলেই বিকল্প সংস্কৃতি জন্ম নেয় না, বরং এই ধরনের রণকৌশল অবলম্বন সমাজে প্রচলিত নীতি, নৈতিকতা, আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি তাচ্ছিল্য, উপহাস এবং ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, যা প্রকারান্তরে বিপ্লবী আন্দোলনের বিপক্ষে চলে যায়। " এটা সত্য যে আমাদের দেশে আদর্শ ইসলামী রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে। শুধুমাত্র কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষিতদের দিয়ে আদর্শ ইসলামী রাজনৈতিক দল গঠণ সম্ভব নয়। একটি আদর্শ ইসলামী রাজনৈতিক দলে কওমী, আলিয়া, বাংলা, ইংরেজী সহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষিত রাজনীতিবিদদের মিলন ঘটতে হবে।

ঐ আদর্শ রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই দেশ ও জনগণের স্বার্থে সোচ্চার হতে হবে। তাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিত মুসলিম অমুসলিম মানুষের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। আফসোস আমাদের দেশের ইসলামী দলগুলো নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা জনগণকে বোঝাতেই পারেনি যে, ইসলামী আইন কানুন অপরাধীদের জন্য কঠোর, কিন্তু শান্তিপ্রিয় মানুষ ও নির্যাতিতদের জন্য সহায়ক কোমল। শরীয়াহ আইনকে তো ভয় পাবে সন্ত্রাসী অপরাধীরা।

শরীয়াহ আইন শুধুমাত্র শিরচ্ছেদ ও হস্ত কর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। শরীয়াহ আইন সুশাসনের কথা বলে, ন্যায়বিচারের কথা বলে, আইনের দৃষ্টিতে যে সবাই সমান সে কথা বলে। অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতি সম্পদের সুষম বন্টনের কথা বলে। ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পত্তিতে যে দরিদ্র মানুষের হক আছে সে কথাই বলে। সকল অন্যায় অত্যাচার, পাপাচার, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতার বিরুদ্ধেই কথা বলে ইসলামী অনুশাসন।

ইসলাম তো একটি সুস্থ সুন্দর বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্নই দেখায়। ইসলামী দলগুলোর উচিৎ এ কথা গুলোই এ দেশের মানুষকে এ দেশের মানুষের ভাষাই বোঝানো। তথ্যসূত্রঃ www.globalfirepower.com List of countries by GDP (nominal) অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা - মেজর (অব.) এম. এ. জলিল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.