আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমার সাথে আমার কল্প কথা !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! পুরো দিনের মধ্যে এই সকাল বেলাটাই মিলির খুব প্রিয় । এই সকাল বেলাতেই আবীর অফিস যায় । এই সময় এটা ওটা এগিয়ে দিতে হয় । কেবল এই সময়টাতেই মিলি আবীরের কাছাকাছি থাকতে পারে । কি যে ভাল লাগে ওর ! মনে হয় যদি এমন ভাবেই আবীর সাথে সাথে থাকতে পারতো ! আবীর শোবার ঘরে তৈরি হচ্ছিল ।

মিলি ভয়ে ভয়ে আবীরের পেছনে গিয়ে দাড়াল । -আপনার আর কিছু লাগবে ? আবীর পেছন ফিরে তাকাল । -না আর কিছু লাগবে না । মিলির আরো কয়টা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে । কিন্তু করতে পারে না ।

মিলি খুব ভাল করেই জানে আবীর এসব কথা পছন্দ করে না । কিন্তু কেন জানি মানুষটার সাথে কেবলই কথা বলতে ইচ্ছা করে । ছোট বেলা থেকেই মিলি স্বপ্ন দেখতো এমন একটা মানুষের সাথে তার বিয়ে হবে যে ওকে পাগলের মত ভালবাসবে ! সারাদিন ওর আসেপাশে ঘোড়াঘুড়ি করবে আর ওর সাথে সাথে হাজারও বিষয় নিয়ে কথা বলবে । কিন্তু মিলির এই স্বপ্ন গুলোর কোনটাই পুরন হয় নি । মিলি একথা জানে যে আবীর ওকে একদম ভালবাসে না ।

কেবল সামাজিকতা রক্ষা করার জন্যই বিয়ে করা । তা না হলে আজ এক বছর ওদের বিয়ে হয়েছে আবীর এর মধ্যে একটা বারও ভালবেসে মিলিকে কাছে টেনে নেয় নি । আবীর ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে মেইন দরজার দিকে হাটা দিল । মিলিও আবীরের পেছন পেছন আসতে লাগল । কিন্তু অন্য দিনের মত আজ আবীর দরজা খুলেই বেড়িয়ে গেল না ।

একটু দাড়াল । যেন কিছু ভাবছে । এটা মিলির কাছে একটু নতুন লাগে । মিলি একটু ভয়ে ভয়ে বলল -আর কিছু লাগবে আপনার ? আবীর বলল -আজ আমার চট্টগ্রাম যাবার কথা রয়েছে । অফিসের কাজ ।

সপ্তাখানেক লাগবে । -সপ্তাখানেক ! মিলির মনটাই খারাপ হয়ে যায় । সপ্তাখানেক এই মানুষটা ওর চোখের আড়ালে থাকবে এটা ভাবতেই মিলির মনটা খারাপ হয়ে যায় । মিলি বলল -আমি আপনার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবো । কখন আসবেন ? -তিনটা চারটার দিকে ।

-আচ্ছা । কথা শেষ করে আবীর চলে গেল না । ওর মুখ দেখে মনে হল যেন আরো কিছু বলতে চায় । কিন্তু মিলিরও আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না । কেবল দাড়িয়ে থাকে দরজার সামনে ।

আবীর একটু ইতস্তত করে বলল -আমি ভাবছিলাম যে তুমিও চল আমার সাথে । ঐখানে অফিসের রেস্ট হাউজটা একটা টিলার উপরে । তোমার ভাল লাগবে । মিলির মনে হল ওকে যেন কেউ ২২০ ভোল্টের শক খেল ! বিয়ের আজ এতোদিন পর আবীর ওকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে । মিলির খুব ইচ্ছা করলো আবীরকে খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরতে ।

কিন্তু এই কাজটা করা যাবে না । আবীর কি ভাববে কে জানে ! মিলির ভিতর একটু তাড়াহুড়া দেখা দিল । এতো দিন আবীর যখন অফিস যেত মিলির মনে হত যেন না যাক ! আর একটু থাকুক কিন্তু আজ মনে জলদি যাক ! জলদি না গেলে জলদি আসবে কিভাবে ? আর মিলির এতো ভাল লাগছে মনে হচ্ছে এখনই চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসবে । আবীর চোখের পানি দেখলে লজ্জার সীমা থাকবে না । আবীর বলল -তুমি তোমার কাপড়ও গুছিয়ে রেখ ।

-আচ্ছা । আবীর চলে গেল । দরজা বন্ধ করে মিলি কিছুক্ষন দাড়িয়েই রইল দরজার হাতল ধরে । মিলির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও আবীরের সাথে কোথাও যাচ্ছে ! একসাথে । একসাথে যাচ্ছে ! আচ্ছা সত্যি ই যাওয়া হবে ? মিলির তবুও বিশ্বাস হতে চায় না ।

মিলি কিছু আশা করে থাকলে সেই জিনিসটা কখনও পূরন হয় না । মিলি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন ঠিক হল ওরা সবাই মিলে কক্সবাজার বেড়াতে যাবে । মিলির বাবা যখন প্রথম কথা তুল্য । মিলির চোখে কেবলই সমুদ্র ভাসতে লাগল । মিলি ধরেই নিয়েছিল যে যাওয়া হচ্ছে সমুদ্র দেখতে ।

যেদিন ওদের যাওয়ার কথা ঠিক তার আগের দিন মিলির মা কল তলায় পড়ে গিয়ে ব্যাথা পান মাজায় । প্রথমে ভেবেছিল সামান্য ব্যাথা । রাতের ভিতর কোমরের নিচ থেকে একদম অবশ হয়ে যায় । মিলি দের যাওয়া বাতিল হয়ে যায় । মিলি যখন সেভেনে পড়ে মিলির মা বাথরুমের ফিনাইল খেয়ে মারা যায় ।

অচল জীবন তার কাছে অসহ্যের মত হয়ে গিয়ে ছিল । মিলির বাবা আবার বিয়ে করেন । তারপর থেকেই মিলি আবিষ্কার করতে শুরু করে যে পরিবারে তার অবস্থান তার মা মারা যাওয়ার সাথে সাথে কত দুরে চলে গিয়ে । প্রথম প্রথম এটা মেনে নিতে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সব বুঝতে শেখে ও । সব কিছু মেনে নেয় ।

নতুন মায়ের সব কটাক্ষ সব অত্যাচারের কোন প্রতিবাদ আর করে নি । মিলি যখন ইন্টার পাশ করে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে তার বাবা বলল যে আর তার পড়ানোর ক্ষমতা নেই । আসলে কথাটা ছিল তার নতুন মায়ের । তিনি চাচ্ছেন না মিলিকে আর পড়াতে । মিলি কোন কথাই আর বলতে পারে নি ।

দরজা বন্ধ করে কেবল কেঁদেছিল । তারপর হঠাত্‍ করেই আবীরের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যায় । কোন অনুষ্ঠান নাই কোন গান বাজনা নাই । কয়েকজন লোক এল খাতায় সই করলো । ব্যস ।

আর কিছু না । বিয়ের দিনই আবীর মিলিকে বাসায় নিয়ে আসে । মিলি যখন প্রথম আবীরের ঘরে ঢোকে একটু অবাক হয়েছিল । এবাড়িতে যে একটা বিয়ে হয়েছে এটা দেখে মনেই হচ্ছিল না । কেমন যেন একটা নিরবতা চারিদিকে ।

এমন কি বাসর ঘরও সাজানো হয় নি । মিলি তবুও ঘরে অপেক্ষা করছিল আবীরের জন্য । এমন একটা দিনের জন্য প্রত্যেক মেয়েই অপেক্ষা করে থাকে । বাসর রাতে স্বামী আসবে তার সাথে কথা বলবে সামনের দিনের জন্য স্বপ্ন দেখাবে । কিন্তু মিলির জীবনে সেই স্বপ্ন আর সত্যি হল না ।

সারা রাতে আবীর এলই না রুমে । অপেক্ষা করতে করতে মিলি কখন ঘুমিয়ে পড়ল নিজেই বলতে পারে । সকাল বেলা যখন মিলির ঘুম ভাঙ্গল তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে । রুম থেকে বের হয়ে দেখলো আবীর ডায়নিং টেবিলে নাস্তা করছে । পরনে ফরমাল পোষাক ! মিলি অবাক না হয়ে পারলই না ।

মিলি ভাবতেই পারে নি যে কেউ তার বিয়ের পর দিন সকাল বেলা অফিস যেতে পারে ! আবীর চুপচাপ নাস্তা শেষ করলো । এমন একটা ভাব যেন মিলি এখানে উপস্থিতই নেই । কেবল যাওয়ার সময় বলল -একা থাকতে পারবে ? -জি ? জি পারবো । বিয়ের পর আবীর এই প্রথম মিলির সাথে কথা বলল । -ফ্রিজে সব কিছু রাখা আছে ।

ইচ্ছা হলে রান্না কর । আবীর দরজা খুলল যাওয়ার জন্য । -আপনি আসবেন দুপুরে খেতে ? -না । আর আমি ছাড়া যেই আসুক দরজা খুলবে না । ঠিক আছে ? -জি আচ্ছা ! তারপর থেকেই আবীরের সাথে মিলির কেমন সম্পর্ক হয়ে উঠেছে ।

ঠিক কাছেরও আবার দুরের ও । আবীর মিলির সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা কথাও বলেও না । মিলি কিছু জানতেও চায় না । কিন্তু মিলি আবীরের দিকে কেমন একটা আকর্ষন অনুভব করে । আবীর যেমন ওর কাছ থেকে একটা দুরুত্ব বজায় রেখে চলে তেমনি মিলি আবীরের দিকে ততটাই আকর্ষীত হয় ।

ওর আশে পাশে থাকতে ইচ্ছা করে সব সময় । এক সময় আবিষ্কার করে যে আবীরকে সে অসম্ভব ভালবাসে । আবীর ওকে ভালবাসুক বা না বাসুক কেবল ও বাসে । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । আবীর সব সময়ই কেমন মুখটা গম্ভীর করে থাকে ।

কখনও হাসে না । মিলির খুব জানতে ইচ্ছা করে আবীর কেন এমন করে থাকে ? নিশ্চই বড় কোন কারন আছে । থাকুক ! মিলি ঠিক করে রেখেছে ও কখনও আবীরের অতীতের কথা জিজ্ঞেস করবে না । মিলির অতীত নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই । কেবল আল্লাহর দোয়া করে যেন সামনের দিন গুলো ভাল হয় ।

কিন্তু এতো দিনে মিলির দোয়া পুরন হয় নি । তবে মনে হচ্ছে এবার হয়তো পুরন হবে । সত্যি হবে তো ! মিলি আনন্দ নিয়েই ঘরের কাজ করছিল । তার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে আবীরের সাথে সে সত্যি কোথাও যাচ্ছে !! এসব কথাই ভাবছিল ঠিক তখনই আবীরের ফোন এসে হাজির । মিলির বুকটা একটু যেন কেঁপে উঠল ।

আবীর কখনও অসময়ে ফোন করে না । আজ কেন করলো ? মিলির মনে হল আজ মনে হয় আর যাওয়া হবে না । মিলির কেবলই মনে হল আবীর এখনই বলবে আজকে যাওয়া হচ্ছে না । মিলি খানিকটা কাঁপা হাতে ফোন টা রিসিভ করল । কিন্তু কোন কথা বলল না ।

আবীরই আগে কথা বলল -চুপ কেন ? -না এমনি ! মিলি কেবল ভয়ই পাচ্ছে যে আবীর এখনই বলবে যে আজ এদের যাওয়া হবে না । কেন যেন আবীরও কিছুক্ষন চুপ করে রইল । আবীর কে চুপ করে থাকতে দেখে মিলি নিজেই বলল -কিছু বলবেন ? -না কিছু না । -তাহলে ফোন দিলেন যে ? জরুরী কিছু ছিল বলার ! -আসলে ........ তোমার গোছগাছ হয়ে গেছে ? মিলির জানে যেন একটু পানি এল । যাক এখনও পর্যন্ত সব কিছু ঠিক আছে ! মিলি বলল -হুম ! হয়ে গেছে ! আ|পনি কখন আসবেন ? -আসলে আমি..... মানে তুমি ঐ নীল রংয়ের সেলোয়ার কামিজটা পর ! ওটাতে তোমাকে সুন্দর লাগে ! মিলির সত্যি এবার খুব বেশি অবাক হল ! অনেক বেশি ! আবীর তাহলে ওকে লক্ষ্য করেছে এতোদিন ? কিন্তু বলে নি কোন দিন !! কেন বলে নি ? একটু মুখ ফুটে বললে কি এমন হত !! মিলির খেয়াল করলো এই সামান্য কথাতেই ওর চোখে পানি চলে এসেছে ! আবীর আবার বলল -কি হল ? কোন সমস্যা ? -না না ! কোন সমস্যা না ।

আপনি কখন আসবেন বলেন আমি রেডি হয়ে থাকব !! -আচ্ছা । আবীর ফোন রেখে দেয় ! মিলি কিছুক্ষন কেবল চুপ করে বসেই থাকে ! আনন্দে ওর চোখ দিয়া পানি পরেই যাচ্ছে । ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মিলির আবীরের জন্য একটা আকাশী রংয়ের সার্ট রের করে বিছানার উপর রাখে । আজ যখন ও আসবে ও বলবে যে এই শার্ট টা পরতে । প্রথমে হয়তো আবীর একটু অবাক হবে এই শার্ট দেখে ! এই শার্ট টা আবীর কিনে নি মিলি আবীরের জন্য কিনেছিল কিন্তু কোন দিন দিতে পারে নি ।

আজ দিবে ! কি হবে ? একটা রাগ করবে ? অথবা বলবে এসবের কি দরকার ছিল ? কিন্তু মিলি আজ বলবেই ! আজ কেবল আবীর একবার আসুক ! মিলি আগ্রহ নিয়ে আপেক্ষা করতে থাকে !!! কত কিছু বলার আছে !! কত কল্প কথা সাজানো আছে মনের ভিতরে । সব বলবে !! আসতে আসতে সব বলবে !!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.