আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়ের কোলে ঘুমানো ক্যম্পাস(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।

আমি খুবই সাধারণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন চবি। পাহাড়, গাছপালা, বনবনানী ঘেরা এক সবুজ ক্যম্পাস, যেখানে নীল আকাশ মিতালী করেছে সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে। বানিজ্যক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে পাহাড়ি ও সমতল ভূমির উপর অবস্থিত।

এ ক্যম্পাস যেন নানা রুপের সমাহার, পাহাড়,ঝর্ণা,লেক,পাখি,হরিণ সহ জীব বৈচিত্র এ ক্যম্পাসে এনে দিয়েছে ভিন্ন এক মাধুর্যতা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার চবি ক্যম্পাস প্রথম দর্শনেই শিক্ষার্থী,অভিবাবক,দর্শনার্থী সকলের নজর কাড়ে। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলঘেষে অবস্থিত নয়নাভিরাম এ ক্যম্পাস অঘোষিত পর্যটন স্পটেপরিনত হয়েছে। কর্মব্যস্ত সময়ের ক্লান্তি, গ্লানি দুর করতে এ ক্যম্পাসে পাড়ি জমায় অনেক ভ্রমন পিপাসু মানুষ। প্রতিদিন নানা শ্রেনীর পর্যটক চবি'তে ঘুরতে আসেন।

সত্যিই রুপসী ক্যম্পাসের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী সবার মন কেড়ে নেয়। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, ছাত্র শিবির নিয়ন্ত্রিত এই ক্যম্পাসে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির মতই। যদিও বাম সংগঠনগুলো বলে বেড়ায় মৌলবাদের থাবায় হারিয়েগেছে তারুন্য, বাস্তবতা ক্যম্পাসে অবস্হানরতরাই ভালো বলতে পারেন। যে ক্যম্পাসে সবাই ঘুরে বেড়ায় আপন মনে। সময় পেলে দেখে আসুন পাহাড়ের কোলে ঘুমানো ক্যম্পাসটিকে।

আসুন ছবিতে দেখে নিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোলোভা কিছু স্পট.... প্রধান গেইট: চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি রোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর সড়কের শুরুতে ২০০৭ এ দৃষ্টিনন্দন গেইটটি নির্মিত হয়েছে। গেইটটি অনন্য স্হাপত্যশৈলিতে নির্মিত হওয়ায় অনেকে তা দেখতে ছুটে আসেন চবি'তে। এই গেইটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার নির্দেশ করতে সহায়ক। কাটা পাহাড়ের গিরিপথ: গাড়ি বা ট্রেন থেকে নেমে গেইট দিয়ে ঢুকে গোল চত্বর পেরিয়ে দু'পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সোজা যে পথটি ক্যম্পাসের প্রানকেন্দ্রে চলে গেছে তা কাটা পাহাড়ের গিরিপথ নামে পরিচিত। এই গিরিপথ চবি'কে দেশের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈশিষ্টে ও সৌন্দর্যে আলাদা রূপ দান করেছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: শহীদ মিনারটি ক্যম্পাসের প্রাণকেন্দ্রে , কাটা পাহাড়ের রাস্তার মাথায় অবস্থিত। মহান মাতৃভাষার জন্য জীবনদানকারী ও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানীদের বর্বরতায় যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মরণে নির্মিত হয় শহীদ মিনারটি। মিনার চত্বরের মাঝখানে একটি ছোট কুয়া রয়েছে। কলা অনুষদ ভবন: ঐতিহ্যবাহী কলা ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম একাডেমিক ভবন। এর পিছনের অংশে পাহাড়।

আর সামনের অংশে রয়েছে লেক, যদিও এটি বর্তমানে লেকটি ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, আইটি ভবন, চবি মিউজিয়াম: বৃহত্তর চট্টগ্রামে অন্যতম সেরা লাইব্রেরী হিসেবে স্বীকৃত চবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী। দেশী-বিদেশী দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ বই, সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা,রেফারেন্স ও পান্ডুলিপির অনন্য সংগ্রহ রয়েছে এ লাইব্রেরীতে। সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার দেশী-বিদেশী বই আছে। ছাত্রছাত্রীদের ইনফরমেশন টেকনোলজিতে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ২০০২ সালে আইটি ভবন নির্মান করা হয়।

আর লাইব্রেরীর বামে চবি মিউজিয়াম, ২০৭৬টি পুরাকৃতি ও প্রাচীন নিদর্শন সংগৃহিত আছে। ১৯৭৩ সালে মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। কলা ভবনের সামনেই মুলত সেন্ট্রাল লাইব্রেরী,আইটি ভবন,ও মিউজিয়াম এর অবস্থান। ফরেষ্টি এরিয়া: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকটা দৃষ্টিনন্দন করেছে ফরেষ্টি এরিয়া । ইন্সটিটিউট অফ ফরেষ্টি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের উদ্যোগে করা সবুজ বনায়ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসকে একটি আকর্ষনীয় স্পটে পরিণত করেছে।

৫০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত ফরেষ্টি এরিয়া সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে রয়েছে হেলিপ্যড, লেক, সুইমিংপুল, মেমোরিয়াল গার্ডেন ইত্যাদি। চবি ঝুপড়ি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের প্রান কেন্দ্র হলো ঝুপড়ি। না ঝুপড়ি, ঝোপ-ঝাপের মত কিছু নয়। এটি ছোট ছোট টি স্টল ঘেরা ইউ আকৃতির একটি স্পট।

ক্লাস শেষে একঘেয়েমি দুর করতে শিক্ষার্থীরা এখানে ভিড় জমায়। গানে-গানে কোলাহলে আনন্দ বিনোদনে সময় উপভোগ করেন ছাত্রছাত্রীরা। হৈ হুল্লোড়, হই চই লেগেই থাকে ঝুপড়িতে। আর কপোত-কপোতীরা হারিয়ে যায় আপন মনে। বিশ্ববিদ্যালয় ষ্টেশন ও শাটল ট্রেন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষন শাটল ট্রেন,শাটল ট্রেনে করে প্রতিদিন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ক্যম্পাসে যাতায়ত করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ট্রেন সার্ভিস থাকায় অনেকে চবি'কে শাটল ট্রেনের ক্যম্পাস বলে থাকেন। তারুণ্যর উচ্ছলতায় শাটল ট্রেন সব সময় প্রাণবন্ত থাকে। নেচে, গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে ছাত্রছাত্রীরা শাটল ট্রেনর জার্নি উপভোগ করে। চট্টগ্রাম শহরের বটতল ষ্টেশন থেকে শাটল ট্রেন ছেড়ে যায়। এছাড়া আরো দেখতে পাবেন প্রাকৃতিক ঝর্ণা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে।

কলা ভবনের পেছনে ঝর্ণাটি অবস্হিত। ঝর্ণাটি দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই ক্যম্পাসে পাড়ি জমায়। এ ছাড়া আরো দেখতে পাবেন চাকসু ভবন, কমার্স ভবন, সমাজ বিজ্ঞান ভবন, আলাওল হল,এ.এফ. রহমান হল,শাহজালাল হল,সোহরাওয়ার্দী হল,শাহ আমানত হল,শহীদ আবদুর রব হল,শামসুন্নাহার হল,প্রীতিলতা হল,দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সহ চোখ জুড়ানো অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাই সময় পেলে ঘুরে আসুন চট্টগ্রাম বাসীর গর্বের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।