আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শূণ্য থেকে

একটা ঘরে ছয় জন তরুন তরুনী বসে আছে কিন্তু তাদের দেখে মনে হচ্ছে কেউ কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে না । ঘরের দেয়াল গুলো স্থির নদীর মতন । দেয়াল গুলো দেখতে স্বচ্ছ কাঁচের মতন । আজ অনেক বছর পর ছয় জন তরুন তরুনীর মুখে এক আকাশ আনন্দ ঝলমল করছে ! যেন অযুত নিযুত বছর পর কোনো আনন্দময় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । এদের মধ্যে চোখে কাজল দেওয়া মেয়েটি একটি ছেলের কাছে গিয়ে বলল- কাছে আসো, আমি ঠিক করেছি এখন তোমাকে একটি চুমু খাবো ।

মেয়েটি নিজেই কাছে এগিয়ে এলো এবং মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গালে টাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল ছেলেটি । সাথে সাথে মেয়েটির চোখে পানি এসে পড়ল । ছেলেটির খুব খারাপ লাগছে সে কেন চুমুর বদলে মেয়েটির গালে চড় বসিয়ে দিল । হাতের দাগ বসে গেছে । মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল- তোমাকে চুমু দেওয়ার আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না- আমার খুব মনে হয়েছিল- চুমু দিকে তুমি খুশি হবে- তোমার খুব আনন্দ হবে ।

ছেলেটি বলল- বোকা, তুমি বুঝতে পারছো না, আমরা ভয়াবহ এক সময়ের মধ্যে আছি । ৩০১৩ সালে পৃথিবী নামক গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যায় । ধ্বংস হতে সময় লেগেছিল মাত্র সতের দিন । চারশো আট ঘন্টা । শুধু মাত্র সূর্য এবং চাঁদ তার কাজ করে যাচ্ছে ।

মানুষ গুহা থেকে এসে কত সময় কত কষ্ট করে তিলে তিলে গড়েছিল এই পৃথিবী । কিন্তু কি আশ্চর্য বিশাল বিশাল দালান গুলো মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ল । সমুদ্র কি ভয়ানক ভাবে ক্ষেপে উঠল । সব শহর বিলীন হয়ে গেল সমুদ্রের তলে । পৃথিবী থেকে মানব জাতি বিলুপ্ত হলো ! মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব ।

অমরত্ব নিয়ে মানুষ হাজার বছর ধরে গবেষনা করছে । এই গবেষানা করতে করতে এক দল বিজ্ঞানী অমরত্বের সন্ধান পেয়ে যান । তারা মাটির অনেক গভীরে তাদের জন্য নতুন এক আশ্রয় তৈ্রি করেন । সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু ৫০ জন অমর বিজ্ঞানী টিকে গেলেন । মাটির গভীরে তারা নিজেদের সুবিধার জন্য কিছু শক্তিশালী রোবট বানালেন ।

অমর বিজ্ঞানীর মধ্যে নারী পুরুষ উভয়ই আছেন । মানুষ অমরত্ব পেয়ে গেলে- তখন আর তারা শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেন না । বংশ বিস্তার করতে পারেন না । একঘেয়ে এবং প্রচন্ড আনন্দহীন জীবন । এই ৫০ জন শতাব্দীর সেরা বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী ছয় জন তরুন তরুনী কে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবী থেকে সংগ্রহ করে রাখেন ভবিষতের কথা ভেবে ।

অমর বিজ্ঞানীদের ইচ্ছা এই ছয় জন তরুন তরুনী'ই হবে আগামী দিনের ভবিষৎ । তিনটা রোবট একটা টানেলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিল । অমর বিজ্ঞানীরা তার কিছু জানল না । ৫০ জন অমর বিজ্ঞানী থেকে ১৩ জন আত্মহত্যা করেছে । অমরত্ব পাওয়ার পর তাদের জীবন আনন্দহীন হয়ে পরে- তাই তারা মৃত্যুর পথ বেছে নেয় ।

বাকি ৩৭ জন অমর বিজ্ঞানী- তাদের অবস্থাও ভালো নয় । তারা কেউ কেউ দিনের পর দিনের ঘুমায় । কেউ বই পড়ে । কেউ ভবিষৎ পৃথিবী নিয়ে ভাবেন । এই ৩৭ জন অমর বিজ্ঞানীর দেখা শোনা করে বুদ্ধিমান প্রথম সারির ১৮ টা রোবট ।

এরা WQ- 369 শ্রেণীর রোবট । WQ- 369 শ্রেণীর রোবট'রা প্রায় মানুষের কাছাকাছি । শুধু তারা- কাঁদতে পারে না । হাসতে পারে না । বাকি সব কর্মকান্ড মানুষের মতন ।

রোবট গুলো সিদ্ধান্ত নেয়- তারা অমর বিজ্ঞানী এবং ছয় জন তরুন তরুনীকে মেরে ফেলবে- অথবা তাদের কাঁচের ঘরে বন্দী করে রাখবে । এবং তারা চায় যন্ত্রই পৃথিবীতে রাজত্ব করুক । কোনো মানব মানবী নয় । মেয়েটির নাম হিমি । হিমি গালে হাত দিয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ।

একেক সময় একটা কৃ্ত্রিম দৃশ্য চোখে পড়ছে । থাপ্পড়ের দাগ গালে বসে আছে । হিমি জানে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় । এবং কিছু অমর মানুষ তাদের একটা ঘরে বন্দী করে রাখে । এরপর থেকে হয়তো একশো বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু হিমির মতন অন্য পাঁচ জন তরুন তরুনীর বয়সও বাড়েনি ।

তাদের রক্তের সাথে একধরনের তরল জিনিস মিশিয়ে দেওয়ার ফলে তাদের ক্ষুধাও পায় না । অমর মানুষেরা তাদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছে- তা তারা আজও জানে না । মাঝে মাঝে কিছু বুদ্ধিমান যন্ত্র'রা এসে তাদের সাথে রসিকতা করে । গল্প বলে, রহস্যময় ধাঁধাঁ জিজ্ঞেস করে । এই ছয় জন তরুন তরুনী যন্ত্রদের ইচ্ছা মতন চলাচল করতে হয় ।

সাধারন কর্মী রোবট গুলো- সব সময় স্কীনে চোখ রাখে । কোনো কারনে তাদের সন্দেহ হলে- শাস্তি স্বরুপ তরুন তরুনীকে আলাদা আলাদা অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখে । যা সহ্য করা মানুষের জন্য ভয়ানক ব্যাপার । গুল্লু নামের একটি ছেলেকে হিমির অনেক ভালো লাগে । গুল্লু ছেলেটা তাকে একটা চড় দিল ।

তারপরও হিমির বারবার তার কাছে যেতে ইচ্ছা করে । ছেলেটা অনেক বুদ্ধিমান। ছেলেটা হিমিকে বলেছে- WQ- 369 রোবট গুলোকে ধ্বংস করতে পারলেই- পৃথিবী আবার নতুন করে আমরা প্রানের বিকাশ ঘটাবো । সময় মধ্যদুপুর । যদিও মাটির নীচে সময় বলে কিছু নেই ।

এই ঘরটাতে গাঢ় লাল আলো । অমর বিজ্ঞানীদের সামনে বসে আছে WQ- 369 রোবট । ইদানিং অমর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছে- এই সব যন্ত্র আবিস্কার করে তারা ভুল করেছে । হয়তো একদিন এই যন্ত্র গুলো তাদের মেরে ফেলবে । এবং তারাই ভবিষৎ পৃথিবী পরিচালনা করবে ।

কিন্তু মানুষরা কখনই যন্ত্রদের রাজত্ব মেনে নিতে পারে না । মহান বিজ্ঞানীরা WQ- 369 যন্ত্রকে বলল- আমরা চাই, পৃথিবীতে আবার মানব জাতি বাসা বাঁধুক । আমাদের কাছে ছয় জন তরুন তরুনী আছে- তারা হবে ভবিষৎ পৃথিবীর কর্ণধার । পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় আমরা অনেক কষ্টে তাদের বাঁচিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছি - আমাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়েই । তাদেরকে পৃথিবীতে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং আমরা জানি তারা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বিপ্লব ঘটাবে ।

এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে- আবার পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটবে । WQ- 369 রোবট'রা রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল- না। আমরা পৃথিবী রাজত্ব করবো এবং তোমরা মানুষরা আমাদের কথা মতন চলবে । আমাদের শক্তি তোমাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । অমর পদার্থ বিজ্ঞানী জোসেফ WQ- 369 রোবটের কথা শুনে একটু হাসল ।

হেসে বললেন- আমি জানতাম তোমরা এক সময় বিদ্রোহ করবে । তাই সে ব্যবস্থা আমি আগেই করে রেখেছিলাম । WQ- 369 রোবটদের মুখে চিন্তার ছায়া পড়ল । তারা তাদের বন্দুকের মতন অস্ত্র দিয়ে বেঁচে থাকা ৩৭ জন বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলল । 'লাল আলো' ঘরে যাওয়ার আগে অমর বিজ্ঞানী জোসেফ WQ- 369 রোবটদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছয় জন তরুন তরুনীর হাতে তার তৈ্রি রেডিয়েশন দিয়ে দেয় ।

সেই সাথে মাটির নীচে আস্থানা ধ্বংস করার জন্য একটা রিমোট । এই রেডিয়েশন থেকে এক ধরনের তীব্র হলুদ আলো বের হয়- এই আলো একটা WQ- 369 রোবটকে মেরে ফেলতে তিন সেকেন্ড সময় নেয় । ছয় জন তরুন তরুনী বীরের মতন 'লাল আলো' ঘরে গিয়ে WQ- 369 রোবট কিছু বোঝার আগে তাদের মুহূর্তের মধ্যে নিঃশেষ করে দেয় । এবং তারা একটি স্প্রেস বারে উঠে রিমোট টিপে দেয়- মাটির নীচে আস্থানা মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায় । হিমি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে গুল্লুকে জড়িয়ে ধরল ।

গুল্লু এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে- যে গালে থাপ্পড় দিয়ে ছিল সে গালে চুমু খেল । হিমির চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো । বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান। নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’ জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।