আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জবানবন্দি

ছাইদানিতে ছাইপাস রেখে তাকিয়ে দেখি আমার বাল্য বন্ধু জাফর- যে চলে গেছে ওপারে মাত্র পনেরটি বসন্ত পাড় করে সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে সকল খেলা ছিন্ন করে বছর দশেক আগে। কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। কি দেখছিস এমন করে? চিনতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি? আমি তোর বন্ধু আসাদ রুবেল তোর প্রিয় সেই আসাদ রুবেল, যার সাথে তোর সিংহভাগ সময় কেটেছে যে সিগারেটের গন্ধ পেলে নাক চেপে পাস কাটিয়ে যেত। এখন সামাজিকতা রক্ষার নামে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রকিতিকে নষ্ট করে বিষাক্ত ধুয়ায়। অবাক হচ্ছিস বুঝি! তবে তুই চলে যা, এই কটি বসেন্তে তোর সঙ্গী আসাদ রুবেল অনেক বেশি বদলে গেছে।

তুই চিনতে যাকে- ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পরে থাকতো তানভীরের সাথে পাল্লা দিয়ে পরীক্ষায় ভাল কিছু অর্জনের জন্য। সে এখন, লিয়াজো করে শিক্ষকের সাথে গোটা কয়েক প্রশ্ন শিখে পরীক্ষার পূর্ব রাতে পড়ালেখা করে ফার্স্ট ক্লাস নিশ্চিত করতে জানে। সে এখন, দিনের পর দিন, রাতের পর চাটতে জানে নেতাদের পা হাত। সে এখন, ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলের ব্যবসা করে সমাজটাকে বদলে দেবার শপথ করে। সন্দেহের হাসি হাসছিস তুই! এই সেই আসাদ রুবেল যাকে তুই জানতি খেলার মাঠে দুর্দান্ত এক খেলোয়ার হিসেবে, যে মেয়েদের নাম শুনলেয় লজ্বাবতী লতার মতো গুটিয়ে যেত।

সে এখন, নারীর উলঙ্গ দেহে বিরামহীন খেলে যেতে পারে সহস্র নারীর উপর ভাঙা গড়ার খেলা। ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন! আমার আরো কিছু কথা শুন, তুই যে আমাকে চিনতে যে কিনা পকেটের দশটি টাকাই দান করে দিয়েছিল কোনো এক অভাবীকে। সে এখন, ভিক্ষুকের কাছ থেকে চাঁদার নামে ছিনতাই করতে পারে অবলীলায়। ওভাবে তাকাসনে জাফর! কত দিনের জমানো কথা তোকে বলা হয়্নি। যে আমাকে জানতিস তুই, মিছিল মিটিং ভয় পায় বলে সেই আমি এখন, জয় বাংলা বলে স্লোগান দিতে জানি মিছিলে।

স্লোগান দিতে জানি গলা ফাটিয়ে। দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে জানি জানি প্রতিপক্ষকে দিতে ভাগিয়ে। এই আমি আবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে পিকেটিং করতে পারি হরতালে, দিতে পারি গাড়ি পুড়িয়ে। বহুরূপী আমিই পারি, নারায়ে তাকবীর ধ্বনিতে পুলিশকে লাথি মারতে পারি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাদ করতে। আমিই অপরাধীদের বাচাতে, পারি বিচারক হত্যা করতে।

এত তারাহুরা করছিস কেন জাফর? আমার জবানবন্ন্ধী শেষ করতে দিবিনা? তুই যে বন্ধুটিকে জানতে কোমল পানীয় পান করলে বমি করে দেয়। সেই বন্ধুটি এখন, অবলীলায় রাতের আড্ডা জমিয়ে রাখতে পারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী মদের স্বাদ পান করে। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা? পলক ফেলে তাকিয়ে দেখি পুড়ে যাওয়া সিগারেটের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ছাইদানী থেকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।