আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কায়দায় থাকলে দফাদার আর বেকায়দায় পড়লেই মাফ কর!!!

রাসেল কাইয়ুম বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যা ইচ্ছে তাই করছে। যেন কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নেই তাদের। তারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সংবিধান থেকে শুরু করে সকল আইন পরিবর্তন করছে আঙ্গুলের ইশারায়। একটা মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক ডেকেই যে কোন বিষয় ফায়সালা করা হচ্ছে। আর কোন বিষয় যদি এই মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে সমাপ্ত না হয় তবে একটি লিখিত ইশতেহার কোন একটি বিচারপতিকে দিয়ে পাঠ করিয়ে সেই অপকর্মের বৈধতা নেওয়া হয়।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অন্যায়কে ন্যায় আর ন্যায় কে অন্যায় করে আসছে এই সরকার। মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা আছে কি না তা বিবেচনা করার কোন সময় যে নেই তাদের। তারা এখন ব্যাস্ত নিজের আখের গোছাতে। আওয়ামীলীগের লুটপাটের এই মহোৎসব দেখে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকী বলেছিলেন, আমি তো মারা গেলে কিছু নিয়ে যেতে পারবো না তবে ওরা কি নিয়ে যেতে পারবে? যদি নাই নিতে পারে কিছু, তবে এই ¯ল্প সময়ের জন্য মানুষের কাছে থেকে এতো মেরে কেটে নিয়ে কি হবে? অনেকের ধারনা বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে ক্ষমতাশীন দলের পাতি নেতা পর্যন্ত সবাই এদেশের মানুষকে বোকা ভেবে তাদের সাথে প্রতারনায় নেমেছে। তারা বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস ভুলে গেছে।

তারা জানে না এই জাতি মাথা নত না করার জাতি। এই বাঙ্গালীরাই ভাষা সৈনিক গোলাম আজমের হাত ধরে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। শুধু তাই নয় আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। এই বাঙ্গালী জাতি কোমল স্বভাবের হলেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় গর্জে উঠতে পারে এমন হাজারো নজির আছে আমাদের। ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতির পিতা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী পদক্ষেপে ৩০লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

এদেশের মানুষের ইতিহাস যেখানে রক্ত দিয়ে রচিত সেখানে এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে খেলে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি না করাটাই শ্রেয়। এই কয়েকদিন আগের কথা, ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা যাচাই না করে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল শিক্ষাঙ্গনে। মন্ত্রী-আমলা আর পাতি নেতাদের আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা দেশের সর্ববৃহৎ এই শিক্ষাঙ্গনের আসনগুলি লুটেপুটে খাওয়ার জন্য এছাড়া আর যে কোন উপায় ছিলনা। দেশের মেধাবী ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসলো, ওরা চায় নিজেরা পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার বলে পড়বে মেডিকেলে। কয়েকদিন কোমলমতি এই শিক্ষার্থদের উপর সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত দাবী মানতে বাধ্য হয় সরকার।

নিজেদের স্বার্থসিদ্ধ আর হলোনা। আমাদের অতি পরিচিত একটি ঘটনা আড়িয়াল বিল। ঔ অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের পেটে লাথি দিয়ে বাবার নামকে বিশ্বমাঝে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলেন আমাদের দেশনেত্রী। লক্ষ্য ছিল আড়িয়াল বিল নিশ্চিহ্ন করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা। খবর পেয়ে ঔ অঞ্চলের সাধারন মানুষ মিছিল-সমাবেশ আর মানব বন্ধন করেছে।

মানববন্ধনের কিছু কিছু ব্যানার পড়ে অশ্র“ শিক্ত হয়েছে অনেকেই। আড়িয়াল বিলকে যারা মায়ের স্থানে বসিয়েছে তাদের কাছ থেকে যে এই বিলকে ছিনিয়ে নেওয়া যাবেনা তা বুঝতে পারেনি সরকার। যথারীতি সরকারের শেষ সম্বল, পেটুয়া পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনতার আন্দোলনের কাছে দাঁড়াতে পারেনি সরকার। হারের লজ্জা মাথায় নিয়ে স্বপরিবারে ফিরতে হয়েছে সেখান থেকে।

জনতার আন্দোলনের কাছে নতস্বীকার করে বার বার ফিরলেও শিক্ষা হয়না সংশ্লিষ্টদের। এই কয়েকনি আগের কথা, পাবনার পুষ্পপাড়া কামিল মাদরাসার উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছিল বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলের। ঐতিহ্যবাহী ঐ মাহফিলে প্রতিবারই লাখো মানুষের ঢল নামে। আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ সপরিবারে ছুটে আসে ঐ মাহফিলে। মাহফিলে ওয়াজিনদের পাশাপাশি অতিথি ছিলেন পাবনা উপজেলার চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা আ'লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন এবং জেলা আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স।

এশার নামাজ পর পুরো প্যান্ডেল লোকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে প্যান্ডেলের চার পার্শ্বে কয়েক হাজার লোক দাঁড়িয়ে যায়। ঠিক সেই মহূর্তে মঞ্চে আসে উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। বক্তব্য শুরু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘তার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং পাবনার যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুস সুবাহানকে গ্রেফতার করা হবে। ’’ একথা শোনা মাত্র তার কথা প্রত্যাখ্যান করে তাকে ধিক্কার দিতে দিতে দলে দলে লোকজন মাহফিল মাঠ ত্যাগ করতে শুরু করে।

তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের বসার জন্য বার বার অনুরোধ করলেও কেউ তার কথায় কর্ণপাত করেনি। সারারাত বিভিন্ন আলেমের বক্তৃতা শেষে ফজরের নামাজের পর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ ঘটনাতেই প্রায় ইতি ঘটতে থাকে মাহফিলের। কোন উপায় গতি না পেয়ে দ্রুত বক্তব্য শেষ করেন তিনি। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে মাইক নেন পাবনা সদর এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। তিনি সবাইকে শান্ত হয়ে মাহফিলে ফিরে আসতে অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, মোশাররফ ভাইয়ের এভাবে বলা মোটেই ঠিক হয়নি। পাবনার সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহানকে যুদ্ধাপরাধী বলা হলেও তিনি প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী নয়। শেখ হাসিনা ম্যাডাম আমাকে বার বার বলেছেন, আমরা কেন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি না বা অভিযোগ দেইনা। আমি ম্যাডামকে বলেছি, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ শোনা যায় তার কোনো প্রমাণ নেই, তাই অভিযোগ বা মামলা দেয়া হয় না। বরং আমার দীর্ঘ জীবনে তাকে পাবনার অনেক উন্নয়ন করতে দেখেছি।

এরপর মোশাররফ নিজেই আবার মাইক নিয়ে জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন ‘‘আমার কথায় আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন’’। আমি হাতজোড় করে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। সহজ সরল মানুষ, ওরা বোঝেনা রাজনীতির মারপ্যাচ, ক্ষমা চাওয়া মাত্র ক্ষমা করে দেয় এই রাজনীতিবীদদের। এই মাত্র কদিন আগে পাবনা থেকে ঢাকা ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করে এই প্রবীন রাজনীতিককে। গ্রেফতারের পর তার নামে দেওয়া হয় যুদ্ধাপরাধের মামলা।

যারা এখন মিডিয়ার সামনে বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন তারাই কিন্তু দু’দিন আগে জনতার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন। হাইরে রাজনীতিবীদ! জনতার নেতা! কায়দায় থাকলে দফাদার আর বেকায়দায় পড়লেই মাফ কর!!! আমাদের মত সাধারণ মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের পোষা দালালকে দিয়ে একটি পত্র পাঠ করিয়ে চিরচেনা সেই তত্বাবধায়ক সরকার প্রথা ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হলো। সাবধান জনতা!! আন্দোলনের নামে মিছিল সমাবেশ করলেই কিন্তু লেলিয়ে দেওয়া হবে সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী! তবে অনেকেই মনে করেন সাধারন জনতা সরকারকে সংশোধনের সময় দিচ্ছে। নির্বাচনের সময় হলে ঠিকই আন্দোলেনর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন প্রথা। কারন এদেশের মানুষ যেমন নরম তেমন গরম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.