আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটি জীবন ও কাল্পনিক কথা বার্তা....

২ চড়ুই বন্ধু ঝন্টু আর মন্টু খাবারের সন্ধানে শহরে চলে এল.....ঝন্টু জায়গা করে নিল গুলশানের কোন এক আলিশান অট্টালিকার ছাদের কোনে.....আর মন্টু একটি কারখানার কোনায়...বেশ ভালই দিন কাটছিল তাদের.....একসময় ২জনই সংসার শুরু করে.....২জনেরই দুটো বাচ্ছা ছানা রয়েছে.....মাঝে মাঝে ২ বন্ধুর দেখা হয়....কুশল বিনিময় হয়....একদিন শীতের রাতে, মন্টু হটাত করে কেমন যেন উত্তাপ অনুভব করে....বউকে বলে, "কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গরম না?".....বউ বলে "আরে ধুর হয়ত গার্মেন্টেসের বয়লায়ের গরম পানি, ঘুমাও তো"....মন্টু ভাবে হয়ত তাই হবে....এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়ার চেস্টা করে....একটু পরে অসহনীয় গরমে মন্টু বের হয়ে আসে....এসে দেখে চারদিকে লাল আগুনের শিখা....দেখেই মন্টু ভয় পেয়ে যায়....দ্রুত বাসার দিকে ফিরে যেতে চায় কিন্তু একটা আগুনের শিখা তার পাখায় এসে লাগে...মুহুর্তেই পাখাটা ঝলসে যায় মন্টুর....একটু পরে আর কি হল কিছুই মনে নেই মন্টুর.....কিছুক্ষন পরে জ্ঞান ফিরে পায় মন্টু....তখন তার গায়ে বিন্দু মাত্র শক্তিও নেই উঠে দাড়াবার.....ডান পাশের পাখাটা পুরোই ঝলসে গেছে....আশে পাশে ২-১টা কাক ঘুরঘুর করছে....চারদিকে শুধু পোড়া গন্ধ....হটাত মনে পড়ল তার স্ত্রীর কথা, তার সন্তানের কথা....শরীরের সম্পূর্ন শক্তি দিয়ে উড়ে যাবার চেষ্টা করে বাসায়....গিয়ে প্রথমে নিজের বাসাটা খুজে পায় না....স্ত্রী, ছেলে মেয়ে দুটোর নাম ধরে চিতকার করে....কিন্তু সেই চিতকার প্রতিধ্বনি হয়েই ফিরে আসে.....হটাত আবিস্কার করে ছোট ধুমড়ে মুচড়ে থাকা একটা কিছু......ছুটে যায় ওইটার কাছে....ছুটে গিয়ে দেখে তার এতদিনের সাজানো বাসা পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে.....নিচে পড়ে আছে তার স্ত্রী কয়লা হয়ে যাওয়া দেহ....২সন্তানের দেহ....দেখে চিনতেই পারা যায় না.....বিলাপ করে কান্না করতে থাকে চড়ুইটি....কাকে যেন মনে মনে অভিশাপ দেয়..... আজকে ঝন্টুদের বাড়ির মালিকের কি যেন হয়েছে....সকাল থেকেই চিতকার চেচামেঁচির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে.....কান পেতে শুনার চেস্টা করে ঝন্টু.....শুনতে পায় তাদের গার্মেন্টেসে নাকি আগুন ধরেছে....মালিক কাদের যেন বলছে "আরে কয়েকটা টাকা দিয়ে দফারফা করে ফেললেই তো হয়ে যায়...এত কথার দরকার কি???আর আমি এসব ফালতু জিনিস দেখতে যেতে পারব না, আমার হাতে সময় নেই....আর ওই জায়গাটা এখন চরম নোংড়া হয়ে আছে....ঠিক হলে পরে আমি গিয়ে দেখে আসব"....জায়গার নাম শুনে আতকে উঠে ঝন্টু....এই এলাকাতেই তো তার বন্ধু মন্টু থাকে.....ওখানে যাবার জন্য পাগল হয়ে উঠে ঝন্টু...বাড়ি মালিকের গাড়িতে কৌশলে লুকিয়ে থাকে সে.....তারপর যখন পৌছায়....পৌছে দেখে এটাই তো মন্টুর বাসা....চারপাশ কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে ঝন্টুর.....উড়ে কারখানার কোনায় চলে যায় ঝন্টু....গিয়ে দেখে মন্টু তিনটি নিথর দেহ নিয়ে বসে আছে আর করুন সুরে বিলাপ করছে.....মন্টুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ঝন্টু....কিন্তু মন্টুর এখন কথা বলার শক্তি পর্যন্ত নেই....বন্ধুকে নিয়ে আসে নিজের বাসায় মন্টু... ঝন্টুর বাসায় এসে মন্টু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে....কিন্তু সারাদিন শুধু করুন সুরে বিলাপ করেই যায়....কিছুদিন পরে মন্টু মারা যায়.....আর ঝন্টু বাড়ি মালিকের কথাগুলো গোপনে শুনতে থাকে....শুনে বুজতে পারে মালিকের জন্য তার বন্ধুর আজ এই অবস্থা....সে চিন্তা করে কিভাবে বাড়ি মালিককে শাস্তি দিবে....একদিন দেখতে পায় বাড়ি মালিকের ৬ বছরের শিশুকন্যা ছাদে খেলতে এসেছে....দেখেই ঝন্টুর বুকে বন্ধু হারানোর ক্ষোভ জেগে উঠে....সে গিয়ে কন্যার চোখে ঠোকর মারে....মূহূর্তের মাঝেই চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে....বাড়ি মালিক ছুটে আসে....কন্যা নিয়ে ছুটে যায় হসপিটালে....একসময় কন্যাটি সুস্থ হয়ে ফিরে আসে...কিন্তু চোখে দেখতে পায় না....এর কিছুদিন পরে বাড়ির মালিকটি ছাদে উঠে, ঝন্টু তাকেও চোখে ঠোকর দেয়....সেও অন্ধ হয়ে যায়.....এরপর পর্যায়ক্রমে বাড়ি মালিকের স্ত্রীও অন্ধ হয়ে যায়....সবাই বলত, ওই বাড়িতে অভিশাপ আছে....কোন এক পাখি এসে ওদের চোখে ঠোকর দিয়ে চোখ নিয়ে যায়.....এই ভয়ে বাড়ির সকর চাকর একসময় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়....আত্মীয় স্বজনারাও আসা যাওয়া বাদ দিয়ে দেয়....ওইবাড়ির আশে পাশে লোকজনের আাসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়....বাড়িটি পরিনত হয় ভুতের বাড়িতে....আর এখানেই মারা যায় ওই বাড়ির মালিক, স্ত্রী ও তার মেয়ে.... এখনও ওই বাড়ির আশে পাশে লোকজনের আনাগোনা কম....কেউ বলে অভিসাপ, কেউ বলে কর্মফল....তবে সবাই বলে গার্মেন্টেসে নিহতদের আত্মাই নাকি এসব করেছে....কে জানে হয়ত এর মাঝে আছে মন্টুর আত্মা, মন্টুর স্ত্রীর আত্মা, মন্টুর ছেলেমেয়ের আত্মা..... উপরের ঘটনাটি শুধুমাত্র কল্পনা মাত্র.....লিখার সময় মনে হচ্ছিল "ইশ, বাস্তবে যদি সত্যি এমন হতো....তাহলে আর প্রতিদিন দেখতে হত না খবরের কাগজ ভর্তি লাশের ছবি"....কল্পনাতে আমি ওই লোকের করুন মৃত্যুর ইতিহাস লিখে ফেলেছি, কিন্তু বাস্তবে আমরা কত অসহায়....শুধু বসে বসে ওই লোকের মৃত্যু কামনা করা আর শাস্তি দাবি করা ছাড়া কিছুই করতে পারি না....আসুন ওদের প্রতিরোধ করি....অন্তত চড়ুই ছানাগুলোর জন্য হলেও আগামী কালকের মানব বন্ধনে সবাই যোগ দেই....আগামী কাল বিকেল ৩টায়, জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গন, শাহবাগ, ঢাকা.যেন আর কোনদিন খবরের কাগজের শিরোনাম হিসেবে না দেখতে হয় কোন অগ্নিকান্ড, কোন সড়ক দূর্ঘটনা, কোন ভবনধ্বস..... স্বাভাবিকভাবে বাচতে না পারি, অন্তত স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.