আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘেটুপুত্র কমলা

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা গতরাতে দেখলাম হুমায়ুন আহমেদের ”ঘেটুপুত্র কমলা’। চ্যানেল নাইনে প্রচার করার কারনে কিছু গুরুত্বপূর্ন অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বিশেষ করে শিশুদের কথা চিন্তা করে কিন্তু আমি চিত্রনাট্য পড়ে তা পুরন করে নিয়েছি। হুমায়ুন আহমেদ অবশ্য শিশুদের এই সিনেমা দেখতে নিষেধ করে গেছেন কিন্তু শিশুরা কি সে কথা মানবে ? কেন তিনি নিষেধ করেছিলেন তা মুভিটি না দেখলে বোঝা যাবে না কিন্তু আমার মতে শিশুদের জন্য নিষেধ করার মত তেমন কিছুই নেই যা থাকে পশ্চিমা মুভি গুলোতে। আসলে আমাদের সমাজের কিছু লোকের বাতিক আছে যে তারা হুজুগে মাতাল সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদ এই বাতিক গ্রস্থ লোকদের ভয়ে বা সমালোচনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই কথাটি বলেছিলেন। কারন তিনি নিজেও ভাল করে জানতেন শিশুরা তার এই কথা মানবে না অথবা একটি শিশুর প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে বা নির্যাতন করা হয়েছে তা যেন শিশুরা বুঝতে না পারে।

হুমায়ুন আহমেদের এই কথা শুনে তারা লাফালাফি শুরু করছে এই জন্য যে না জানি এর মধ্যে আরো কতকিছু অশ্লীলতা আছে । সিনেমাটির কাহিনী মুলত আজ থেকে দেড়শ বছর আগে হবিগন্জ জেলার জলসুখা গ্রামে ঘেটুগান নামে এ ধরনের নতুন সঙ্গীত ধারা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই গানের দলে মুল আকর্ষন ছিল ঘেটুপুত্র। ঘেটুপুত্র হল রুপবান কিশোর কিন্তু মেয়ের সাজে সজ্জিত। সেই গানের দলে নারীবেশী কিশোরের উপস্থিতির কারনে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই আশ্লীলতা ঢুকে পড়ে এই কারনে যে সমাজের বিত্তবানেরা ঘেটুপুত্রকে যৌনসঙ্গী হিসাবে পাওয়ার জন্য লালায়িত হতে থাকে।

হাওর অঞ্চলের শৌখিনদার মানুষ জলবন্দী সময়টাতে কিছুটা সময় হলেও ঘেটুপুত্র নিজের কাছে রাখবেন আমোদ ফুর্তি করার জন্য। এই বিষয়টা তৎকালীন সময়ে সামাজিকভাবে স্বীকৃতিও পায় এবং সেই সব শৌখিনদারের স্ত্রীগণ এই ঘেটুপুত্রকে নিজ সতীন মনে করে হিংসা করত। এই রকম ই একজন ঘেটুপুত্র কমলা । আসল নাম জহির। তার একটি বোন আছে।

তার বাবার অভাব অনটনের সংসার। কমলার মায়ের ভাষায় ’ভাতের অভাব বড় অভাবরে বাপজান। ’ এই ভাতের অভাব দুর করার জন্য ও টিনের ঘরে বাস করার জন্য জহিরের বাবা তার মেয়ে ও স্ত্রীকে বাসায় রেখে নিজপুত্রকে কমলা তথা ঘেটু সাজিয়ে গানের দল নিয়ে এক বিরাট বিত্তশালী চৌধুরী হেকমত সাহেবের বাসায় চলে আসেন তিন মাসের জন্য। অবশ্য চৌধুরী বাড়িতে জহিরকে সবসময় কমলা সাজিয়ে থাকতে হত না । যখন সে নাঁচ গান করত ও যখন চৌধরী সাহেবের রাতের প্রোয়োজন হত তখনই শুধু তাকে ঘেটুপুত্র সাজতে হত কিন্তু সেই হেকমত সাহেবের স্ত্রী কোনমতেই কমলাকে সহ্য করতে পারতেন না।

হেকমত সাহেবের স্ত্রী তার দাসী ময়নাকে টাকা ও সোনার বালা দিয়ে হাত করিয়ে ঘেটুপুত্র কমলাকে মারার ষড়যন্ত্র করেন। দাসী ময়না চেষ্টায় রত থাকেন কখন সেই সুযোগটা পাবেন। জহিরের শখ ছিল সুযোগ পেলেই সে ছাদের রেলিং এ উঠে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে হাটত। ময়না তা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক কমলাকে রেলিং থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেই কেল্লা ফতে। সে বিভিন্ন সুযোগ খুজতে থাকে কিন্তু চৌধুরী সাহেবের মেয়ে ও আর্টিস্টের কারনে পর পর কয়েকবার ব্যর্থ হয় এবং অবশেষে আর্টিস্টকে ভয় দেখিয়ে সে সফলকাম হয়।

কমলা তথা ঘেটুপুত্রের জীবনের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে। পুরো সিনেমাটিতে ঘেটুপুত্রের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে । তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া, ঘুমের মধ্যে মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যে মা তাকে নিতে এসেছে, বোনের সাথে ও আর্টিস্টের সাথেও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার দৃশ্য,আর্টিস্টের উপহার, চৌধুরী সাহেবের ছোট্ট মেয়ে ফূলরানীর ভালবাসা ও পরিশেষে কমলার বাবা সহ গোটা দলের সেই আবেগ ঘণিত বিদায় মর্মস্পর্শী বটে। ইসলাম যে আমোদ ফুর্তির জন্য এই রকম একটা কদাচার বা অশ্লীল প্রথাকে কখনোই সমর্থন করে না তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হবিহন্জের জলসুখা গ্রামে সত্যি ঘেটুগান ছিল কিনা তা বোধগম্য নয় এবং তা ইতিহাসের বিষয়।

সত্যি যদি তা থেকে থাকে তা অবশ্যই ছিল সঙ্গীতের নামে কদাচার ও অশ্লীলতা। হুমায়ুন আহমেদের কৃতিত্ব এখানে তিনি একটা হারিয়ে যাওয়া লোকাল সঙ্গীত ধারাকে পরিচিত করাতে পেরেছেন আমাদের সবার মাঝে এবং যা আমরা মোটামুটি কেউ ই জানতাম না । অনেকেই এই ছবিতে সমকামীতা প্রচারের অভিযোগ এনেছেন কিন্তু সমকামীতার কোন দৃশ্য দেখানো হয় নি কিন্তু কমলার চীৎকারের শব্দ শোনা গেছে যা ছিল হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। কমলা এখানে পরিস্থিতির স্বীকার । তার হাত পা ছিল বাঁধা ।

তাই কমলার করুন পরিণতির জন্য তৎকালীন সমাজ ই দায়ী।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.