আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৫ ( আইন-ই-আকবরি)

ভারতবর্ষের ইতিহাসে সর্ব সেরা মোগল সম্রাট ছিলেন জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। আকবর বাদশাহ ৩৯ বছর রাজত্ত করেন। আজকে আপনাদের বাদশাহ আকবরের শাসন আমলের কিছু আইন কানুন সম্পর্কে বলবো। আকবরের কোষাগারঃ যখন বাদশাহ তার রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া শুরু করলেন তখন আতমাদ খাঁ নামে একজন খোজা সব কাজের দেখাশোনা করতেন। যে যে মহলের রাজস্ব এক এক কোটি ডাম ছিল, সেসব মহলের উপর একজন করে তহশিলদার নিযুক্ত করা হয়েছিলো।

তহশিলদারের একজন করে কোষাধ্যক্ষ ছিল। বাদশাহ আকবরের আদেশ ছিল, প্রজা এবং কৃষক যে উপায় এই হোক রাজস্ব দিবে। তা মুদ্রা দিয়েও হতে পারে অথবা শস্য দিয়েও হতে পারে। রাজস্ব দিয়ে তারা রসীদ লিখে নিত। রত্নভান্দারঃ রত্নভাণ্ডার এর একজন কোষাধ্যক্ষ ছিল।

তার নাম ছিল টেপকচি। রত্নভাণ্ডার এ সবচাইতে বেশি ছিল চুনি। প্রায় বারো রকমের চুনি ছিল। যার মাঝে প্রথম শ্রেণীর চুনি ছিল প্রায় হাজার আশরাফই মুল্যের, দ্বিতীয় শ্রেণীরচুনি ছিল ২৫ আসরাফি মুল্য মানের এবং তৃতীয় শ্রেণীর চুনি ছিল তিনশ আসরাফি মুল্য মানের। এছারা সেখানে পান্না, হিরা, নীলা প্রভৃতিয় ছিল।

পান্না রুবি টাঁকশালঃ টাঁকশালের প্রধান কে বলা হত দারোগা। দ্বিতীয় প্রধান কে বলা হত সরাফ। এরা ধাতুর গুণ এবং কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা জানতো। পারস্যে ধাতু পরিষ্কারের বারোটি পর্যায় আছে যাদের কে ডিহি বলা হলেও ভারতবর্ষের বারোটি পর্যায় কে বলে বারবনিক। সোনা পরিষ্কারের ব্যবস্থাঃ একষট্টি আসরাফি কাটাই করা যায় এমন আকারের সোনার পাত উপরে উপরে সাজিয়ে রেখে তাতে চার সের সোরা ও চার সের ইটের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে হয়।

এই স্তুপের উপর চারদিক থেকে বিলঘুটিয়া দিয়ে সাজাতে হয়। ঘুটিয়াতে আগুন ধরিয়ে দিলে ধীরে ধীরে পাতগুলি তেতে ওঠে। চারদিকের ঘুটিয়া গুলো ছাই হয়ে গেলে সেই ছাই গুলি যত্ন করে সাবধানে সড়াতে হত। এই ছাইগুলোকে হিন্দি টে সলানিভস্ম বলে। এই ভস্মের মধ্যে সোনার খাদের যে রুপা বা চাঁদি, সেই চাঁদি বের হয়ে আসে।

ওই পাতগুলি কে এক ই ভাবে আরও দুইবার পোড়াতে হয়। পড়ে পাতগুলিকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। এইভাবে ছয় বার ধুলে ও আঠারো বার পুড়লে তবেই স্বর্ণ বিশুদ্ধ হত। চাঁদি পরিষ্কারের ব্যবস্থাঃ প্রথমে মাটিতে একটা গর্ত করে গর্তের ভেতর প্রথমে বিলুঘটিয়ার ছাই ছরিয়ে দিতে হয়। পরে বাবলা কাঠের পরিষ্কার ছাই দিয়ে সেই গর্ত ভরাট করতে হয়।

তারপর পানি ঢেলে ছাইগুলো কে পিণ্ড আকারে পরিনত করতে হয়। পিণ্ড একটু বড় হলে বড় আকারের মুচি তৈরি করতে হয়। এই মুচির ভেতর অপরিস্কার চাঁদির পিণ্ড দিতে হয় এবং এক ই ওজনের সীসা ওই চাঁদির উপর রাখতে হয়। পরে সেই গর্তের মুখ পর্যন্ত ভালো কয়লা, যাতে কাঠের অংশ নেই দিয়ে ভরাট করতে হয়। কয়লাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হাঁপর দিয়ে বাতাস দিতে হয়।

পড়ে উভয় ধাতু গলে গিয়ে এক হলে তাতে হঠাত করে পানি দিলে যদি আগুনের সাদা জ্বালা ফুটে উঠত তখন বোঝা যেতো ভেতরের চাঁদি পরিষ্কার হয়েছে। তখন সেই মধ্যের চাঁদি টুকু বের করে আবার গলানো হত। দ্বিতীয়বার গলানর সময় আর সীসা দিতে হত না। মুচির গায়ে অপরিস্কার চাঁদির খাদ ও সীসা জমে থাকতো। শেষে ওই মুচিকে গলালে এক ধরনের সমকর ধাতু পাওয়া যেতো, যাকে ফরাসিতে কেনেই বলে।

মোহরের ছাপ ও প্রকারঃ প্রথম হল স্বর্ণ মুদ্রা- সাহেনশাহ, গোলাকার দেখতে, অজন একশত এক তোলা নয় মাষা সাত রত্তি। লাল মোহরের একশত মহর ডাম। এর একদিকে লেখা ছিল, “ সাহেনশাহ বাদশাহ জালাল উদ্দিন আকবর, আল্লাহ তার রাজ্য চিরস্থায়ী করুন, তাকে চিরজীবী করুন। “ আর একদিকে লেখা ছিল,”আল্লাহ অসীম দয়াবান, তার দয়ায় জগত পরিচালিত হচ্ছে। “ দ্বিতীয় হল রৌপ্য মুদ্রা- রূপিয়া, অজন সোয়া এগারো মাসা।

ইহা শের খাঁর আমলেই প্রচলিত হয়। তৃতীয় ছিল তাম্র মুদ্রা,ওজন এক তোলা, আট মাষা সাত রত্তি। চতুর্থ ছিল দিরহাম বা দিনার। বহু পুরাকাল থেকেই এশিয়া প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইহা প্রচলিত আছে। এর আঁকার খেজুরের আঁটির মত ছিল।

খলিফা অমর এর আঁকার গল করেন। (চলবে) সুত্রঃ The Ain-I-Akbari by Abul Fazl & Akbarnama by Abul Fazl ছবিঃ গুগল থেকে। ইতিহাসের কথা- নুরজাহান মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-১ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-২ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৩ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৪  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।