আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নায়ক অনন্ত জলিলকে সস্ত্রীক অপদস্থ করার নোংরামী

I never knew how to worship until I knew how to love. নায়ক অনন্ত জলিল। তার সম্পর্কে আকাশ ছোয়া প্রশংসা বা পাতালে নামানো নিন্দা করার মত আমি কিছু পাই নি। একজন বাঙলা চলচিত্রের নায়ক, নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছেন চলচিত্র শিল্পকে বাঁচাতে, নিজের গ্যাটের পয়সা খরচ করে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দেশের মানুষকে বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করছেন। কতটা সফল হচ্ছেন তা তার সিনেমাগুলোর হাউজফুল মারমার কাটকাট অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত বাঙালী হিন্দি সিনেমা আর হিন্দি সিরিয়াল ছেড়ে এখন সিনেমা হলে ঢু মারছে, এটা অবশ্যই একটা অর্জন।

আমাদের কতজনার উচ্চারণ শুদ্ধ? আমরা কতজন শুদ্ধভাবে বাঙলায় কথা বলি? আমি হলপ করে বলতে পারি, একশ জন মানুষের মধ্যে একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শুদ্ধভাবে বাঙলায় কথা বলতে পারেন। এই আমরাই অনন্ত জলিলের ইংরেজী উচ্চারণ নিয়ে প্রতিটাদিন ফেসবুক ব্লগ গরম করে রাখি, অপমান অপদস্থ করতেই থাকি। আমরা অবচেতনভাবেই ইংরেজী ভাষা বা হিন্দি ভাষাকে নিজেদের সোশ্যাল স্ট্যান্ডার্ড ভাবি, ঐ সকল ভাষায় কথা বলতে পারাকে জাতে ওঠা মনে করি। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া কিছু না ঘরকা না ঘাটকা উচ্চবিত্ত তরুন আমরা জন্ম দিয়েছি, তারা হয়ে উঠেছেন "সেসব কাহার জন্ম নির্ণিয় ন'জানি" ধরণের অসভ্য ইতর। সামান্য ইংরেজী শিক্ষার বড়াইকে আমরা এতটাই বিশাল ব্যাপার ভেবে বসেছি যে, নিজের দেশের একজন মানুষকে নূন্যতম সম্মান দিতেও আমাদের কার্পন্য হচ্ছে।

আমাদের এই মজাবাদী চরিত্র, সবকিছুতেই মজার অন্বেষণ আমাদের জাতি হিসেবে কতটা চরিত্রহীন করে তুলছে, সেই খেয়াল আমাদের নেই। অনলাইনে মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বাক-স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের অবাধ সুবিধা পেয়ে আমরা ভুলেই গেছি, বাক-স্বাধীনতা যেই দায়িত্ববোধের জন্ম দেয় তার কথা। বাঙালীর কাছে বাক-স্বাধীনতা এবং মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুবিধাটুকু যেন হয়ে উঠেছে বাদরের হাতে একটি ল্যাপটপ, সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, তাই ল্যাপটপটি দিয়ে আরেক বাদরের মাথায় সজোরে আঘাত করছে। অথচ এই প্রযুক্তির সুবিধা, এই বাক-স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের সুবিধাটুকু ব্যবহার করা উচিত ছিল কিছু শুভ কাজে, মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করায়। কিন্তু আমরা আমাদের চরিত্র কিভাবে পাল্টাবো? আমরা এতটাই নষ্ট যে, রেস্টুরেন্টে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে খেতে গেছেন, সেখানেও আমরা তাদের অপদস্থ করি, অপমান করি।

মজা করার নামে, ফানের নামে ফেসবুকে অজস্র কুৎসিত কথাবার্তা বলার পরে তাদের জনসম্মুখে হেয় করি, ছোট করি। এখানে কি অনন্ত জলিল ছোট হলেন, নাকি আমরা সবাই মিলে অনন্ত জলিল এবং তার স্ত্রীর কাছে ছোট হয়ে গেলাম, এই প্রশ্ন ফেসবুক ব্লগ ব্যবহারকারী লক্ষ মানুষের কাছে রইলো। প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন বিভাগের একজনার নেয়া সাক্ষাতকারেও তাকে নোংরাভাবেই অপমান করা হয়েছে, প্রথম আলোর ঐ ফান ম্যাগাজিনের মজাবাদী মানসিকতার সাক্ষাতকার গ্রহণকারী যেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন ইতর ছেলে, যারা মেয়েদের দেখলেই ওড়না ধরে টানাহেচরা করে। ঠিক একই কায়দায় অনন্ত জলিলকেও অপমান করা হয়েছে, এই অপমানের দায় আমাদের সকলের উপরেই বর্তায়। সেই সাক্ষাতকারের পরে আজকে আনিসুল হক গরু মেরে জুতা দানের মত ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন অনন্ত জলিলের কাছে।

কিন্তু এখন আর ক্ষমা চেয়ে কি হবে? আর আনিসুল হকের ক্ষমা চাওয়াটাও যেন এক প্রথম আলো ব্যবসায়িক ধান্ধাবাজি, প্রথমে অপমান করুন, এরপরে ক্ষমা চান, দুই দিক দিয়েই পত্রিকার কাটতি। যারা অনন্ত জলিল এবং তার স্ত্রীকে জনসম্মুখে হেয় করেছেন, অপমান অপদস্থ করেছেন, তাদের সকলের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সাথে যারা ফেসবুক ব্লগে অজস্র নোংরামী করে একজন মানুষকে এই অপমানের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও করুণা। যেই মজা, যেই ফান একজন মানুষকে এত বাজে ভাবে হেয় করে যে, সে তার স্ত্রীর সামনে জনসম্মুখে অপদস্থ হন, সেই ফান, সেই মজাবাদকেও জানাচ্ছি ঘৃণা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।