আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাইকু

জঞ্জাল যত আটকে থাকুক হৃদয়ের মাঝখানে, কিছু সুর ফেরাতে পারে সম্ভাবনার তানে, তাই সঙ্কুচিত কোরোনা হে অফুরন্ত ডালা, প্রাণে খুশির ঢেউ জাগিয়ে সাজাও নতুন পালা জাপানি কাব্যসাহিত্যের এক অতুলনীয় বিস্ময় হাইকু। এটি সম্ভবত এখন পর্যন্ত টিকে থাকা পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কাব্যরূপ। 'হাইকু' একবচন 'হাইকি' থেকে এসেছে। কেবল আকারের ক্ষুদ্রতার জন্যই নয় বরং এই ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দরের প্রকাশ, গভীরতর বোধ ও ব্যাপ্তির এক অনিন্দ্য উপলব্ধির জন্য হাইকুর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। হাইকুর রচনারীতি স্বতন্ত্র।

মাত্র ৩ টি পঙক্তি এবং ১৭ টি সিলেবল নিয়ে গঠিত। প্রথম লাইনে ৫ টি, দ্বিতীয় লাইনে ৭ টি এবং তৃতীয় লাইনে ৫ টি এভাবে মোট ১৭ টি সিলেবল নিয়ে হাইকু গঠিত হয় । ধারনা করা হয় হাইকু লেখার সুচনা হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। তবে সপ্তদশ শতাব্দীতে মাতসুও বাসো এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইয়োসা বুসন ও কোবায়শি ইসা রচিত হাইকু ( তৎকালীন সময়ে হক্কু নামে প্রচলিত ছিল ) দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ রচনা হিসেবে আদৃত। অন্যদিকে আধুনিক হাইকুর সূচনা ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে মাসাওকা শিকির সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

মাতসুও বাসোর বিখ্যাত একটি হাইকু এরকম - জীর্ণ পুকুরে এক ব্যাঙের লাফ জলের শব্দ। কোবায়শি ইসার লেখা - বসন্ত ক্ষণে সুশ্রী রমণী এক তুলছে হাই। বুসনের হাইকু - মৌসুমি বৃষ্টি অনামিকা প্রবাহী শব্দেই তুষ্টি। জাপানি সাহিত্যের একটি প্রাচীন ধারা হলেও আধুনিক কালেও এর কদর এতটুকু কমেনি। তবে জাপানি ভাষার কম স্বরভঙ্গিযুক্ত সিলেবল হাইকু লেখায় যতখানি উপযোগী, অন্য ভাষায় ততটা নয়।

তাই অন্যান্য ভাষায় হাইকু লেখার ক্ষেত্রে ৩ পঙক্তি ব্যবহৃত হলেও ১৭ সিলেবলের শর্তটি অনেক্ষেত্রে রদ করতে হয়। যেমন আফ্রো-অ্যামেরিকান লেখক রিচার্ড রাইটের একটি হাইকু হল - Whitecaps on the bay: A broken signboard banging In the April wind. অল্প কথায় ব্যাপকতা প্রকাশের বিস্ময়কর গুণের কারনেই হয়ত বিশ্বজুড়ে হাইকুর জনপ্রিয়তা। ঐতিহ্যবাহী এই কাব্যের ধারা সুদূর ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে নিজস্ব শক্তিমত্তার দ্বারাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।