আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাখো সন্তুরা আজ দিশেহারা

প্রগতিশীলতা আর নগ্নতা এক নয় আরও ৫-৬ বছর আগের কথা। বাস্তবতার চেয়ে কল্পনাই যখন মুখ্য ছিল। ration এবং emotion এর যুদ্ধে যখন ইমশন জয়ী হত তখনকার কথা। ছোটবেলা থেকেই বই পরার অভ্যাস ;আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। তবে ছোটবেলার পড়া আর আজকের পড়ার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যাবধান।

তবে এই ব্যাবধান দীর্ঘ বিবর্তনের ফসল। আমার এই পাঠ্য জীবনে অল্প যা কিছুই পড়েছি তার মাঝে থেকে কিছু নেবার কিছু শেখার চেষ্টা করেছি। যেমন ছোটবেলার কমিকস টিনটিন আমায় মজার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তবে কৈশোরটা ছিল ব্যাতিক্রম। আমরা রবীন্দ্রনাথ এর ছুটি গল্পে পড়েছিলাম এমন বয়শের বালাই আর নাই।

এই বয়সে শারীরিক ও মানসিক নানান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একজন ছেলে বা মেয়ে অগ্রসর হয়। তারা তখন না থাকে শিশু নাইবা যুবক। এযেন এক অবর্ণনীয় এক অতি কষ্টকর অবস্থা। তাই এ বয়সে সবকিছুই অন্যরকম লাগে। এর জীববিজ্ঞানগত এবং মনস্তত্তগত ব্যাখ্যা রয়েছে।

তাই এ সমস্ত অন্তরদন্দের মধ্যে দিয়ে চলার সময় স্বাভাবিক ভাবেই একটা ছেলে সবকিছু সহজ ভাবে নিতে চায় না। তাই আজকে মনস্তত্তবিদেরা বলেন এ বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে একটু অন্যভাবে আচরণ করতে হয়। এ সময় এদের সাথে ভালভাবে কথা বলতে হয়; করতে হয় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন। এর ব্যাতয় ঘটলে একজন ছেলে বিপথগামি হতে পারে। বড়রা এ সময় যদি তাদের কথার গুরুত্ত না দেন তবে হিতে বিপরিত হতে পারে।

তো আমি যখন বয়সন্ধি পার করছিলাম আমার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মনের সংশয় ছিল প্রকট। দরকার ছিল একজন বন্ধু যে আমাকে ভালবাসবে, আমার কথা শুনবে। আমার পাঠাভ্যাস তখন জারি ছিল। এমনি সময় যখন একটু বন্ধুত্ব দরকার ছিল হয়তোবা সমাজ আমাকে তা দিতে পারছিল না।

এমন সময় একদিন আমার মামার বাসায় একটা বই পেলাম। বইয়ের নামটা প্রথমে পছন্দ হয়নি। নাম ছিল কাকাবাবু সমগ্র। স্বভাবতই কাকাবাবুরা রাগীই হয়ে থাকেন। তবে বইটা যেহেতু ছিল এডভেঞ্চার নিয়ে তাই বইটা বাসায় নিয়ে আসলাম।

বইটা তিনদিনে গোগ্রাসে গিললাম আর আবিস্কার করলাম আমার কৈশোরের প্রিয় বন্ধুকে মানে কাকাবাবুকে। এর পেছনে আরেকটা কারন ছিল। কাকাবাবুর মিশনগুলোর সহযোগী ছিল তার ভাতিজা সন্তু যে কিনা ছিল আমার বয়সেরই। এই সন্তুকে যে কাকাবাবু কত ভালবাসতেন তা কাকাবাবু না পড়লে বোঝা যাবেনা। কাকাবাবু এমনিতে খোঁড়া থাকলেও তার ছিল অদম্য প্রাণশক্তি।

তবে সন্তু কে ছাড়া তার কিছু সমস্যা হত। তাই আগে মিশনগুলোতে সন্তুকে না নিলেই পরে ধিরে ধিরে সন্তু মিশনে যেতে থাকে। আর কাকাবাবুকে নানাভাবে সাহায্য করে। আর ঐ সময়ে আমার নজরে সবচেয়ে যে জিনিস্তি ভাল লাগত তা হল এই ছোট ছেলেটিকে কাকাবাবুর মত জ্ঞ্যানি একজন লোক এত গুরুত্ব দিত। দিত বললাম আমার কাকাবাবু আর নেই।

যাক সে কথায় পরে আসছি। তো যা বলছিলাম যখন ঐ বইগুল পরলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল সন্তুর জায়গায় আমি আসিফ কাকাবাবুর সাথে আমাজনে গিয়েছি, পড়েছি আন্দামান নিকবোর দ্বীপে উপজাতিদের কবলে বা হয়ত আমিই নেপালে হিমালয়ের পাদদেশে কাকাবাবুর সাথে অবাস্তব ইয়েতি দেখছ, এমনি আরও কত কি!!!! তখন যেহেতু কল্পনাপ্রবন, আবেগপ্রবন ছিলাম তাই গল্পগুল খুব ভাল লাগত। একজন কিশোর হিসেবে ভাল লাগারি কথা, এমনি আমার মত বাংলার হাজার কিশোর সন্তু হয়ে কাকাবাবুর সাথে। কিন্তু এখন কাকাবাবু আর নতুন কোন মিশনে জাবেন না ,কারন কাকাবাবু আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে গেছেন। হ্যাঁ, আমি বলছি বিখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কথা।

তিনিই তো কাকাবাবুর স্রষ্টা। তিনি নেই কাকাবাবুও নেই। কাকাবাবু ওনাতেই বিলীন আর আমরা(কিশোর) বিলীন কাকাবাবুতে। তাই বাংলার লাখো সন্তুরা আজ দিশেহারা। কারন ওরা আর কাকাবাবুর সাথে নতুন কোন মিশন এ যেতে পারবেনা।

এভাবে যদি কাকাবাবুরা চলে যান তাহলে সন্তুদের কি হবে। কারন এই বাংলায় কৈশোরে ছেলেমেয়েদের কেমন মনে করা হয় তা আমরা ছুটি গল্পে পড়েছি। তাই আক্ষেপ করে বিধাতার কাছে বলি একজন কাকাবাবু নিয়েছ কিন্তু আমরা আরও কাকাবাবু চাই যাদের কাছে আমরা মনের কথা শেয়ার করতে পারব, আর এমন কাকাবাবুই লাখো সন্তুকে শান্ত করতে পারবে, পারবে এদের প্রিয় বন্ধু হতে। আশা করি তিনি আমাদের কথা শুনবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.