আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটা...

পুরান আমি নব ভাবনায় বিভোর.. ১। কয়েকদিন ধরে বাচ্চাটি ঘুরাঘুরি করছে । বুঝতে পারছে না কার বাচ্চা এটি । বয়স কত হবে ? ৮ কিংবা ১০ । বয়স টা ঠিক ঠাঁওর করা যাচ্ছে না।

কে এই বাচ্চা টা । বাচ্চাটি বললে ভাল ঘরের বাচ্চা বুঝবে অনেকে , বাচ্চা টা বললে গরিব লোকের বাচ্চাই মনে হয় । বাচ্চা মেয়েটা সারাদিন বাড়িময় ঘুরাঘুরি করছে । চেনা চেনা লাগে । চেনা কেউ নাকি ? সবুর সাহেবের বয়স ৬০ ।

মিসেস সবুর এর প্রায় ৫৬ ছুঁইছুঁই । তাদের দুই ছেলে পড়াশুনা করতে গিয়ে আর দেশে ফিরেনি । এক ছেলে অস্ট্রেলিয়া আর একজন কানাডা থাকে । সবুর সাহেবের ছোট সংসার । তার সঞ্চিত অর্থ থেকে এই ফ্লাট টা কিনেছে ।

এখন রিটায়ার্ডমেন্ট টাকা রাখা আছে পোস্ট অফিসে । সেই টাকা দিয়ে দুজনের সুন্দর চলে যায় । কিন্তু কিছু টাকা নষ্ট হয়েছে বটে শেয়ার মার্কেটে । ...। ভাগ্য ভাল বলা যায় , নিঃস্ব হননি ।

বেশ কয়েকদিন ধরে সবুর সাহেব টেলিভিশন দেখতে বসলেই এই মেয়েটি সামনে হাটাহাটি করে । কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া দুস্কর । মেয়েটা কি দুর্বোধ্য কথা বলে বুঝাও কঠিন । পরশু রাতে মেয়েটা সবুর সাহেবের পড়ার ঘরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলো - আপনি কাঊপার কে চেনেন ? = না । - তিনি বলেছেন ঈশ্বর গ্রাম তৈরী করেছে আর শহর বানিয়েছে মানুষ ।

আপনারা তো মানুষ নন আপনাদের শহর গুলোতো তাই বলে । = জানি না । কে তুমি ? কি সব বলছ তুমি?? - জানেন সেদিন রাত্রে আপনি যদি আপনার দড়জা খুলে পাশের ফ্লাটে যেতেন তাহলে আমার এরকম হতো না । = কি হয়েছে তোমার ? মেয়েটা উদাসীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সবুর সাহেবের দিকে । আস্তে আস্তে কোথায় যেন মিলিয়ে যায় মেয়েটা ।

অনেকটা হরর মুভিতে যেমন ঘটে । সবুর সাহেব একসময় শুয়ার ঘরে ফিরে আসে । শুয়ে শুয়ে ভাবে কে এই মেয়েটা । চেহেরাটাও কেমন যেন পরিচিত ঠেকে কখনো কখনো । দু- একদিন আগে মেয়েটি তাকে কেঁদে কেঁদে বলেছিল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।

ছেলে গ্রামে ভ্যান গাড়ি চালায় । ঘুম পায় না সবুর সাহেবের । কে মেয়েটা । আত্মা ভর করেছে নাকি তার অবচেতন মনে। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েন তিনি ।

২। মধ্যে বেশ কয়েকটা সপ্তাহ শান্তিতে ছিলেন জনাব আব্দুস সবুর সাহেব । কিন্তু আজ সন্ধ্যে থেকে সে আবার এই বাড়িতে । কোথা থেকে আসে , কোথায় মিলিয়ে যায় ?? আজ টেলিভিশনে সংবাদ দেখার পর থেকেই পিছু লেগেছে মেয়েটা । কে রে বাবা তুই ।

মনে করতে চায় তার গ্রামের বাড়ি কিংবা শুশুর বাড়ির কোন অকালে অক্কা পাওয়া শিশু আত্মা নাকি ??? না , সে রকম কেঊ তো তার যানা নেই । সময় টা খারাপ করে দিল মেয়েটা । পরশু ঈদ । ৩। সকালে সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজে যাবে সবুর সাহেব ।

মেয়েটার সাথে ডাইনিং এ দেখা । একটা চেয়ারে বসে আছে । টেবিলে হাতের উপর হাতে থুতনি লাগিয়ে বসে বসে কাঁদছে । - কাঁদছিস কেন ? কি নাম তোর ? = আমার ছোট ভাইটি আজ সেমাই খেতে পারে নি । রহিমা ।

নাম রহিমা । ভাইয়ের নাম সবুজ । - তোর কি হয়েছে ? = আমাকে সেদিন ১৬ এপ্রিল মেরে ফেলেছে আপনার পাশের ফ্লাটের গৃহকর্তী । সেদিন রাত্রে আপনি যদি আপনার দড়জা খুলে পাশের ফ্লাটে যেতেন তাহলে আমার এরকম হতো না । সেদিন রাতে আপনি চিৎকার শুনেছেন ।

এগিয়ে যাননি বাঁচাতে । যদি যেতেন তবে আমাকে মরতে হত না হয়তো । আইন আছে না রাষ্ট্রের ??? শুধু বইয়ে থাকলে হবে ?? এই দেখুন আমার শরীরে গরম খরচির দগদগে ঘাঁ । কেন সেদিন দড়জা খুলে পাশের ফ্লাটে গেলেন না । আমি যদি আপনার ঘরে জন্মা... চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা সেমাই এর বাটি নিয়ে ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।

৪। ঈদ নষ্ট । দিনটা ভাল যায় না সবুর সাহেবের । শ্যালক শ্যালিকার বাড়িতে দাওয়াত ছিল । যাওয়া হয় নি ।

শুয়ে শুয়ে ঈদ কেটে গেল । রহিমা কি আবার আসবে ?? কোনদিন ??  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।