আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আম্মু কে লিখা আমার প্রথম চিঠি ।

আমি একজন দুঃখী মানুষ। এ নয়ে আমার কোন দুঃখ নেই। জন্মেছি পুরুষ হয়ে। এখন মানুষ হয়ে আরও একবার জন্মাতে চাই । আমি শুধু স্বপ্ন দেখেই ক্লান্ত হই না, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেই।

নিজের কাছে আমি খুব সত্‍ একজন মানুষ। প্রিয় আম্মু, কেমন আছো ? তুমি কোথায় থাকো আম্মু? তুমি কি অমাবস্যার রাতে আকাশে মিটিমিটি করে তারা হয়ে জলতে থাকো । আচ্ছা আম্মু,তোমার কি আমাকে দেখে ইচ্ছে করে না। তোমার সেই ছোট ছেলেকে, যে তোমাকে ভয় পেয়ে দূরে দূরে পালিয়ে থাকতো । তোমার ফুলে যাওয়া হাত,দেখে ভয় পেয়ে চোখ বুঝতো।

আমি সত্যি বলছি আম্মু ,তোমাকে না দেখতে আমার খুব ইচ্ছে করে। তোমার কি মনে পড়ে সাকোয়ার সেই লিচু তলার টিনের ছাদ ওয়ালা বাড়িটার কথা । টিনে আমি ঢিল ছুড়তাম আর তুমি "তোরাব,তোরাব" বলে ডাকতে,আমি তোমার ডাক শুনে ভয়ে পালাতাম। তোমার কি সেই ছেলেটার কথা মনে পড়েনা আম্মু,ওই যে ওই ছেলেটা । যে জানালার ফুটো দিয়ে তোমাকে দেখে,ভয়ে চোখ বন্ধ করতো হাত দিয়ে,তুমি ডাকতে "আব্বু কাছে আয়,আব্বু শুনে যা।

" আমি ভয়ে ছুটতাম। তোমার ফুলে যাওয়া শরীর যেন আমার কাছে রাক্ষস, ওই যে ফুল বাগানের সিং ওয়ালা দৈত্য। আম্মু জান তোমার মৃত্যু না সব বদলে দিয়েছে,আমি দাদা বাড়িতে বড় হয়েছি। দাদা বাড়ির সবাই আমাকে খুব আদর করতো,আদর করতো একটা শিশু হিসেবে,মা হারা এতিম শিশু। এর নানা বাড়ির কথা কি বলব,কেও খোঁজই নেয় না।

মাঝে মাঝে বড় মামী বেড়াতে আসতো, এখনও আসে মাঝে মাঝে । মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দেয়, বড় মামাকে অনেক দিন দেখিনা । দেখতে যেতে ইচ্ছে করে,কিন্তু পারিনা । তবুও মাঝে মাঝে নানা বাড়িতে যায়,বড় মামার সাথে দেখা হয়ে উঠে না,আমি যখনি যায়,উনি তখন থাকে না। আম্মু জান তোমার কবর না এখন গর্ত হয়ে গেছে,তোমার কবরের পাশে একটা বিরাট গাছ হয়েছে,গাছের পাতা গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

আমি আর তোমার বৃদ্ধ মা ছাড়া তোমার খবর দেখার কেও নাই আম্মু,তুমি চলে গেছ,পৃথিবীও অতীত হয়ে গেছে তোমার কাছে। আম্মু,তোমার কোন ছবি অথবা স্মৃতি আজ আমার কাছে নেই,তোমার রেখা যাওয়া প্রতিটি বস্তূই দূরে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। তোমার স্মৃতি যা আমাকে কষ্ট দেয়,আমাকে কাঁদায়। আম্মু তোমার ছোট ছেলেটা ঢাকা সিটি কলেজে পড়ে,জান আম্মু তোমার কোন স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে খুঁজে পায় না। কীভাবে পাব বলো তুমি,তোমার রেখে যাওয়া দুই বছরের তোরাব যে আজ ২০ বছর পার করতে চলেছে।

মাঝের আঠারোটি বছর হাটি হাটি পা পা করে কীভাবে কেটেছে মাঝে মাঝে বুঝতেই পারিনা। মাঝে মাঝে তোমার কথা খুব মনে পড়ে আম্মু । অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে যখন মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে, ভয়ে বালিশ বিছানা যখন ঘামে ভিজে যায়,তখন তোমার কাছে ছুটে যেতে মন চায়,তোমার আচলের তলে নিজেকে লুকাতে ইচ্ছে করে । খুব ভয় লাগে আম্মু,কিন্তূ কি করবো বল,মাথার উপরে ঘুরতে থাকা সেলিং ফ্যান আর খোলা জানালার অন্ধকার আকাশ ছাড়া যে আর কিছু নেই আমার,আমি যে অন্ধকার রাতের বাঁশরী,তাই আম্মু আমি আকাশ দেখি,দূরে নক্ষত্রের মাঝে তোমাকে খোঁজের চেষ্টা করি। তুমি চলে গেছ,পৃথিবিটা যে আর লাগে না ভালো।

কাওকে যখন তার আম্মু ভাত মুখে তুলে খাইয়ে দেয়,রাস্তায় ছোট বাচ্চাটা,তার আম্মু হাত ধরে যখন রাস্তায় হাটে,তখন আমার খুব হিংসে হয়, তোমার কথা খুব মনে পড়ে। ইশ্‌,তুমি যদি থাকতে আম্মু,তাহলে তোমার জন্যে শাড়ি কিনে নিয়ে যেতাম। আমার জান খুব শাড়ি কিন্তে ইচ্ছে করে,শাড়ি তোমাকে দিতে ইচ্ছে করে কিন্তূ কি করবো বল তুমি তো নেই,তাই আমার বন্ধু দের শাড়ি কিনে দেয়,তাদের মায়েদের মুখের হাসিটুকু আমি কিনি। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে আম্মু,অনেক কিছু বলার আছে,তুমি ভেবনা আম্মু,আমিও জলদি তোমার কাছে পৌছাব। তারপরও একসাথে চা খাব,আড্ডা দিব।

চায়ের পেয়ালাতে চুমুক দিব,পায়ালা দিয়ে ঢোয়া উঠবে,চা এর পর চা শেষ হবে,কিন্তূ আমাদের গল্প শেষ হবে না। আল্লাহ্‌ পাকের তো অনেক আছে,আমাদের কে জান্নাতের কোন এক জায়গায় কি থাকতে দিতে পারবে না আল্লাহ্‌। আমি জানি আল্লাহ্‌ পারবে,আম্মু তুমি দোয়া কর,আমি যেন আল্লাহর কাছে এই দাবি আদায় করতে পারি এবং আল্লাহর রাস্তায় চলতে পারি। আম্মু তুমি ভাল থেকো । ইতি তোমার ছেলে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।