আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবাধিকার বিড়ম্বনা:

এক. গত বছরের ফেব্রুআরির ঘটনা। গাদ্দাফী বিরোধী আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে তখন। গাদ্দাফী ও যথারীতি তার বাহিনী লেলিয়ে দিলেন। রাজপথে নামল ট্যাংক আর আকাশে যুদ্ধবিমান। মারা পড়ল অসংখ্য মানুষ।

মানবাধিকার রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হলেন গাদ্দাফী-যা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়। তাই প্রথমে তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হল। পরে আসল ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। সর্বশেষে হস্তক্ষেপ করল ন্যাটো। ন্যাটোর মুহুর্মুহু বিমান হামলায় মারা পড়ল হাজার খানেক মানুষ।

অবশেষে নাটকের যবনিকা পতন...ঠিক একই সময়ে বাহরাইনের শিয়ারা শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে নামল রাজপথে। এখানেও যথারীতি সেনা লেলিয়ে দেয়া হল। আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্রে তারা পাখির মত গুলি করে মারল আন্দেলনকারীদের। তবে এটা মানবাধিকার লংঘনের মত গুরুতর ঘটনা ছিল না। তাই যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানাল।

দুই. এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৮০ সালে সাদ্দাম হোসেন বিনা উস্কানিতে ইরান আক্রমণ করে বসলেন। ইরান ছিল সদ্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারত। তাই এটা কোন আমলযোগ্য অপরাধ হল না।

আমেরিকা একদিকে যুদ্ধ বিরতির আহবান জানাল। অন্যদিকে সাদ্দামকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হল জাহাজ ভর্তি অস্ত্র। সাদ্দাম হয়ে উঠলেন আমেরিকা-পাশ্চাত্যের স্নেহভাজন ব্যক্তি। তাই সাদ্দাম কুর্দি-শিয়াদের বিরুদ্ধে ক্রসেড শুরু করলে আমেরিকা বলল-এগুলো নিতান্তই ইরাকের আভ্যন্তরীন ব্যাপার। এমন বিষয়ে নাক গলানো কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

১৯৯১ সালে আবার একই সাদ্দাম আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে কুয়েত আক্রমণ করে বসে। ফলে আমেরিকার নেতৃত্বে গঠিত হল কোয়ালিশন ফোর্স। সাদ্দাম আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হলেন। তারপর মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগে ইরাকের উপর আরোপ করা হল নিষেধাজ্ঞা। ইরাকের শিশুরা মরল লাখে-লাখে,ঝাঁকে-ঝাঁকে।

তবে যে সাদ্দামকে কেন্দ্র করে এই নিষেধাজ্ঞা তার নাতি-নাতনির কিচ্ছু হল না। তিন. দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মায়ানমার। এর সামরিক জান্তা একটু স্বাধীনচেতা টাইপের। আমেরিকার মোড়লিপনা মানতে নারাজ। আবার মায়ানমারের সাথে চায়নার বেশ দহরম-মহরম সম্পর্ক।

তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। বলা হল মায়ানমারের মানবাধিকার রেকর্ড তেমন একটা ভাল নয়। অভিয়োগ সত্য। তবে একই অভিযোগ আনা যেত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার এই জারজ সন্তান ২০০৮ সালে গাজা উপত্যকায় ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে,তখন। তবে তা আর হল না।

বরং ইসরায়েলকে এক জাহাজ অস্ত্র দিয়ে বলা হল একটু সংযম প্রদর্শন করতে। আর জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবে আমেরিকা বরাবরের মতো ভেটো দিয়ে বলল-“নিজ নাগরিককে রক্ষার অধিকার পৃথিবীর সব দেশেরই আছে”। চার. এখন মানবাধিকার কর্মী প্রসঙ্গে আসা যাক। বিল ক্লিনটন। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট।

মানবাধিকার বিশেষ করে নারীর অধিকার নিয়ে বেশ স্বোচ্চার ছিলেন তিনি। তবে ভদ্রলোক এক কান্ড করে বসলেন। স্ত্রী হিলারীকে বঞ্চিত করে ওভাল হাউসে মণিকার সাথে অবৈধ প্রণয়ে মাতলেন বছরের পর বছর। অবশ্য এজন্য তিনি জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন। ফলে নারী-অধিকার লংঘনের মত গুরুতর পাপ নিমিষেই মাফ হয়ে গেল! পাঁচ. চেরি ব্লেয়ার।

সাবেক ব্রিটিশ ফাষ্ট লেডি। শুধু অন্যায় ইরাক আগ্রাসনকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত হননি;সহধর্মিণী হিসেবে স্বামীকে যুগিয়েছেন অফুরন্ত অনুপ্রেরণা আর সৈন্যদের অদম্য উৎসাহ। বক্তৃতা-সভা-সেমিনার সবখানেই ছিলেন যুদ্ধের পক্ষে মুখর। তবুও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ মানবাধিকার কর্মীর!আগমনে এদেশের মানবাধিকার পাড়ায় আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে য়ায়। ফলে তাকে স্বাগত জানাতে উপচে পড়ে মানবাধিকার কর্মীদের ঢল! আবার গাদ্দাফী প্রসঙ্গে ফেরা যাক।

যুদ্ধ পরবর্তী লিবিয়ায় অন্তবর্তী সরকার গঠিত হল। এ সরকারের মানুষগুলো গাদ্দাফী বিরোধী হলে কী হবে-এদের কিছুসংখ্যক আবার একটু স্বাধীনচেতা টাইপের;পাশ্চাত্যের মর্জিমাফিক দেশ চালাতে নারাজ। তারা নিজেদের দেশ গড়বে নিজেদের মত। ফলে এদেরকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হল। তারপর গাদ্দাফী হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সরাসরি বহিস্কার. . .শত হোক স্বৈরশাসক, শত হোক অত্যাচারী-তবু্ও তিনি তো একজন মানুষ।

মানুষ হিসেবে তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল,অধিকার ছিল আত্মপক্ষ সমর্থনের। তবুও তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হল. ..এ তো আর যেমন তেমন পাপ নয়! এ যে সরাসরি মানবাধিকার লংঘনের পাপ!এ পাপ একবার ধরলে কি আর সহজে ছাড়ে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.