আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন, কাঁদালেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

Click This Link হুঁশ হওয়ার পর দেখি আমি রমনা থানায়। টর্চারের ফলে আমার পিঠে এবং পায়ের পেছনে কোনো চামড়া ছিল না। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসে এভাবেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন দেশবরেণ্য গীতিকার ও সুরকার মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী। সাক্ষ্যদানকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে তাকেসহ কয়েকজনকে আটক, কয়েকজনকে হত্যা এবং তার নিজের ওপর লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

বৃহস্পতিবার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সাক্ষ্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তার পরে সাক্ষ্য দেন ১৫তম সাক্ষী ফরিদ আলম (৬০)। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সাক্ষী বুলবুল আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এমনকি ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও তাকে সাক্ষ্যদানে সহায়তাকারী প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের গলাও ভারি হয়ে ওঠে। সাক্ষী ও সকলের নীরব কান্নায় বেদনাবিধূর হয়ে পড়ে ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে জেরা করেন গোলাম আযমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তবে ১৫তম সাক্ষী ফরিদ আলমকে জেরা করবেন না বলে জানান আসামিপক্ষ। আগামী রোববার ৭ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৬তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে ৫৭ বছর বয়সী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের একাত্তরে বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। সে সময় ঢাকার আজিমপুরে ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলে পড়ালেখা করতেন তিনি।

তার পিতা মৃত ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতা ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। স্নাতক ডিগ্রিধারী বুলবুল দেশের সুপরিচিত গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ও স্কুলছাত্র থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন বুলবুল। প্রথমে বন্ধু সজিবের নেতৃত্বে বিহারিদের অস্ত্র ছিনতাই করে একটি ছোট মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তারা। জিঞ্জিরায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটি তৈরি করে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বেশ কিছু প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।

পরে বুলবুল তার বড় ভাই ক্র্যাক প্লাটুনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ টুলটুলের সঙ্গে ঢাকায় বেশ কিছু গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। সব শেষে তিনি ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে ফের বন্ধু সজিবের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ওয়াই বা ইয়াং প্লাটুনের বীর এ যোদ্ধা কয়েকবার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে আটক হয়ে পাশবিক ও রোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় বুলবুল শহীদ সিরু মিয়া দারোগা ও তার সন্তান শহীদ কামাল আনোয়ার ও শহীদ নজরুলসহ ৩৮ জনকে ঈদের দিন রাতে কারাগার থেকে বের আনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ওই ৩৮ জনকে পরে হত্যা করে গণকবর দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা, যে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১১তম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের সোনা মিয়া।

১৪তম সাক্ষী হিসেবে নির্মম সে গণহত্যার আরো বিস্তারিত বর্ণনাও করেন বুলবুল। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আরো ৬ জন ঘটনার সাক্ষী ও ৭ জন জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার সাক্ষীরা হলেন, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধিকার কর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের সোনা মিয়া এবং একজন শহীদ পরিবারের নারী(ক্যামেরা ট্রায়াল)। আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন বাংলা একাডেমীর সহ গ্রন্থাগারিক মো. এজাব উদ্দিন মিয়া, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) রাজনৈতিক শাখার উচ্চমান সহকারী সেলিনা আফরোজ, কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উচ্চমান সহকারী কাজী আইয়ুব হোসেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার কামালের বোন ডা. মুনিয়া ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় যাদুঘরের কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক জামিনুর শেখ। মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

১০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেওয়া। অভিযোগগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা ও তাদের সঙ্গে চক্রান্ত করার জন্য ছয়টি, তাদের সঙ্গে পরিকল্পনার তিনটি এবং উস্কানি দেওয়ার ২৮টি এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ২৪টি অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়।

পরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কারাগারে পাঠানোর পর চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বিচার চলছে। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের জমা দেওয়া ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ৬২টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

এর মধ্যে ৬১টি গ্রহণ করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মাধ্যম। মোট ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.