আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালি নয়না ৪

এটা আমার রাজত্ব ভার্সিটিতে নামল রাসিদ বাস থেকে। মঙ্গলবার। সপ্তাহের এই দিনটায় সোনালি নয়নার ক্লাস থাকে দুপুরে। সকালে বাসে অথার পর থেকেই মনটা কেন যেন আনচান করছে রাসিদের। পরিক্ষা আছে তার আজকে।

কঠিন একটা সাবজেক্ট। মন বসছেনা কোন কিছুতেই। ক্লাসে গেল রাসিদ। বন্ধুরা হই চই করে উঠল। ইদানিং রাসিদ ক্লাসে তেমন একটা আসেনা।

কারন সে জানতে পেরেছে সোনালি নয়নার অন্য কার সাথে সম্পর্ক আছে। তাই যখন বন্ধুরা ওকে কাছে পায় হই চই করতে থাকে। আজকের এই দিনটিও ব্যাতিক্রম নয়। তবে রাসিদের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। এমনিতেই আজ একটা পরিক্ষা।

তার উপর সোনালি নয়নার সাথে তার দেখা হয়নি সকালে পরিক্ষা যে খারাপ হবে তা জানা কথা ওর জন্য। গতকাল ভার্সিটির বাসে ফেরেনি ও। ফিরেছিল আগে আগেই। তবু বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দারিয়ে ছিল একবার দেখার আশায়। ওর ভাষায় যাকে বলে কনফিডেন্স নেওয়া।

বাস এসেছিল সময়মতই। কিন্তু ওর দাঁড়ানো জায়গা থেকে অনেক দূরে বাস থামাতে বাধ্য হয় ড্রাইভার কারন হঠাৎ মারামারি আরম্ভ হয় দুই পক্ষে। সবাই পালাতে থাকে ঘটনাস্থল থেকে। কিন্তু রাসিদ দৌড়ে গিয়েছিল ওই ঝামেলার মদ্ধেই একবার দেখার জন্য। কিন্তু দেখা হয়নি।

সারা বিকাল বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে যখন সে বাসায় ফিরল তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। পরতে বসার পরও কিছু পরা হয়নি। কারন সেই সোনালি নয়না। রাসিদ ক্লাসে বসে যখন শিটের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে সোনালি নয়নার কথা, তখন ক্লাস রিপ্রেজেন্তেতিভ ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল ‘আজ পরিক্ষা হবে দুপুর ১২;৩০ এ। তোমরা এই ২ ঘণ্টা অন্য কথাও বস।

এখানে জুনিয়র দের ক্লাস হবে’। তাতিয়ে উঠল রাসিদের মন। এমনিতেই পড়া হয়নি, ওকেও দেখা হয়নি। তারাতারি পরিক্ষা দিয়ে বাইরে সোনালি নয়নার জন্য অপেক্ষা করবে সে। এই ছিল প্ল্যান।

বদ টিচার সব প্ল্যান কেচে গণ্ডূষ করে দিল। বন্ধুদের সাথে বাইরে স্ট্যান্ডে থাকা একটা বাসে বসল রাসিদ। সবাই আড্ডা দিচ্ছে। শুধু রাসিদের কোন মন নেই। থাকবে কিভাবে মন ত পড়ে আছে সোনালি নয়নার কাছে।

হঠাৎ দারিয়ে রাসিদ বলল, ‘দোস্ত, আমি একটু ঘুরে আসি’। বন্ধুরা অবাক হয়ে পরল। বারি আসতে চাইল ওর সাথে। রাসিদ তার কথার কোন জবাব না দিয়ে বেরিয়ে পরল। গেটের কাছে আস্তেই চোখে পরল তার পরম আকাঙ্খিত রমনিকে যার জন্য এত উদ্বেগ।

রাসিদের মুখে হাসি ফিরে এল। কিন্তু হাসি উবে যেতেও সময় লাগলনা তার। সোনালি নয়নার হাত ধরে আছে একটি ছেলে। কালো, বদখত চেহারা। দুই দুই এ চার মেলাতে সময় লাগলনা রাসিদের।

ও স্পষ্ট বুঝল ওর কাছে আসা ইনফর্মেশন সত্য। এবং এ ই সেই ছেলে যার সাথে স্বরনাক্ষির সম্পর্ক রয়েছে। রোদেলা মেঘমুক্ত ওর হৃদয়ের আকাশ বিষাদের কালো ছায়ায় ঢেকে যেতে সময় লাগলনা। ও বুঝতে পারলনা এই মেঘ কি কষ্টের নাকি ব্যর্থতার গ্লানির। পরিক্ষার হলে সবাই বসেছে।

শুধু একজন নেই। সে রাসিদ। সে আছে দূরে কোথাও সবার অগোচরে। একা একা বসে ব্যর্থতা উদযাপন করছে সিগারেট এর ধোঁয়া উড়িয়ে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।