আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালি আঁশের দেশে

মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি পার হয়ে, মহাসড়ক ধরে প্রায় ৫ কিলোমিটার চললেই সড়কের দুপাশে বিস্তীর্ণ বিল। এসব বিলের পানিতে পাট পচিয়ে সড়কের পাশেই চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ। কৃষকপরিবারের সবাই মিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। প্রধানত পরিবারের মহিলা সদস্যদেরই এই কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর পুরুষরা ছাড়ানো পাটের আঁশ ধোয়ায় ব্যস্ত।

বিলের কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে অবিরত ধুয়ে যাচ্ছেন পাট। কাদামাটি মেশানো পচানো আঁশে নিয়ে আসেন সোনালি আভা।  
এ পথে চলতে চলতে মহাসড়কের উপরে পুলিয়া বাজার। এখান থেকে হাতের বাঁয়ে পিচঢালা সরুপথ ধরে প্রায় ৪ কিলোমিটার গেলে দেখা মিলবে প্রত্নস্থাপনা পাতরাইল মসজিদ। লাল ইটের তৈরি এই স্থাপনা অনেকটা রাজশাহীর বাঘা মসজিদের আদলে তৈরি।

স্থানীয়দের কাছে এটি আউলিয়া মসজিদ নামেও পরিচিত।
জানা যায় ১৩৯৩ থেকে ১৪১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ’র শাসনামলে মজলিস আউলিয়া খান মসজিদটির নির্মাণ করেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে তার সমাধি। এছাড়া মসজিদপ্রাঙ্গণে আছে এই এলাকার কয়েকজন সুফি-সাধকের কবর। এদের মধ্যে দরবেশ মস্তান নাজিমদ্দিন দেওয়ান ও ফকির ছলিমদ্দিন দেওয়ান উল্লেখযোগ্য।


পাতরাইল মসজিদ দেখে আবারও চলে আসুন মহাসড়কে। মাওয়া-ভাঙ্গা সড়ক ধরে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার গেলে পাওয়া যাবে মালিগ্রাম। ছবির মতো সুন্দর, তবে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া পড়েনি খুব একটা। সড়কগুলোও কাদামাটিতে একাকার। গ্রামের সর্বত্রই পাট আর পাট।

পাশেই টইটম্বুর বিল। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে একমাত্র বাহন নৌকা।
গ্রামের বেশিরভাগ সড়কই বিলের পানিতে ডুব দিয়েছে। যতটুকু রাস্তা পানির উপরে, সেগুলোও পুরোটাই পাটের দখলে। মাঠ ভরা সবুজ পাট, আবার কোনো কোনো জায়গায় কৃষক পাট কাটায় ব্যস্ত।


সময় হিসেব করে গেলে মালিগ্রামের পাটের বাজারও দেখতে যেতে পারেন। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে বিশাল পাটের হাট বসে। হাটের দিন মহাসড়কের উপর কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে হাটের বিস্তৃতি। পাশের খালও ভরে যায় পাট বোঝাই নৌকায়। ভোররাত থেকে শুরু হয়ে এই হাট চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত।


মালিগ্রাম ছেড়ে সামনে গেলে ‘ভাঙ্গা’ চৌরাস্তা। এখান থেকে পশ্চিমে ফরিদপুর, পূর্বে বরিশাল এবং দক্ষিণে গেলে গোপালগঞ্জ।
চৌরাস্তা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশে শুধুই পাট। কোথাও জমিতে সবুজ পাট, কোথাও পাটের আঁশ ছড়ানো, আবার কোথাও শুকানোর কাজ চলছে। এ জায়গার সবখানেই তালগাছের প্রাধান্য।

বিলে তাই দেখা যাবে তালের নৌকা। তালভরা নৌকা নয়, তাল গাছ কেটে তৈরি করা হয় এসব নৌকা।  
এ ভ্রমণে নিজস্ব বাহন হলে সবচেয়ে ভালো। ঢাকা থেকে খুব সকালে বের হতে পারলে, সারাদিন বেড়িয়ে আবার রাতে ফিরতে পারবেন। মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটের ভিড় এড়িয়ে সহজে পার হতে হলে সাতটার মধ্যে ফেরিতে উঠতে হবে।


ফেরি পার হতে সেডান-কার কিংবা মাইক্রোবাসের ভাড়া ৭৮০ টাকা। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে এই ধরনের গাড়ি ভাড়ায় নিতে পারেন।
এছাড়া ঢাকার ফুলবাড়িয়া থেকে ইলিশ পরিবহনের বাসে সরাসরি মাওয়া ঘাট যাওয়া যায়। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। সেখান থেকে লঞ্চ কিংবা স্পিডবোটে কাওড়াকান্দি ঘাট।

ঘাট থেকে যে কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য পাবেন বাস কিংবা লেগুনা। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া মাওয়া-কাওড়াকান্দি স্পিডবোটে পার হবেন না।
এই ভ্রমণে থাকতে চাইলে গোপালগঞ্জ শহরের কোনো হোটেল বেছে নিতে পারেন। শহরের কয়েকটি হোটেল হল চৌরঙ্গী এলাকায় হোটেল ‘রানা’, হোটেল ‘রিফাত’ ও হোটেল ‘সিয়াম’। এসব হোটেলে ১৫০-৫শ’ টাকায় থাকা যায়।

তবে ভালোমানের হোটেল হল টুঙ্গীপাড়ায় পর্যটন করপোরেশনের হোটেল ‘মধুমতি’। এ হোটেলে এসি দুই সিটের কক্ষ ১৩শ’ টাকা। নন এসি দুই সিটের কক্ষ ৮শ টাকা এবং ডরমিটরির বিছানা ৩শ’ টাকা।
এখানে থাকলে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ দেখা হবে বাড়তি পাওনা।  


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।