আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালি রঙের চা

আজ সারাটা দিন একঘেয়েমিতে কাটলো, কেন যেন কোন কিছু ভাল লাগছে না অর্পার। শেষ বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব চা খেতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনি, যখন সে চা বানাতে জানে না। তার কাছে চা বানানো পৃথিবীর সবচাইতে জটিলতম কাজটির একটি। আর যে ভাল চা বানায়, সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি।

কবে কোন একদিন সে চা বানিয়েছিল, পরে দেখা গেছে সে চা পান করা বিষ খাওয়ার চেয়েও কঠিন। এরপর থেকে অর্পার মনে আতঙ্ক, সে কোনদিনও ভাল চা বানাতে পারবে না। এ বাসায় চা বানায় অন্তু। অর্পার খুব ইচ্ছে অন্তুকে নিয়ে একটা চায়ের দোকান দিবে। দোকানের নামও সে ঠিক করে ফেলেছে, “এক কাপ চা”।

মাঝে মাঝে অন্তুও এসব হাস্যকর কথায় সায় দেয়। অন্তু আর তৃনা চা বানাবে। তৃনাও অসাধারন চা বানায়। ছাত্রজীবনে মাঝে মাঝে তৃনার কারনে চা খেতে হত। অনেকদিন তৃনার হাতের বানানো চা খাওয়া হয়নি।

তাই এখন আর সে বুঝতে পারে না কে বেশি ভাল চা বানায়, অন্তু নাকি তৃনা? আজ অন্তু চা বানানোর মুডে নেই। আগে অর্পা চা, কফি এসব খেত না। বলা যায় খেতে পারতো না। গরম কাপে ঠোঁট পুড়ে যেত তার। চা তার কাছে ছিল বিভীষিকা।

সে বুঝতে পারতো না এই বিদখুটে (?) গরম পানীয় মানুষ কি করে খায়। বিয়ের পর অনেক কিছুর সাথে চা পানেও এসেছে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সারাদিনে কিছুক্ষন পর পরই চা খেতে ইচ্ছে করে। হয়ত গল্পের বই পড়ছে, একপর্যায়ে তার মনে হয়- ইস! এক কাপ চা হলে খুব ভাল হতো। ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছে, তখনও চায়ের নেশায় পেয়ে বসে তাকে।

রোজ বিকেলে তার গাছগুলোকে পরিচর্যা করার পর যখন সামনের ফ্ল্যাটের বাচ্চাটার সাথে দুষ্টামি করে তখনও এক কাপ চায়ের জন্য তৃষ্ণা জাগে। ইদানিং চায়ের উন্মাদনায় এর বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছে সে। ছোটবেলা অর্পা যখন বাবাকে কফি খেতে দেখত, তখন থেকেই কফির ঘ্রান তার খুব পছন্দের। তার কাছে কফি বানানোটাও সহজ মনে হয়। এই সময়ে তাই প্রায়ই অর্পার হাতে কফির মগ দেখা যায়।

আজ কেন জানি চা খেতে ইচ্ছে করছে। চায়ের এমন তৃষ্ণা চা পাগল মানুষ ছাড়া হয়ত আর কেউ বুঝবে না। কিচেনে গিয়ে কফি বানাতে গিয়েও লেবু দেখে তার মাথায় একটা চিন্তা খেলা করে যায়। চায়ের লিকার করে কাপে লেবুর ফোঁটা পরতেই পানীয়টা সোনালি বর্ণ ধারন করে। মুগ্ধ চোখে অর্পা তাকিয়ে থাকে।

লেবু চায়ের অদ্ভুত সুন্দর রঙের দিকে তাকিয়ে তার মনটা ভাল হতে থাকে। কম্পিউটারের সামনে বসা অন্তুকে চা দিয়ে নিজের কাপটা নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় অর্পা। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। আসে পাশের ফ্ল্যাটগুলোর দিকে তাকায় সে, প্রায় বাসায় টিভি চলতে দেখা যাছে, গরমের সময় জানালা খোলা থাকে বলে টিভি স্ক্রিনের আলো চোখে পড়ে বেশি। অর্পার টিভি দেখতে ভাল লাগে না।

ও বুঝতে পারে না এত্ত বিরক্তিকর হিন্দি সিরিয়াল কি অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে মেয়েরা দেখতে পারে! আর ছেলেদের আছে ক্রিকেট খেলা! একটা বল নিয়ে লুফোলুফি খেলা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কি করে দেখে? ছোট্ট পরিবারের সব সুখ অর্পার কাছে এখন বোঝার মত মনে হয়। ওর মনে হয় ও যদি একান্নবর্তী পারিবারে থাকতো, তাহলে বেশ হতো। অন্তত সবার সাথে গল্প করে সময়টাতো কাটতো। চায়ের কাপটার দিকে তাকিয়ে তৃনাকে ফোন করে সে। কেন জানি তৃনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার।

ইদানিং কারো সাথেই কথা বলতে ভাল লাগে না তার, শুধু তৃনা বাদে। মনে মনে গুছিয়ে নেয় কি কি বলবে, চায়ের কথা তো অবশ্যই বলবে। কথা গুছাতে গুছাতে মনটা খুশিতে চঞ্চল হয়ে উঠে। কল রিসিভ করেই তৃনা বলে, “ আমি তোকে এক মিনিট পর কল দেই?” “আচ্ছা”- বলে অর্পা লাইন কেটে দেয়। অর্পার গুছানো কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।

ভাবে, তৃনা এখন কি করছে? কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছে? না কি বাসার বাইরে আছে? কারো সাথে কি গল্প করছে? ঠিক এক মিনিট পর তৃনা কল করবে। সময়জ্ঞান ওর অনেক প্রখর। এক মিনিট অ-নে-ক সময়। হয়ত আর এক মিনিট পর যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে সে কথা বলতে চাইছে, ততটা উচ্ছ্বাস নাও থাকতে পারে। এমনকি কথা বলার ইচ্ছাটাও তো মরে যেতে পারে।

এসব ভাবতে ভাবতে অর্পা তার মোবাইলটি সোফায় রেখে লেবু চায়ে চুমুক দেয়। তারপর...। তারপর লেবু চায়ের সোনালি রঙের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আর অপেক্ষায় থাকে মোবাইলের রিং টোন শোনার...।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।