আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায়রে মানুষ! তোর কত রঙ আর ঢঙ

দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আহমদ শরীফ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন তার অনেকটাই এরকম- ’যে দিন একজন মানুষও অন্য কোন মানুষের গোলাম হবে না সেদিন পর্যন্ত আমার সাধনা আর সংগ্রাম চলতে থাকবে। ’ কথাটা আমার খুব মনে ধরেছে তার জন্যই শুরুতে লেখাটার ঊধ্বৃতি দিলাম। পৃথিবীর আদিকাল থেকে মানুষ প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে জীবন গঠন করে আসছে। সেই শুরুর কাল থেকে সামন্ততান্ত্রিক যুগ হয়ে আধুনিক কাল পর্যন্ত। সকল মানুষই এক বিধাতার সৃষ্টি।

যিনি অত্যন্ত দরদ ঢেলে দিয়ে মানব জাতিকে সৃজন করেছেন। মানুষের যাতে অমর্যাদা না হয়; তারা যাতে ঠিকভাবে পৃথিবীর বুকে চলতে ফিরতে পারে সে জন্য মহান আল্লাহপাক আদম (আ.) থেকে মুহম্মদ (স.) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্বরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। ঈসা, ইউনূস, মুসা থেকে শেষ নবী মুহম্মদ পর্যন্ত নবী রাসূলরা মানুষের মর্যাদাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে গেছেন। চার খলিফা-আবু বকর, উমর, ওসমান, আলী থেকে গৌতম বৌদ্ধ, মার্কস, লেলিন, মার্টিন লুথার কিং, হাজী মুহম্মদ মুহসিন, মীর নিসার আলী তিতুমীর, হাজী শরীয়াতুল্লাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাদার তেরেসাসহ সোনার মানুষরা -মানুষের অধিকারের জন্য, স্বাধিকারের জন্য, মর্যাদার জন্য স্বাধীনতার জন্য, লড়াই করেছেন। কেউবা আবার পুরো জীবনকেই উৎসর্গ করেছেন এই মহৎ কাজে।

মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সৃষ্টির বিস্ময়ের বিস্ময়। সপ্তম আশ্চর্যের চেয়েও আশ্চর্য তার জীবন আর বেড়ে উঠা। আমরা জানি পৃথিবীর সকল প্রাণীই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই দাঁড়াতে, খেতে, হাটতে শেখে। কিন্তু মানুষ মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হয়েই দাঁড়াতে, খেতে, চলতে শিখে না, শিখতে পারে না।

তাকে মায়ের সাহায্য নিতে হয়। বড় হয়ে মানুষ ভাবে সে বুঝি বড় হয়ে গেছে। তাই সে ভুলে যায় নিজেকে, তার সৃষ্টির রহস্যকে, তার অস্তিত্ত্বকে। এই মানুষই তো আবার বড় হয়ে তাদের মতো মানুষকেই সে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে। তার কারণ সে ক্ষমতার অধিকারী।

তার হাতে ক্ষমতা আছে। তাই সে তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। আসলে ক্ষমতা এমন একটা জিনিস যাকে ব্যবহার করতে হয়। হয় বৌধভাবে না হয় অবৈধভাবে। তবে এ কথা সত্য যে অধিকাংশ মানুষই ক্ষমতাকে বৈধ পথে ব্যয় করে না।

ক্ষমতা ফেলে মানুষ তার আশপাশে কায়েম করে মধ্যযুগীয় নিয়ম-কানুন। যেভাবে খুশি সেভাবে। যেমন খুশি তেমন সাজো’র মতো হয় তার অবস্থা। এই জীবনে অনেক দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ব্যক্তি আর আদর্শবান ব্যক্তি দেখেছি যে, ক্ষমতা ফেলে বাজনীতিবিদ ভুলে যায় তার দেশপ্রেমকে আর আদর্শবান মানুষ ভুলে যায় তার আদর্শের কথা। মানুষ পৃথিবীর বুকে চারদিকে কায়েম করে রাখছে এজিদের শাসন।

নমরূদের শাসন। ফেরআউনের শাসন। মানুষ সুযোগ ফেলেই চাপাবাজি করে। ধান্ধাবাজিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। অপরকে ধমক দেন।

অপরের উপর নির্লজ্জ প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। এমন কি মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকার বিণিময়ে মানুষই আবার মানুষকে খুন করে। মানুষই বাবা হয়। মানুষই মা হয়। মানুষই ছেলে-মেয়ে হয়।

আবার ছেলেরা মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তারাও তো মানুষ। মানুষ এমপি হয়। মানুষ মন্ত্রী হয়। মানুষ রাজা হয়। মানুষ প্রজা হয়।

মানুষ দিন মজুর হয়। মানুষই আবার ছড়ে বসে প্রাইভেট কারে। মানুষ দশ তলায় থাকে আবার মানুষেরই একটা অংশ থাকে ফুটপাতে গাছ তলায়। মানুষ মানুষকে দুঃখ দেয় আবার মানুষই দুঃখ সয়। এভাবে চলছে বর্তমান মানুষের জীবন।

মানুষ গড়ছে আধুনিক সভ্যতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই পর্যন্ত সে তার নিজের অস্তিত্ত্বকে, স্বকীয়তাকে, রহস্যকে জানতে পারে নি। তবুও এই সুন্দর বসুন্ধরায় কিছু ভাল মানুষ আছে যার জন্য পৃথিবীতে বাঁচতে ইচ্ছে করে। মানুষকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে মানুষের সমাজে বসবাস করতে।

জয় হোক মানুষের, জয় হোক তার পরিচয়ের। পরিশেষে মানুষ তার নিজের পরিচয়ে বাঁচুক। পৃথিবীর বুকে দিকে দিকে কোন মানুষের অপমান অমর্যাদা আর দেখতে চাই না। জয়তু মানবতা জয়তু মানুষ মানুষ এবং মানুষ। পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত মানুষকে আমি ভালবেসে যাবো।

তার পরেও। এর পরেও। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.