কয়েক মাস পুর্বে ব্যারিষ্টার রফিকুল হককে নিয়ে লিখে ছিলাম শেয়ার বাজার সংক্রান্ত একটা মামলায় সাধারন বিনিয়োগ কারিদের বিপক্ষে , লুটেরাদের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য।
তিনি সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছেন সংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডে বিতর্কিত মিডিয়া মুঘল মাফুজুর রহমানের সাংবাদিকদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করার জন্য।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে ব্যারিষ্টার রফিকুল হককে ধি্ককার জানানো হয় এবং তাকে টিভি টক শো তে আমন্ত্রন না জানাতে বলা হয়।
আমি নিজেও হতবাক হয়েছি এটা দেখে এবং ভেবে যে তার মত মানুষেরা কিভাবে টাকার কাছে, স্বার্থের কাছে এতটা বিকিয়ে যান।
তিনি এবং তার মত আরো অনেক সুশিল আছেন যারা প্রতিদিন রাতে সরকার ও রাজনিতীবিদদের চৌদ্দগুশ্টি উধ্দার করেন ,সুশাসন, গনমাধ্যমের স্বাধিনতা , ন্যায়বিচার ইত্যদি বিষয়ে।
অথচ সকাল হলেই পতিতালয়ের বেশ্যাদের মত বিকিয়ে যান সমস্ত ন্যায় নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে।
ব্যারিস্টার রফিককে আমি প্রথম চিনেছি গত কেয়ারটেকার সরকারের সময় একজন সাহসী মানুষ হিসাবে। কারন যখন রোকনুদ্দিন মাহমুদ, তানিয়া আমীরের মত বাঘা আইনজীবিরা লেজ গুটিয়ে শেখ হাসিনার মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থেকেছে, তখন এই রফিক সাহেব কে দেখেছি হাইকো্ট,সুপ্রীমকোট বীর দপে দাপিয়ে বেড়াতে। দেখেছি হাস্যজ্জল মুখে বলেছেন ,'জাতির জনকের কন্যাকে ডিফেন্ড করেছি,এটাই বড় ব্যাপার'। পরবর্তিতে খালেদা জিয়া, তারেক সহ সব দলের,মতের,শ্রেনীর মানুষের মামলা তিনি একাই লড়েছেন।
সবার শ্রদ্ধার পাএে পরিনত হন তিনি।
পরবর্তীতে একসময় উনাকে দেখলাম কিছু আত্মস্বীক্রিত দুর্নীতিবাজের পক্ষে মামলা লড়ছেন, এমনকি গন বিরোধি মানুষ ও প্রতিষ্টানের পক্ষে তিনি কোর্টে দাড়াচ্ছেন। বিষয়টি ভালো লাগছিল না, বিশেষ করে এরকম একজন মানুষ যে কিনা অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার,সব ভয় ভীতিকে অগ্রাহ্য করতে পারে, যিনি মানুষের সেবায় হাসপাতাল,এম্বুলেন্স,এতিমখানা প্রতিষ্টা করেছেন। এক সময় জানলাম উনি স্বৈরাচারী এরশাদের জামানা্য় অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এরশাদের মামলারও তিনি ছিলেন প্রধান আইনজীবী।
কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম, তবে তারপরও তাকে ভালো লাগতো দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সাহসি কথাবার্তার জন্য।
গত বছরে শেয়ার বাজারে ধসের পর সরকার কর্তক গঠিত তদন্ত কমিটি যাদের কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত বলে মতামত দিয়েছিল,তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যারিষ্টার রফিকুল হক । তিনি বলেছিলেন 'খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শেয়ার বাজারের কারসাজির সঙ্গে যারা জড়িত বলে চিহ্নিত ব্যক্তি ও কোম্পানির বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আদালতে মামলা দায়ের করে তাদের আইনের মুখোমুখি করা দরকার। শুনে খুশি হয়েছিলাম, সাধারন মানুষের পক্ষের কন্ঠস্বর হিসাবে। পরে জানলাম ,
''ছিয়ানব্বইর শেয়ারকেলেংকারি নিয়ে এইসইসির দায়ের করা মামলায় কেলেংকারির নায়কদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ছিলেন ব্যারিষ্টার রফিক !!!??!!''
মনে প্রশ্ন জেগেছিলো তবে কি এবারও সরকার মামলা করলে ,তিনি কেলেংকারির নায়কদের পক্ষে মামলা লড়তেন?? তবে কি উনার এই জনদরদী বক্তব্য শুধুই নিজের ব্যাবসা বাড়ানোরআর স্বস্তা বাহবা নেওয়ার ফন্দি ? তখন উত্তর পাইনি তবে এক বছর পর বুঝলাম আমার অনুমান ঠিক ছিল, এই ব্যাক্তিটি টাকার কাছে বিক্রী হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
অথচ এই ব্যারিষ্টার রফিক গত দুই বছর ধরে শেয়ার বাজারে ধসের জন্য অর্থমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের চোদ্দ গুস্টি উদ্ধার করেছেন। উনার মত আর এক সুশীল এম এ জহির ও বিভিন্ন বিসয়ে জাতিকে কম জ্ঞান দেননি,অথচ তাকেও দেখলাম টাকার কাছে বিক্রী হয়ে যেতে।
ঠিক একই ভাবে সাগর-রুনি হত্যাকান্ড ,ইলিয়াস আলি গুম ইস্যুতে তিনি বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে সাহসি বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ তিনি এখন সাগর-রুনি হত্যাকান্ড নি্য়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারি মাহফুজুর রহমানের পক্ষে
আদালতে দাড়ি্য়েছেন ,বিচরের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্যে। এখানে মত প্রকাশের স্বাধিনতা কিংবা ন্যায় বিচারের আধিকার অথবা গনমাধ্যমের স্বাধিনতা কিছুই তার বিবেচনায় ছিল না।
তার পেশগত সুনাম, মর্যাদা সবকিছুর চেয়ে তিনি টাকাকে বেশি মনে করেছেন। এক্ষেত্রে দুর্ণীতিবাজ আমলা, মন্ত্রী,রাজনীতিবিদ কিংবা পেশাদার খুনি আর তার মধ্যে কনো পার্থ্ক্য আছে বলে মনে হয়না।
কিছুদিন আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাদের নিয়ে ব্যারিষ্টার রফিককে দেখলাম 'নাগরিক আন্দোলন' নামে একটি সংগঠন করতে। এই সংগঠন আবার দেখলাম নজিরবিহীনভাবে বিরোধি দলের হরতালে সমর্থন দিতে। অথচ অপার বিস্ময়ে দেখলাম কিছুদিন আগে ব্যারিষ্টার রফিক তার হরতাল বিরোধি মনোভাব ব্যাক্ত করতে গিয়েছেন সরাসরি বিএনপির নাট্যমঞ্চে দিনব্যাপী গণঅনশন কর্মসূচিতে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি খালেদা জিয়াকে তার নেত্রী হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
বেশকিছুদিন ধরে ব্যারিষ্টার রফিককে রাজনীতি নিয়ে অতিকথন খেয়াল করছি। মাস দুয়েক আগে দেখলাম 'একক বক্তব্য' টাইপ নতুন অনুস্ঠান করছেন।
ইদানিং দেখছি তিনি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসুচিতে যাচ্ছেন, একাত্মতা জানচ্ছেন। আবার অন্যদিকে আওয়ামি লিগের মাহামুদুর রহমান মান্নার সাথে ণাগরিক আন্দোলন করছেন।
উনার এসব কর্মকান্ড দেখে তার প্রতি শ্রধ্দা হারিয়ে ফেলছি দিন দিন। কেউ কেউ বলছেন ব্যারিষ্টার রফিক আগামিতে খালেদা জিয়ার নেতৃ্ত্বে সরকার হলে সেখানে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। সেটা তিনি হতেই পারেন বা হওয়ার চেস্টা করতে গিয়ে, সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিতেই পারেন, সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু সর্বশেষ তিনি যে শ্রধ্দার আসনে ছিলেন তার চেয়ে এসব কোনভাবেই বড় কিছু না। এখন যদি তার বর্তমান মিশন সত্যি হয় এবং নবযাত্রা অব্যহত থাকে তবে ‘দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী না্ই’ বলে বক্তব্যও দেবেন না ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এমনটা আশা করা যায় না।
কারন যে কর্মসূচিতে তিনি খালেদা জিয়াকে নেত্রী বলে সম্বোধন করে ধন্য হয়েছেন ওই মঞ্চ থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি উঠেছিল।
পরিশেষে একটি কথা মনে পরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীতে বাংলায় কোন এক উপন্যাসে পরেছিলাম , 'মানুষ মরে গেলে পচে যায়, আর বেচে থাকলে সময়ে সময়ে বদলায় । ' ব্যারিষ্টার রফিক বদলাচ্ছেন সত্যে, তবে পচে যাচ্ছেন নাতো। । ???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।