ব্লগিং শুরু করলাম প্রথমেই বলে নেই আমি দু' বছর ধরে ডেল ল্যাপটপ ব্যবহার করি। ডেল এর সাথে দোয়েলের নামে মিল থাকার কারনে কিছু আবুল টাইপের মানুষ বলে দোয়েল এর নাম নাকি ডেল এর নাম থেকে চুরি করা হয়েছে! নাউজুবিল্লাহ!
ডেল এর সাথে দোয়েলের কোন মিল নাই। লোগোর ডিজাইনও আলাদা। "ও" এর মাঝখানে একটা দোয়েল আছে। আর ডেল এর ডিজাইন এ "ই"টা বাকা।
যে ডেল ল্যাপটপটা ব্যাবহার করি সেটা স্ক্রিন বড়, প্রসেসর শক্তিশালি (কোর আই থ্রি) আরো কিছু কারনে দেড় থেকে দুই ঘন্টার বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে না। আর এখন তো আরেকটু বুড়িয়ে গিয়েছে!
বেশি সময় ব্যাটারি ব্যাবহারের জন্য নেটবুকের থেকে ভালো কিছু হতেই পারে না। নেট বুক খালি ইন্টারনেট ব্যবহার প্লাস টুকিটাকি পিসির কাজ করার জন্য। এখন কেউ যদি নেটবুক কিনে গ্রাফিক্সের কাজ করতে চায়, সেইরকম গেমস খেলতে চায় তাহলে তো হবে না।
সব চিন্তাভাবনা করে অবশেষে দোয়েল কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম।
দেশে বানানো জিনিস, কেমন দেখাতো লাগেই। এই মাসের ৯ তারিখে একটা দোয়েল কিনলাম। দোয়েল কিনতে গিয়েছিলাম নগরভবনের পাশের টেসিস অফিসে। মনে করেছিলাম সরকারী অফিস, নিশ্চই পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে যে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেরকম আরেকটা বাজে অভিজ্ঞতা হবে।
ঐ বিল্ডিং এর দোতলায় উঠলেই একটা দেয়ালে লেখা দেখা যায় "দোয়েল" সাথে একটা তীর চিহ্ন দেয়া।
ওখানে যাওয়ার পরে দেখলাম এক ব্যাটা মাঝখানের চেয়ারে বসে একটা নেটবুক টেস্ট করছে। আর বার বার গাধার মত প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। যেমনঃ হার্ডডিস্ক তো ২৫০ জিবি থাকার কথা ২৩২ জিবি কেন? (গাধা ব্যাটা মনে হয় ভেবেছে বাকি ১৮ জিবি ইঞ্জিনিয়ার মেরে দিলো নাকি? ) আপনাদের ব্যাটারি নাকি খারাপ? ব্যাটারি নাকি ২ ঘন্টার বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে না? আপনাদের সাউন্ট নাকি বেশি আসে না? ইত্যাদি ছাগল মার্কা প্রশ্ন! লোকটা কিন্তু কিনতেইএসেছে। দেখলে শহুরে ভদ্রলোক মনে হয়। কিন্তু আজব ব্যাপার সরকারী ইঞ্জিনিয়ার একটুও রাগ করলেন না? অন্য সরকারী অফিস হলে শিওর বলতো "আপনার কাছে দোয়েল তো কি কাউয়াও বেচবো না, ভাগেন" একদম শেষে লোকটা ওয়েবক্যাম দিয়ে দুটো ছবি তুলে টাকা দিয়ে বিদায় হলো।
ইঞ্জিনিয়ার লোকটা যেহেতু সবার থেকে পোস্টে সিনিয়র তাই মোটামুটি সব উত্তর নিজেই দিচ্ছিলেন। একদম শেষে বললো কোন সমস্যা হলে আমাকে কল দিবেন। কিন্তু ভাই প্লিজ রাত ৯টার পরে আর কল দিয়েন না! (চিন্তা করেন এভাবে কোন সরকারী অফিসার অনুরোধ করে?)
ওই গাধা ব্যাটা যাওয়ার পরে সিট খালি হলো। বসে আমার দোয়েলটা নিতে সময় লাগালাম না। নেটে তো ফিচার সব দেখেছিই।
মডেলঃ বেসিক ০৭০৩, ইন্টেল এটম প্রসেসর, ২৫০ জিবি হার্ডডিস্ক, ১জিবি ডিডিয়ার থ্রি র্যাম (২ জিবি করা যাবে), ১০ দশমিক ১ ইঞ্চি স্ক্রিন (1024*600), ৬ সেল ব্যাটারি (দারুন ব্যাটারি!), ওয়েবক্যামও আছে! সব দিলাম না, নেট থেকে দেখে নিয়েন। দাম মাত্র ১৫২০০টাকা! এই দামে কি আপনি অ্যাপল এর জিনিস চান? সাথে ৩ মাসের উইন্ডোজ এন্টারপ্রাইজ দেয়া আছে। ভেতরে কাজের সব সফটওয়্যার আগে থেকেই ইন্সটল করা ছিলো।
ইজিনিয়ার সাহেবের (সরকারি খাটাস মার্কা অফিসারদের সাহেব বলতে ইচ্ছা করে না, কিন্তু এই লোক ব্যাতিক্রম) কথা বললাম কিছুক্ষণ। যা জানতে পারলাম
১-দোয়েলে কোন পাইরেটেড সফটওয়্যার দেয়া হয় না।
খুবই ভালো কথা, একটা দেশের সরকার নিজেই যদি পাইরেসি করে তাহলে তো মান-ইজ্জত থাকে না!
২-মাইক্রোসফট এর সাথে দোয়েল বা সরকারের চুক্তি হয়েছে। মাত্র ৩ হাজার টাকায় আপনাকে অরিজিনাল উইন্ডোজ দেয়া হবে সাথে মাইক্রোসফট এর "লাইফটাইম" অ্যান্টিভাইরাস! আপনার কিন্তু প্রতি বছর এই জিনিস ১১০০টাকা দিয়ে কেন লাগে। তার মানে আসল জিনিস ব্যাবহার করা অবশ্যই লাভজনক। যারা ক্র্যাক করে বা কোন রকমে দুইনম্বরি করে উইন্ডোজ চালায় বা অ্যান্টিভাইরাস চালায় তারা আসলে নিজেকে চালাক ভাবে আসলে তারা বোকা। ফেক,ক্র্যাক বা যাইহোক রেগুলার আপডেট করতে না পারলে যে হার্ডওয়্যার এর ক্ষতি হয় এতে কোন সন্দেহ নাই।
আর কেউ যদি এসব না স্বীকার করে, পিসি যে স্লো হয় এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যাদেরই পিসি স্লো তাদের কে বলতে চাই, আসল মানে টাকা দিয়ে কেনা অ্যান্টিভাইরাস আর উইন্ডোজ ব্যাবহার করেন আপনার কম্পু হাওয়ায় উড়বে। আর টাকা খরচ করতে না ইচ্ছা করলে উবুন্টু ব্যাবহার করেন।
আর একটা কথা সরকার যে চুক্তিটা করেছে সেটা কিন্তু এখোনো আনঅফিসিয়াল। আপনাদের জানিয়ে দিলাম।
আর এটা কিন্তু দোয়েল এর মাদারবোর্ড বাদে অন্য কোন মাদারবোর্ড এ চলবে না। (আমিই জিজ্ঞাস করেছিলাম, অন্য পিসির জন্য কিনতে পারবো কিনা?)
৩-দোয়েলের প্রোডাকশন কখোনোই বন্ধ হয় নাই। সব অপপ্রচার। আপনারা যেকোন সময়ই গুলিস্তান বা টঙ্গী গিয়ে দোয়েল কিনতে পারেন।
আমি দোয়েল ব্যাবহার করছি।
ব্যাটারি খুবই ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে। ৪-৫ ঘন্টার মত সময় নেটে কাটানো যায়। আর নেট না ব্যাবহার করলে আরো বেশি যাওয়ার কথা! ওয়েবক্যামটাও ভালো। স্ক্রিন অফ করে রাখা যায়, চার্জ বেশি থাকে। ওয়াইফাই ও আছে।
মোটামুটি সবদিক থেকেই ভালো। ১০০ তে ৯২ মার্ক দেয়া যায়। আর বড় যেগুলো সেগুলো তো আরো সুন্দর। ডেল ল্যাপটপটা না থাকলে বড়টাই কিনে ফেলতাম। আপনারা দোয়েল কিনতে পারেন।
কিছু আবুল টাইপের মানুষের ধারনা বাংলাদেশের জিনিস সবই খারাপ। ওয়ালটন এর বাইক খারাপ (৯০০০০টাকায় পালসারের মত বাইক), ফ্রিজ খারাপ, এসি খারাপ, বাংলালায়ন এর নেট খারাপ (৬২+ স্পীড পাই, অনেকে লোকেশনের কারনে নেটওয়ার্ক পায় না তাদের কথা আলাদা), টেলিটক এর সিম খারাপ, দোয়েল খারাপ...
এবং তারা আন্দাজে মানুষের কাছে এগুলোর নামে অপপ্রচার করে বেড়ায়!
তাদের কিছুই বলার নেই। ভাগ্য ভালো ইলিশ মাছ আমেরিকায় হয় না, আমেরিকায় হলে কিন্তু বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ ফালতু হয়ে যেত! পদ্মার ইলিশ খেয়ে এই আবুলরা কোন স্বাদ পেত না।
আপনারা দেশি জিনিস ব্যাবহার করেন, আমদানি কমাতে সাহায্য করেন। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন।
ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।