আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘দোয়েল’ নিয়ে অনিশ্চয়তা

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। দেশে উৎপাদিত নেটবুক ‘দোয়েল’ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও তা স্বীকার করতে নারাজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস। তিনি বলেন, সাড়ে চার হাজারের বেশি দোয়েল এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। চলতি বছর আরো অন্তত এক লাখ দোয়েল নেটবুক উৎপাদন করা হবে।

এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার কোনো পরিকল্পনাই সরকারের নেই। এটি চালু থাকবে। অন্য দিকে টেশিসের মহাব্যবস'াপক (প্ল্যান) আ আ মো: মোয়াসির দোয়েলকে সফল প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ৯ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে। তাদের সিদ্ধান- অনুযায়ী আপাতত উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ দিকে সমপ্রতি সংসদে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার দ্রুত বাজারে ট্যাবলেট পিসি নিয়ে আসবে। তবে সচিব বলছেন, ‘এসব এখনো চিন্তা ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। দোয়েল উৎপাদন চলছে। এটি অব্যাহত থাকবে। এখানে কোনো সমস্যা থেকে থাকলে তা সমাধান করা হবে।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আমি বিষয়টি নিশ্চিত করছি। ’ সূত্র মতে, গত বছরের ১১ অক্টোবর উদ্বোধনের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই দোয়েল ল্যাপটপ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারিগরি ও আর্থিক সমস্যাই এর কারণ বলে জানা গেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও ‘ভিশন ২০২১’ বাস-বায়নের লক্ষ্যে সরকার ২০০৯ সালের জুনে নিজস্ব ব্যবস'াপনায় ল্যাপটপ উৎপাদনের ঘোষণা দেয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি দেশী ও একটি বিদেশী কোম্পানিকে নিয়ে টেলিফোন শিল্প সংস'া (টেশিস) ল্যাপটপ উৎপাদনকার্যক্রম শুরু করে।

তবে সরকার মাত্র ১০ হাজার টাকায় দেশে উৎপাদিত ল্যাপটপের স্বপ্ন দেখালেও এর প্রতিটি অংশ চীনে তৈরি। চীনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শেয়ার ট্রনিক করপোরেশনের মাধ্যমে সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে টেশিসের গাজীপুর কারখানায় তা শুধু সংযোজন করা হয়। যদিও দোয়েলের উদ্বোধনের দিন টেশিসের সে সময়কার ব্যবস'াপনা পরিচালক মো: ইসমাইল বলেছিলেন, এর ৬০ শতাংশ যন্ত্রপাতিই দেশে উৎপাদন করা হবে; বাকি ৪০ শতাংশ চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হবে। টেশিসের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দোয়েল ল্যাপটপ বন্ধের প্রধান কারণ টাকা। তারা জানান, ল্যাপটপ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ১৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

প্রকল্পের টাকা বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান থিম ফিল্ম ট্রান্সমিশনের (টিএফটি) তরফ থেকে আসার কথা ছিল। কিন' এখন পর্যন- শুধু বাংলাদেশ সরকার টাকা দিয়েছে। ফলে ল্যাপটপ তৈরির কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। টেশিস সূত্র জানায়, আপাতত রিভলবিং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ টাকা ধার নেয়ার চিন-া করছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে আগামী বোর্ড সভায় সিদ্ধান- নেয়া হবে বলে জানান তিনি। গত ১১ অক্টোবর জাতীয় পাখি দোয়েলের নামে প্রধানমন্ত্রী জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে এ ল্যাপটপের উদ্বোধন করেন। ঐতিহাসিক চার ঘটনা ভাষা আন্দোলন ও আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে ‘দোয়েল প্রাইমারি মডেল-২১০২’, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্মরণে ‘দোয়েল বেসিক মডেল-০৭০৩’, স্বাধীনতা দিবস স্মরণে ‘দোয়েল স্ট্যান্ডার্ড মডেল-২৬০৩’ এবং বিজয় দিবস স্মরণে ‘অ্যাডভান্স মডেল-১৬১২’ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে দোয়েল প্রাইমারি নেটবুকের দাম ১০ হাজার টাকা, বেসিক নেটবুকের দাম ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড নেটবুকের দাম ১৬ থেকে ২২ হাজার এবং অ্যাডভান্স নেটবুকের দাম ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকা। বৈশিষ্ট্যভেদে দামের এ পার্থক্য রাখা হয়েছিল।

কারিগরি সমস্যা ও অভিযোগ : খুব অল্পসংখ্যক দোয়েল ল্যাপটপ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে। তাদের অনেকের অভিযোগ, খুবই পাতলা প্লাস্টিক ধরনের আবরণ দিয়ে ল্যাপটপ তৈরি করা হয়েছে। ব্যাটারির ক্ষমতা কম। অপারেটিং সিস্টেমে ঠিকমতো কাজ করা যায় না। এ ছাড়া লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি) মনিটর ঘোলা।

টেশিসের হিসাবে ‘দোয়েল প্রাইমারি মডেল-২১০২ মাত্র ৮-১০টি উপহার হিসেবে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। চার হাজার ৭০০ জন দোয়েল বেসিক নেটবুক ব্যবহার করেন। আর দোয়েল স্ট্যান্ডার্ড নেটবুক এবং দোয়েল অ্যাডভান্স নেটবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হাজারখানেক। টেশিসের প্রকৌশলীরা জানান, ব্যাটারি ও মনিটর নিয়ে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ সঠিক। এ সমস্যাগুলোর সমাধানে ইতোমধ্যে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা হয়েছে।

ওই প্রকৌশলীরা বলেন, দেশের বেশির ভাগ ব্যবহারকারী উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে অভ্যস- হওয়ায় তারা দোয়েল মডেলগুলোতে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। প্রাইমারি নেটবুকে অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি তিনটি নেটবুক চলে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে। টেশিসের মহাব্যবস'াপক (প্ল্যান) আ আ মো: মোয়াসির দোয়েলকে সফল প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন। উৎপাদন বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ৯ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে।

তাদের সিদ্ধান- অনুযায়ী আপাতত উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যবহারকারীর অভিযোগ প্রসঙ্গে মোয়াসির বলেন, ‘পণ্যের গুণগত মান উন্নত করে বাজারে নিয়ে আসার জন্যই কাজ চলছে। তবে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে। ’ এ দিকে দোয়েল নিয়ে হোঁচট খেলেও এখন ট্যাবলেট পিসি বা ‘আরো উন্নত কিছুর’ চিন-া করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বুয়েটের অধ্যাপক মো: মোস-ফা আকবর বলেন, ‘১০ হাজার ও ১৩ হাজার টাকার ল্যাপটপগুলোর তৈরি ও ক্রম উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি পাওয়া একটু কঠিন।

তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কমিটি ট্যাবলেট পিসি বা আরো উন্নত কিছু তৈরি করার সুপারিশ করেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.