এস এম আরিফ দুপুর ২টা ৩০মিনিট, ২৮ আগস্ট, ২০১২। এসময়টি কালোসময় হিশেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের পারিবারিক জীবনে। এদিনটি আমার মেজ কাকার মহাপ্রয়াণ দিবস। আমাদের বংশের ষষ্ট প্রজন্মের ১ম সদস্যের মহাকালের দিকে যাত্রার দিন। ১৯৯৯ সালের ২১শে ডিসেম্বর মধ্য দুপুরে এক মেজর স্ট্রোকে শরীরের ডান দিকটা সম্পূর্ণ রূপে বিকল হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি মূলত শয্যাশায়ী হয়ে দিনাতিপাত করেছেন।
যার ৫-৬ মাস পরে সৎ, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক এ আয়কর কর্মকর্তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আমার মেজ কাকিও ২০০১ সাল থেকে এক মেজর স্ট্রোকে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন।
আমার বাবা-কাকারা তিন ভাই। কোন বোন নেই। আমরা এবং বড় কাকার পরিবার শহরে স্থায়ীভাবে থাকি।
কাকা-কাকি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের সাথে নিয়ে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা কোনভাবেই গ্রাম ছাড়তে রাজি হননি। গ্রামে থাকার সময় আমরা যৌথ পরিবার ছিলাম। গ্রামের বিষয়-সম্পত্তি এখনও তাই আছে। কাকার তিন বিবাহিত মেয়ে, এক ছেলে।
একমাত্র ছেলে ফ্রান্স প্রবাসী। সেই ছেলে ১৮ সেপ্টেম্বর তিন মাসের জন্য দেশে আসবে, যা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা। ভাবী একাই গ্রামে কাকা-কাকির দেখাশোনা করেন।
সব সময় কাকা-কাকিকে দেখতে গ্রামে আমাদের যেতে হয়। বিশেষত ঈদের সময় আমাদের সব ভাইবোনদের মিলন মেলা বসে গ্রামে।
অনেক মজা করে দারুন সময় কাটে। মূলত কাকা-কাকির সাথে ঈদ করাই উদ্দেশ্য। ঈদের সময় আমরা অনেক দিন গ্রামে থাকি। ঈদের মাঠ অনেকটা দূরে বিধায় কাকাকে ভাইদের গাড়িতে করে সবাই মিলে মাঠে নিয়ে যেতাম। কাকা-কাকি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে একবারও এর ব্যত্যয় হয়নি।
শুধু ব্যতিক্রম ছিল এইবার ঈদে। আমাদের দুই পরিবারেরই কিছু ঝামেলার কারণে ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। এমনকি তাঁদের কোন মেয়েও ঝামেলার কারণে আসতে পারেনি। ঈদের দিনের আকাশের মতই সবার মনই ছিল ভীষণ খারাপ। তবে অনেকক্ষণ কাকা-কাকি, ভাবী এবং বাড়ির অন্যদের সাথে ফোনে কথা বলেছি।
তাঁদের সাথে ঈদ করতে পারিনি বলে ক্ষমা চেয়েছি, দুঃখ প্রকাশ করেছি। তবে ঈদের পর ৪ সেপ্টেম্বর সবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তখন তাঁরা হাসি মুখেই কথা বলেছেন। হয়তো সেই হাসির আড়ালে লুকায়িত ছিল গরল-অভিমান।
চোখের পাতায় ভাসছিল পুরনো দিন গুলো।
যখন পাশের বাড়ির এক বড় ভাই আমার কাঁদ থেকে খাটিয়ার হাতল নিজের কাঁদে বুঝে নিচ্ছে, তখন সৎভিৎ ফিরে পেলাম। আমার কাঁদ থেকে যেন একটা আস্ত পাহাড় নেমে গেল! সামান্য একটা লাশ এত ভারী হতে পারে কেউ চিন্তাও করতে পারবে না! চোখ দিয়ে তখন অঝরে অশ্রু ঝরছিল। জানাজা শেষে নিজের হাতে নিষ্ঠুর মাটির বুকে শুয়ে রাখলাম এমন জনকে, যার হাতেই একদিন বপিত হয়েছিল আগামী দিনের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নসারথী এখন স্বপ্নলোকের ঊর্ধ্বে।
আবার হয়তো আমদের জীবনে ঈদ আসবে।
সেই ঈদের চাঁদে খুঁজে নিতে হবে প্রিয় কাকাকে! তবে ভুলেও কখনো আকাশের মিটিমিটি তারার পানে তাকিয়ে, কাকার বিদেহী আত্মার কাছে বা আল্লাহ্ তা’লার কাছে একটি ঈদকে মনে করে ক্ষমা চাইব না। কিছু ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া যে চরম অন্যায্য। বরং সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করাটাই অনেক বেশি ন্যায্য।
***আমাদের জীবনে কাকার অবদানকে ভাষায় প্রকাশ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
গত ৭-৮দিন ধরে লিখছি! অনেক অগোছালো একটা পোস্ট পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সবাই আমার কাকার বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করবেন। ***
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।