আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোবটিক্স ফীচার নির্মাতার দিনকাল - ২

রোবটিক্স ফীচার নির্মাতার দিনকাল - ১ পিটির আচরণ মানুষের মত পুরোপুরি না হলেও বিভিন্ন ফীচারের কারণে তার ব্যবহারটা মোটামুটি একটি বোকাসোকা মেয়ের মত। আমি সিকিউরিটি চীফ বাটুকে বলে রেখেছি, পিটির প্রতিটি মুভমেন্ট ভয়েসসহ ভিডিও করে রেখে আমাকে দিতে। তবে অন্যদের কাছে যেন গোপন রাখা হয়। কারণ, ভিডিও হচ্ছে জানলে অন্যরা হয়ত স্বাভাবিক আচরণ করবেনা। দ্বিতীয় দিনের ভিডিওতে দেখি, রিকি পিটির সাথে হ্যান্ডশেক করল।

তারপর বলল, "আমি তাহলে তোমাকে স্পর্শ করতে পারি?" "যদি তুমি খুশি হও", মিস্টি হেসে পিটি উত্তর দিতেই রিকির হাত পিটির বুকে স্তনগুলো টিপতে শুরু করল। বাটুর দিকে তাকাতেই সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, "ডাক (ডক্টর না বলে ডাক বলে ডাকে আমাকে), পিটি মানুষ বা আমাদের কোম্পানীর এমপ্লয়ী নয়। আমরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ আনতে পারিনা, যদিও পিটি দেখতে মানুষের মত আর সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ। " আমি স্ক্রীনের দিকে ফিরে বললাম, "পারভার্ট"। পিটি প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রইল।

নিকি এসে পিটির পাশে দাঁড়াতেই রিকি চট করে নিকির বুকের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে উপরে নিকির চোখের দিকে তাকিয়ে জমে গেল। সোজা গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল কোন কথা না বলে। নিকি পিটির দিকে তাকাতেই পিটি কেমন একটা উদাসী ভাব করল। এখনতো হোটেল ফীচার অনুযায়ী নিকির স্বাস্থ্যের কথা জিজ্ঞাসা করার কথা। হয়ত ৯০% নিয়মের কারণে পিটি এই ফীচারটা মাঝে মাঝে স্কিপ করে এড়িয়ে যাচ্ছে।

আর নয়ত, হোটেল ফীচারে এটা এডজাস্ট করা আছে যেন বারে বারে কুশল জিজ্ঞাসা করে বিরক্ত করা না হয়। নিকি আস্তে করে পিটির কাছে মুখ এনে বলল, "ওদের এমনটা করতে দিওনা। এটা মেয়েদের জন্য ভালনা। " "তাতে তুমি খুশি হবে?" নিকি চুপ করে তাকিয়ে থাকল। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তারা দুটো সুন্দরী মেয়ের মত আচরণ করছে।

এমনকি, নিকিও অবচেতন মনে পিটিকে আরেকটা মেয়ে হিসেবে মনে করে তাকে আমাদের অফিসে তার একচ্ছত্র সৌন্দর্যের রাণীর আসনের জন্য হুমকি মনে করছে। নিকি একটু কি চিন্তা করে আবার বলল, "আচ্ছা, তোমার গডফাদার কি তোমাকে স্পর্শ করেন?" "গডফাদার স্পর্শ করলে কি তুমি খুশি হবে?" নিকি থতমত খেয়ে গেল। আমি জানি, পিটি বলতে চেয়েছে পিটিকে স্পর্শ করার কথা। কিন্তু, নিকির মাথায় নিকিকে স্পর্শ করা মনে হয়েছে। আমি আড় চোখে বাটুর দিকে তাকালাম।

"ইয়াপ! ডাক, সত্যিই তাহলে এটা ঘটছে। এক মৌচাকে দুই রাণী। " আমার চিন্তা নানাদিকে দৌড়াতে শুরু করল। রিকি আমার কথা জিজ্ঞাসা করল কেন? হয়ত পিটি সাফল্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলেই আমার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। পিটিকে আমার সাফল্য হিসেবে শুধু নিকিই দেখেনি, সিইও ডেকে পাঠালেন।

"তোমার রোবটটা মানুষ হিসেবে উৎরে যেতে পারবে বলে শুনলাম। আমি ইমপ্রেসড। তোমাকে আমি একজন নতুন রিক্রুট দিচ্ছি, এডি। বেশিদিন হয়নি জয়েন করেছে। তোমার কাজে সাহায্য করবে আর কাজের গতি বাড়বে।

" "কিন্তু, স্যার, নতুন লোককে শেখাতে গেলেতো আরো সময় নষ্ট হয়। " "তোমার সুবিধার জন্য ওকে দেয়া হচ্ছে। তোমার কাজ ওকে কিছু কিছু করে ভাগ করে দিলে তোমার লোড কমবে। যাই হোক, তুমি এই রোবটকে যতটা সম্ভব মানুষের মত করার চেষ্টা করবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। " "স্যার, মানুষের মত আচরণের জন্য শেখা আর নিজেকে গুছিয়ে দেখে রাখার ফীচার দুটো অনেক ইম্প্রোভ করতে হবে।

আর, আচরণের ফীচারটাও উন্নত করতে হবে যেন সংস্কৃতি-ঐতিহ্য অনুযায়ী আচরণ করতে পারে। আর সবশেষে, কমন-সেন্স ফীচারটায় ম্যাসিভ কাজ করতে হবে। " আমার টেকনিক্যাল কথা শুরু হলেই মানুষের মাঝে একটা বিতৃষ্ণা চলে আসে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম। মোটা মত একটা ছেলে বসে আছে।

এতদিন আমার রুম ছিল, এখন এটা আমার ডিপার্টমেন্ট এর রুম হয়ে গেল। খারাপ না, পিটির সাথে মাঝে মাঝে কথা বলতে পারবে। "এডি কি বাংলা নাম?" "আপনি ইচ্ছা করলে আমার বাবা-মার দেয়া আদিল বলে ডাকতে পারেন। " ব্যাটাতো ভালই তেলবাজ আছে। বাবা-মায়ের দেয়া নাম পছন্দ হয়নি, এখন আমার জন্য আবার সেই আগের নামে ফেরত যেতে রাজী আছে।

"এডি, তোমার পিটির সাথে পরিচয় হয়েছে?" "মিস পিটির সাথে কুশল বিনিময় হয়েছে। " "পিটি হচ্ছে প্রোটোটাইপ। " ব্যাটা হা করে আছে। "ও একটা রোবট। তুমি কি আজকেই প্রথম এই অফিসে পা রাখলে?" "ও হ্যাঁ না, আমি আসলে ... তাহলে, এই সেই বড় প্রজেক্ট? এটার জন্যই আমাকে এই ডিপার্টমেন্টে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে?" "বড় প্রজেক্ট কে বলল?" "সিইও স্যার।

উনি আমার কাজ দেখে বললেন, এসব মামুলী ফিচার তৈরি করার বদলে রিয়েল চ্যালেঞ্জিং ফীচার তৈরি করতে চাই কিনা। " আমি খুশিই হলাম। ছেলেটা স্মার্ট। আমাকে খুশি করার জন্য হোক আর যেজন্যই হোক, কথাগুলো শুনে বেশ ভালই লাগছে। এরকম একজন কাজে সাহায্য করলে খারাপ হয়না।

"আচ্ছা, তুমি পিটির ফীচার, ফাংশন, প্রোগ্রামগুলো স্টাডি করে দেখতে পার। আসিমভের রোবটিক্সের তিন আইন দিয়ে এটা বাধা। তবে, পুরো কাজ করছে কিনা ফাংশনগুলো, এখনো অনেক টেস্ট করা প্রয়োজন। তুমি, কোডগুলো চেক করে দেখ ভুলের জন্য। পিটি আমাকে ডাকে গডফাদার।

তুমি আমাকে ডাক বলে ডাকতে পার। পিটির সাথে নিয়মিত কথা বলবে। ওর মাঝে লার্নিং ফীচার পরীক্ষামূলক ভাবে দেয়া আছে। ওকে শেখানোর চেষ্টা করবে। আর, অবজার্ভ করবে শেখার অগ্রগতি, ফলাফল ও সাইড এফেক্ট।

" "ওকে ডাক্। " ঘুরে তাকালাম পিটির দিকে। আমি তাকাতেই পিটি একটু হাসল। এতক্ষণ চুপ করে শান্ত একটা মেয়ের মত বসেছিল। আসলে সোন্দর্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

কি ভাবছিলাম, কি বলতে গেলাম, থমকে গিয়ে একটু চিন্তা করে বললাম, "পিটি তোমাকে আমি ভোকাবুলারী ফিচারটা দিচ্ছি। তুমি পুরনো কিছু সাহিত্য পড়ে বোঝার চেষ্টা করবে আর আমার সাথে আলোচনা করবে, কি শিখলে। কিছু বুঝতে না পারলে, আমাদের জিজ্ঞাসা করবে। " "ঠিক আছে, গডফাদার। " রোবটের জন্য স্টাডি করা ব্যাপারটা বেশ কঠিন।

আমরা যেমন ১০ পাতা লেখা মুখস্ত করতে না পারলেও তার সারাংশ সহজে মনে রাখতে পারি ও বলে দিতে পারি চট করে, রোবটের সেক্ষেত্রে উল্টো। এখনো কোন সাহিত্যের সারাংশ ঠিকমত করার মত ভাল কোন ফীচার তৈরি হয়নি। পিটি হয়ত ঝট করে পুরো লেখাটা তার মেমরিতে কপি করে রাখতে পারবে। কিন্তু, সেই লেখা থেকে সারাংশ বের করে কমন-সেন্স বিষয়ে শেখাটা একটু ঝামেলার হবে। যাই হোক, আমি তাকে প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটা ডায়েরী পড়তে দিলাম।

আধঘন্টা পর পিটি যখন বইটা তার মেমরিতে কপি করে নিল, "গডফাদার, এখানে লেখক নিজেকে 'ধইঞ্চা' বলছে কেন?" "কি যন্ত্রণা! কোথায় বলেছে?" "এখানে লিখেছে, 'সারা জীবন কলুর বলদের মত খেটেই গেলাম, পুরা ধইঞ্চা অবস্থা। ' কলুর বলদ অর্থাৎ, যে পরিশ্রম করার পরেও ফলভোগী নয়, বাগধারা সমাহারে লেখা। আর, ধইঞ্চা সম্পর্কে এনসাইক্লোপিডিয়াতে লেখা আছে, 'ধইঞ্চা এক ধরণের পাট গাছ। খুব সহজেই পতিত জমিতে জন্মায়, চাষের খরচ কম। এর কচি পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, পাটখড়ি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সার তৈরি করা যায়, গবাদী পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পাটের আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি করা যায়। ' বোঝা গেলনা। বলদের মত খাটলেও বলদ না বলে ধইঞ্চা গাছ বলল কেন?" আমি পিটির প্রভু। আমাকে খুশি করার কথা পিটির। কিন্তু, আমার চেহারা দেখে এডি ছোঁড়াটা বুঝে গেলেও পিটি এতক্ষণ ধরে ধইঞ্চার বিবরণ দিয়ে গেছে।

৯০% খুশি করার কথা আমাকে, এরপর অন্য ফাংশন গুলো কাজ করে অন্যদের খুশি করার কথা। কিন্তু, ৯০% এর নিয়মটা আসলে 'বেন্ড করার নিয়ম'। বিভিন্ন কনফ্লিকটিং ফীচার বা নিয়মের সময় একটা নিয়ম একটু বেন্ড করে অন্যটা করা। কিন্তু, এটা কোন অবস্থাতেই যেন ৯০% এর উপর না হয়, এই। মনে হচ্ছে, কোন গোলমাল আছে এখানে।

যাই হোক, ছোট শিশুদের উপর যেমন রাগ করে থাকা যায়না, তেমনি পিটির সরল চাহনীর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম, "এখানে নিজেকে গালি দেয়া হয়েছে। " "গালি কি জিনিষ?" "মানুষ রাগ করলে একে অপরকে বিভিন্ন খারাপ জিনিষ বলে ডাকে। " "কেন?" "এতে রাগ কমে। " "রাগ কি?" হোটেল ফীচারে কেও রেগে গেলে কি করতে হবে তা বলা থাকলেও রাগ কি সেটা বোঝার মত ক্ষমতা পিটির নেই। "রাগ করলে মানুষ অযৌক্তিক আচরণ করে।

যেমন, যার যেটা নাম নয়, সেটা বলে ডাকে। অযৌক্তিক আচরণ করে বলে তাদের থেকে সাবধান থাকতে হয় তখন। নিজের নিরাপত্তার জন্য। এখানে রাগ হয়ে নিজেকে গালি দিচ্ছে। " "কিন্তু, এখানে বলদ না বলে ধইঞ্চা বলা হচ্ছে কেন?" "এখানে যুক্তি খোজাটা ঠিক হচ্ছেনা।

" "কিন্তু গডফাদার, ধইঞ্চাতো খুব উপকারী। " "দেখি গল্পটা। " কিছুক্ষণ পড়ার পর বললাম, "ধইঞ্চা উপকারী হলেও মানুষ একে মূল্যায়ন করেনা, খুব সহজেই অনেক জন্মায় বলে। তাই, লেখক নিজেকে ধইঞ্চা বলছেন। " "গডফাদার, তুমিও কি নিজেকে ধইঞ্চা বল?" "কেন মনে হল তোমার এটা?" "তুমিও অনেক কাজ কর।

কিন্তু, অন্যরা তোমাকে মূল্যায়ন করেনা। " আমি আড়চোখে এডির দিকে তাকালাম। ব্যাটা চালাকের হাড্ডি, এমন ভাব করছে যেন কিছুই শুনতেই পায়নি। অথচ এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিল। আমি পিটির দিকে তাকিয়ে নরম করে বললাম, "না পিটি, আমি নিজেকে ধইঞ্চা বলিনা।

তুমি পড় আর প্রশ্ন মনে আসলে মেমরীতে জমিয়ে রাখ। পরে আমাদের সাথে আলোচনা কর। " পিটিকে খানিকটা মানুষের মত আচরণ করানোর জন্য আর পড়ার স্পীড কমানোর ব্যবস্থা করে দিলাম। এখন সে স্ক্রীন থেকে দেখে দেখে পড়ছে। আমি মনোযোগ দিলাম রিকিরে শায়েস্তা করার দিকে।

লীনোর কাছে গিয়ে বললাম, "রিকি পিটির গায়ে হাত দিচ্ছে, কি করা যায়?" "হ্যাল্লো ডাক, আমাদের কথা মনে পড়ল তবে?" "কি বলছেন এসব? আমি একটু নিজের মত থাকি, এই আরকি। " "ঠিক আছে, কিন্তু, তোমার এবারের কাজটা চমৎকার হয়েছে। কেমন মিস্টি একটা মেয়ে। " "লীনো, ও একটা রোবট, আর রিকি ওর গায়ে হাত দিচ্ছে। " আমার নিজের কাছেই আমার কথাগুলো বিদঘুটে ঠেকল।

রোবটের গায়ে হাত দিলে এমন কি হয়, তা যাই হোক, রিকি আমাকে সাইকো বলে, ওকে দেখাচ্ছি মজা। লীনো একটু চিন্তা করে বলল, "আমি পিটির শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হাত দিলে ইলেকট্রিক শক লাগার ব্যবস্থা করে রাখতে পারি। কিন্তু, পিটি আসিমভের নিয়ম মেনে শক দিতে পারবেকি?" ও শীট! এটাতো আমার আগে খেয়াল হয়নি। জলদি কথা ঘুড়িয়ে বললাম, "এটাই এক্সপেরিমেন্টাল পারপাজে টেস্ট করার জন্য। শক লেগে মারা যেন না যায়, আর শক দেবার অথরিটি থাকবে পিটির কাছে।

আমার তাহলে আসিমভের নিয়মটাও পরীক্ষা করা হয়ে যাবে। " "ঠিক আছে, কিন্তু, তুমি আমাকে পিটিকে কতটুকে সশস্ত্র করতে হবে, তা মেইল করে অথরাইজ করে দেবে। আমি রেসপন্সিবিলিটি নিতে চাইব না। আর, যেকোন প্রয়োজনে আমার কাছে এসো। এই প্রজেক্টে আমিও থাকতে চাই।

" "ঠিক আছে, ধন্যবাদ। " হেসে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আগে আমার রুমে তেমন কেউ আসতনা (আমার চোখা চোখা রসিকতার জন্য)। এখন প্রায়ই অফিসের লোকজন এসে পিটির সাথে কুশল বিনিময় করে যায়। এমনকি নিকি পর্যন্ত ঘুরতে এল।

তবে, নিকি আর পিটি কেমন যেন ড্রামা সিরিয়ালের মেয়েদের মত করে কথা বলে। নিকি এসে অন্যদের মত আমাকে অবজ্ঞা করে পিটির সাথে কথা বলার বদলে এসেই আমার টেবিলের কোণায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল। আমি চোখ তুলে তাকিয়ে বুঝে উঠতে পারলাম না, কি বলব বা করব। ওদিকে দেখি এডি কান খাড়া করে রেখেছে। পিটি স্ক্রীন থেকে একটু চোখ তুলে তাকিয়ে আবার পড়ায় মন দিল।

নিকি নরম করে জিজ্ঞাসা করল, "কেমন আছ?" "ভাল, তুমি?" "আমি কেমন থাকি সেই খোঁজ নেবার কি আর তোমার সময় আছে। " "সরি, আমি ভেবেছিলাম, তুমি হয়ত অনাহূত ভাবে তোমার কুশল জিজ্ঞাসা করলে বিরক্ত হও। " "ওহ! সেই একদিন কি বলেছিলাম, তা এখনো মনে রেখেছ?" নিকির হাসি দেখে আমার বুক ধ্বক করে উঠল। তবু, নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "আমি আসলে পিটিকে নিয়ে একটু ব্যস্ত। " "পিটিকে নিয়ে খেলবে বুঝি? আমার সাথে খেলা করবে না?" নিকির হাসি দেখে আস্তে করে লুকিয়ে একটা ঢোক গিললাম।

কথা ঘুরাবার জন্য বললাম, "ও হচ্ছে এডি, আর পিটির সাথে পরিচয় হয়েছে নিশ্চয়ই। " এডি ছোকরাটা চোখ তুলে বলল, "ওয়াসসাপ?" "শাট-আপ!" স্বভাবসুলভ নিকি স্টাইলে এডিকে চুপ করিয়ে দিল নিকি। পিটি হেসে বলল, "কেমন আছ নিকি?" নিকি অহংকারী ভাবে হেঁটে বেরিয়ে যাবার সময় আস্তে করে বলল, "বিচ"। পিটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, "গডফাদার, নিকি কি রেগে গেছে?" "আমি ঠিক জানিনা পিটি। নিকির মনে কি আছে, এটা আমি হয়ত কোনদিন বুঝতে পারবনা।

" "ও মনে হয় আমাদের কাউকে গালি দিয়ে গেল। " আমার আর এডির মাঝে চোখাচোখি হয়ে গেল। গালি দেয়া আর তার ফলশ্রুতিতে রাগ করার ব্যাপারটা পিটি ধরতে পারলেও কাকে গালি দিয়েছে, সেটা ধরতে পারেনি। কমনসেন্স আর লার্নিং ফীচারগুলো কাজ করছে ভালই। আমি এডির দিকে ঘুরে বললাম, "পিটিকে একটা লাই ডিটেকশন ফীচার দিয়ে দেও।

" "তাহলেতো আমরা পিটিকে কথা বলে প্রোগ্রাম করতে পারবনা সহজে। " হুম, তা অবশ্য ঠিকই বলেছে ছোঁড়াটা। পিটি যদি আমার নির্দেশ মানার বদলে সত্য-মিথ্যা দিয়ে বিচার শুরু করে? পিটিকে ইতিমধ্য বলা আছে, তার শরীরে রিকি বা অন্য কেউ বিনা অনুমতিতে স্পর্শ করলে মাইল্ড ইলেকট্রিক শক দিয়ে ওয়ার্নিং দিতে। এটা তার খুব বন্ধু বা প্রভুর ক্ষেত্রে যেন করা না হয়, তাও বলা আছে। তবে, ব্যাপারটা ঠিকমত তার কপোট্রনে ঢোকানো গেছে বলে আমার মনে হয়না।

এর মাঝে আসিমভের নিয়ম কতটুকু প্রভাব ফেলে, তা রিকির সাথে দেখা হলেই বোঝা যাবে। এছাড়াও বিভিন্ন অনভূতি নিয়েও পিটিকে কিছু ধারণা দিতে হবে। কমন্সেন্সের জন্যেই সেগুলো এড়ানো ঠিক হবেনা। জার্মান Schadenfreude (পরের দুর্দশায় আনন্দ) শব্দটি যেমন শুধু জার্মান ভাষায় পাওয়া যায়, তেমনি পরশ্রীকাতরতা শুধু বাংলা ভাষায় পাওয়া যায়। এস্কিমোদের ভাষায় রাগ জাতীয় কোন শব্দ নেই এবং তারা রাগের বহিঃপ্রকাশ করেনা।

ইউরোপীয়ানরা পৌরুষ, সাহস বা বীরত্ব দেখানোর জন্য চালিত হয়। আর, জাপানীরা নিজেদের পরিবারকে অসম্মান করার ভয়ে চালিত হয়। আফ্রিকার বুশম্যানরা বিষন্ন বা দুঃখিত হয়না। তারা ভাবে, এটা এক ধরণের অসুস্থতা। একই মানবজাতির মাঝে ইমোশনে কত পার্থক্য! এস্কিমোরা যদি রাগ করতে না পারে, পিটি রাগ না করতে পারলেওতো কোন সমস্যা হবার কথা না।

নাহয় ওর মাঝে কিছু কিছু ইমোশনের প্রভাব নেই। এতে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। পিটি চালিত হয় তার প্রভু, বন্ধু ও অন্যদের খুশি করার জন্য। কিন্তু, পিটি যদি রিকিকে শক দিতে পারে, তার মানে সে আসিমভের নিয়মকে বেন্ড করে ফেলতে পারবে। আমরাও অনেক সময় আইন ভাঙ্গার ক্ষমতা রাখি।

শাস্তির ভয়ে আমরা কেউ কেউ আইন মানি। কেউ হয়ত মোর‍্যালিটি বা নৈতিকতার জন্য আইন ভাংগিনা। কিন্তু, এটা নিয়ে অত বড় শোরগোল হবেনা, যতটা শোরগোল হবে পিটিকে নিয়ে। মনোযোগ দিয়ে সুন্দর একটা পুতুলের মত মেয়ে পিটি স্ক্রীনে তাকিয়ে বই পড়ছে। আসিমভের নিয়ম বেন্ড করতে পারে জানলে কেউ পিটিকে টিকে থাকতে দিবেনা।

নাহ, অনেক কাজ করতে হবে পিটিকে নিয়ে। (চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।