আজ আমি যে সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করব তার নাম 12 Angry Men অর্থাৎ ১২ জন রাগান্বিত ব্যক্তি। সিনেমা বোদ্ধারা অবশ্যই সিনেমাটি দেখে থাকবেন। কারণ এই সিনেমার আইএমডিবি র্যাংকিং ৬ অতএব তাদের জন্য আমার এই লেখা নয়, এই লেখা তাদের জন্য যারা সিনেমাটি দেখেন নি। আমি সিনেমাটি দেখে যে রকম মুগ্ধ হয়েছি আমার লেখায় ততটা মুগ্ধতা ফুটবে না জানি তবু আমার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যদি আর একজনও মুগ্ধতার সন্ধান পায় সেই প্রত্যাশায় এই আনাড়ী রিভিউ। তার পরও যদি কেউ আরও ভাল রিভিউ পড়তে চান তো ঘুরে আসুন এখান থেকে।
অত্যন্ত সাধারণ একটি কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমাকে অসাধারণ উপমায় কিভাবে উন্নীত করা যায়, তা এই ছবিতে পরিচালক দেখিয়ে দিয়েছেন হাতে কলমে। এক ঘণ্টা ছত্রিশ মিনিটের সিনেমাটির এক ঘণ্টা পঁচিশ মিনিটের দৃশ্যায়ন একটি বদ্ধ কক্ষে যেখানে বার জন মানুষ ব্যতিত উল্লেখ করার মত আর কোন উপাদান নেই। কিন্তু একটি মুহূর্তের জন্য ক্লান্তি কিংবা বিরক্তি এই সিনেমাতে আপনি খুঁজে পাবেন না। বাকবিতণ্ডা আর নানামুখী চরিত্রের অসাধারণ সংমিশ্রণ সিনেমাটিকে করেছে অসাধারণ। পরিচালক অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং পরিস্কারভাবে চরিত্রগুলো বাছাই এবং তাদের ডায়লগগুলো তৈরি করেছেন।
ফলে সিনেমাটি লাভ করেছে চির যৌবন। আমার মতে এই সিনেমাটি পুরনো হবে না কখনো। ১৯৫৭ সালের সাদাকালো একটি চলচ্চিত্র ২০১২ সালে এইচডি ছবির যুগে এসেও আপনাকে আনন্দিত করবে এবং বিমোহিত করবে ঠিক একই মহিমায়।
এবার আসি চলচ্চিত্রের কাহিনীতে। আসলে কাহিনীটি তেমন কিছুই নয়।
একটি ছেলে তার বাবাকে খুন করেছে কিনা সেই বিষয়ে মামলার সিদ্ধান্তের জন্য একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হয় যার সদস্য এই বার জন। এবং তারা যদি একমত হয়ে বলে যে ছেলেটি দোষী তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে নতুবা বিচারকার্যটি পুনরায় বিবেচনা করা হবে। বার জন জুরি একটি কক্ষে বসে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করে। কাহিনী বলতে এটুকুই। কিন্তু এই সিনেমা যদি কেউ কাহিনী দেখার জন্য বসেন তবে আমি বলব তিনি এতে কিছুই খুজে পাবেন না।
কারণ এই সিনেমার মাহাত্ম্য কাহিনীতে নয় বরং সিনেমার পরিচালনায়। একটি নিরস সাদামাটা কাহিনীর মধ্যে আরও অনেকগুলো উপাদানকে যুক্ত করে পরিচালক এর গতিকে করেছেন মোহনীয় আর দর্শকদের করেছেন মন্ত্রমুগ্ধ। আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল লেগেছে জুরিদের চরিত্রের বাছাই এবং সেই অনুযায়ী তাদের আচরণ। এক কথায় অসাধারণ। প্রতিটি চরিত্র বাস্তবিক এবং ইউনিক।
একটি কক্ষের ভিতর একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে ১২টি পৃথক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা আমার কাছে অসম্ভব একটি কাজ মনে হয়েছে। কিন্তু পরিচালক তা করতে সচেষ্ট হয়েছেন অত্যন্ত সুচারুরূপে যা এই ছবিটার মূল প্রাণ। এ ছাড়া ডায়লগ তো আছেই। মানুষের মধ্য বদ্ধমূল বিশ্বাস এবং প্রমাণিত প্রমাণের বাইরেও যে ভাবনার গণ্ডী থাকতে পারে তা এই সিনেমাটি সুন্দর করে তুলে ধরেছে।
আজ এ পর্যন্তই।
ভাল লাগলে মতামত জানাতে ভুলবেন না। আর ভুল হলে ধরিয়ে দেওয়াটা আপনাদের দায়িত্ব। ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।