আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রদীপের নিচে অন্ধকার...

......... ১। “কিরে তোর নাম কী?” “টিয়া” “আমার নাম কী?” “আউন” মামুন হতাশ হয়। টিয়া পাখিটা তার নাম বলতে পারে না। মামুনকে আউন ডাকে। যেসব শব্দে দুই ঠোঁট এক করতে হয় সেসব সে বলতে পারে না।

“কীরে তোর পাখি কথা শিখেছে?” মামুনের বোন জিজ্ঞেস করছে। “কিছু কিছু পারে। ” “কই দেখি” মামুন জিজ্ঞেস করে, “কীরে তোর নাম কী?” “টিয়া” “আমার নাম কী?” “আউন” ভাই বোন একসাথে হেসে উঠে। “আপুর নাম কী?” “আরিয়া” “আরিয়া না, মারিয়া। বল মারিয়া”, মামুনের বোন বলে উঠে।

“আরিয়া, আরিয়া!” দুই ভাইবোন একসাথে হাসতে থাকে। মামুন এইচ,এস,সি তে পড়ে। তার পাখি পোষার শখ। ক্লাস সেভেন থেকে সে পাখি পোষা শুরু করে। আগের কোন পাখিকে সে কথা বলাতে পারেনি।

এই প্রথম সে টিয়াটাকে দিয়ে কথা বলাতে পারছে। কিন্তু আফসোস একটাই- মামুনকে আউন বলে, মারিয়াকে আরিয়া ডাকে। “কী তোমার পাখি কথা বলতে পারে?” সামনের বাসার বারান্দা থেকে মীরা বলছে। “অল্প অল্প পারে। ” “আমি একদিন এসে শুনব।

” মাথা নাড়ে মামুন। “তোমার নামটাও শিখিয়ে দিব ওকে। ” মামুন বলে। “আমার নামও পারবে?” “শিখায় দিলে সব পারবে। ” মীরাও এইচ,এস,সি তে পড়ে।

মামুনদের সামনের বাসায় থাকে। মামুন মীরাকে পছন্দ করে, কিন্তু বলতে পারে না। ওরা আবার একই স্যারের বাসায় পড়ে। তাই মাঝে মাঝে ফোনেও কথা হয়। মামুন তাও মনের কথা বলতে পারে না।

বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কীসের কী। বলতে যাওয়ার আগে হাত-পা ঠান্ডা বরফ। মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় না। ২। মামুন টিয়াটাকে শেখানো শুরু করেছে।

“সামনের বাসার ওর নাম কী?” “ইরা!” “ইরা নাতো মীরা। বল মীরা!” “ইরা! ইরা!!” মামুনের মেজাজ খারাপ হয়। কী বদমাশ পাখি রে বাবা!” রাগের মাথায় সে টিয়াকে শিখাতে থাকে... “মামুন মীরাকে ভালবাসে” “আউন ইরাকে আলুয়াসে” মামুন হাসতে থাকে। ইশ টিয়াটার মত সেও যদি বলতে পারত মীরাকে। টিয়াটাকে নিজের চেয়ে অনেক সাহসী মনে হতে থাকে মামুনের।

৩। মামুন বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। টিয়া পাখিটার গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ছে। ভিজুক, খোলা আকাশের নিচে থাকলে তো এমনিতেই ভিজত। এমনটা ভাবতে ভাবতে মামুন তার টিয়া পাখির সাথে বৃষ্টির ফোঁটাতে ভিজতে থাকে।

এমন সময় ফোন আসে। মীরা ফোন করেছে। “স্যারের বাসায় আজকে যাবা? এত বৃষ্টির মধ্যে যেতে ইচ্ছা করছে না!” মীরা বলছে মামুনকে। “আমারও যেতে ইচ্ছা করছে না” মামুন বলে। “থাক তাহলে বাদ দিয়ে একটা ঘুম দেই।

” “আউন ইরাকে আলুয়াসে!” পাশ থেকে টিয়াটা বলে উঠে। মামুন কী করবে বুঝতে পারে না। সে টিয়াটাকে চুপ করানোর চেষ্টা করে। তর্জনী ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে সে টিয়াটাকে চুপ করতে বলে। টিয়া বুঝতে পারে না মামুনের কথা।

সে আরও জোরে বলতে থাকে... “আউন ইরাকে আলুয়াসে!” “কী বলে তোমার টিয়া?” মীরা হাসতে থাকে। সে বুঝে ফেলেছে ঘটনা। মামুনের হঠাত মনে হয় এটাই বলার সময়। বৃষ্টির শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে সে তার মনের কথা বলে ফেলে। বৃষ্টি পড়ছে।

বৃষ্টির সাথে দুইজন স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে। স্বপ্ন সবসময় সুন্দর হয়। সুন্দর সেই স্বপ্নের প্রদীপের নিচের অন্ধকারটুকু কেউ দেখতে পায় না। ৪। “আজকে বিকালে তোমাদের বাসায় আসব।

তোমার টিয়া পাখির কথা শুনব। ” মীরা ফোনে বলে মামুনকে। “চলে এস। আপুও ঐদিন তোমার কথা বলছিল। ” “আপু কী আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে জানে?” “জানি না।

তবে মনে হয় বুঝে। দিনের এতক্ষণ বারান্দায় কাটাই, না বুঝার কোন কারণ নাই। ” হাসতে থাকে মীরা। মামুনের মনে হতে থাকে হাসিটা এত সুন্দর কেন? ৫। “কিরে তোর নাম কী?” “টিয়া” “আমার নাম কী?” “আউন” “সামনের বাসার ওর নাম কী?” “ইরা!” “কী তোমার পাখি আমাকে ইরা বলছে কেন?” মীরা রেগে উঠে।

“ও দুই ঠোঁট একসাথে করে কোন কথা বলতে পারে না। ” মামুন অসহায়ভাবে বলে। “তোমার নিশ্চয়ই অন্য কোন ইরা নামের মেয়ের সাথে কিছু ছিল। ” মামুন অবাক হয়। হতাশ হয়ে বলে, “না, সত্যি না!” “আমার বিশ্বাস হয় নাহ!” রেগে বলতে থাকে মীরা।

“আউন ইরাকে আলুয়াসে!” আবার বলে উঠে টিয়া পাখিটা। প্রচন্ড রাগে খাঁচায় ধাক্কা দেয় মীরা। খাঁচাটা দুলে উঠে। টিয়া পাখিটা ভয়ে ডানা ঝাঁপটাতে শুরু করে। “আরে কী কর।

”, মামুন বলে উঠে। কিছু না বলে গটগট করে বের হয়ে যেতে থাকে মীরা। মামুন ওর হাত ধরে ফেলে। মীরা শান্ত গলায় বলে, “হাত ছাড় মামুন!” মামুন বলে, “আরে একটা টিয়ার কথায় এমন রাগ কর কেন?” “একটা টিয়া যদি এতই সামান্য হয় তবে ছেড়ে দাও এই পাখি। ” শীতল গলায় বলে মীরা।

মামুন বলে, “এটা কী বল তুমি? আমার খুব শখের পাখি। ” “তাহলে তুমি তোমার পাখি নিয়েই থাক! আমাকে আর ফোন দিবা না। আমার চেয়ে তোমার কাছে এই পাখিটাই বড় হয়ে গেল??” চেঁচিয়ে উঠে মীরা। মীরা চলে যায়। হতাশ হয়ে চেয়ে থাকে মামুন।

৬। সেদিন মেঘলা আকাশ। মামুন খাঁচাটা খুলে দেয়। টিয়া পাখিটা খোলা খাঁচায় চুপচাপ বসে থাকে যেন উড়ে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই তার। মামুন হাত দিয়ে বের করে পাখিটা।

দুই হাতে ধরে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর একসময় উড়িয়ে দেয় তাকে। মামুনের মনে হতে থাকে টিয়া পাখিটা স্পষ্ট বলছে, “মামুন মীরাকে ভালবাসে!” টিয়া পাখিটা ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে যেতে থাকে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।