দৈনিক আজাদীর ৫৩ বছরে পদার্পণ এবং পাদ প্রদীপের আলোয় একজন আবদুল মালেক
সাইফ ইসমাইল
৫ সেপ্টেম্বর ২০১২। ভাদ্রের শেষ দশক। কাঠফাটা গরম। সাথে আবহাওয়া দপ্তরের ৩নং সতর্কতা সংকেত। সকালের কাগজে ‘৫৩ বছরে আজাদী’ শিরোনামে বিশেষ কলাম দেখে মনে পড়ল আজ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র ‘দৈনিক আজাদী’র জন্মদিন।
৫৩ বছরে পা রেখেছে আজ। যার পর নাই পুলকিত ও শিহরিত হলাম। আজাদী পরিবারের সাথে কাজ করতে করতে বিগত বছর কয়েকের মধ্যে এ পরিবারেরই একজন হয়ে গেছি, শিহরণ সে ইঙ্গিতই দিল।
নাতিদীর্ঘ কলামজুড়ে পত্রিকা প্রকাশের প্রেক্ষাপট, কঠিন বৈরি পরিবেশ ও প্রতিবেশের বর্ণনার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেকের দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও অনিশ্চিত পথ নির্মাণে নির্লোভ ও ঝুঁকিপূর্ণ আত্মনিয়োগের কথা বারংবার উঠে এসেছে। সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে পত্রিকাটির প্রাক্তন সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীলতার কথা, মাটি ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত আজাদী’র সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা নিয়ে এগিয়ে যাবার গল্প ও প্রেরণার কথা।
মানুষের ভালবাসায় দৈনিক আজাদী কীভাবে তিল তিল করে গড়ে উঠে এ অঞ্চলের সমাজ বিনির্মাণে মুখপত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার ইতিবৃত্ত। এ পত্রিকা কখন কীভাবে চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করে এতদাঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে তার বিবরণ। মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যাঁরা কাজ করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও কার্পণ্য করা হয়নি। শুধুমাত্র বাদ গিয়েছে একটি নাম- সবসময়ই তিনি আড়ালে থেকেছেন, থাকতে চেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন- মোহাম্মদ আবদুল মালেক।
এ লেখা যখন প্রকাশিত হবে (যদি প্রকাশ হয়, না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী) তখন অনেকেই হয়তো আমাকে চাটুকারদের দলে ফেলে দেবেন।
তৈল মর্দন কিংবা রেলগাড়ীর চাকায় হাওয়া দেওয়ার গল্প শুনানোর চেষ্টা করবেন। স্যার, আমাকে ক্ষমা করবেন।
সকালে বিশেষ কলামে দাওয়াত পাওয়ার পর বিকাল বেলার মিলাদ মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। ‘ভুলো মন বগা মিয়া’ হিসাবে খ্যাতি আছে, তাই কাজের মাঝে ডুবে গিয়ে মিলাদ মাহফিল যেন মিস না হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা করে রাখলাম। নির্দ্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগে তৈরী হয়ে নিলাম।
ওয়াক্ত হওয়া মাত্রই আছরের নামাজ আদায় করে দৈনিক আজাদী অফিসে উপস্থিত। একে একে জনারণ্য হয়ে উঠল আজাদী প্রাঙ্গন। কেউ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, কেউ ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলছেন, কেউবা ঝুড়ি ভর্তি ‘তবরুক’ গোছাচ্ছেন আবার কেউবা টিভি-রেডিওতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দোল্লাসে ম’ ম’ করছে চারদিক। চাপরাশি-পিয়নদের নিঃশ্বাস ফেলার জো’ নেই।
সমাজের হোমড়া-চোমড়া থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদভারে মুখরিত ‘আজাদী’। ভালবাসা, মুখরক্ষা, প্রদর্শনেচ্ছা, কার মনে কী আছে, খোদাই জানেন।
যথাসময়ে মিলাদ মাহফিল শুরু হলো। একে একে সবাই এলেন। এলেন না শুধু একজন।
জিজ্ঞাসা করে জানা গেল শহরে নেই, বাইরে গেছেন। মালেক স্যারের অনুপস্থিতি বড্ড চোখে লাগছিল। মৌলভী সাহেব মুনাজাত করছেন। সবার জন্য দোয়া করছেন একই নাম কয়েকবার করে নিচ্ছেন। মালেক সাহেবের জন্যও দোয়া করলেন।
মনে পড়লোÑ ১৯৬০ সালে আজাদী প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬২ সালেই ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইন্তেকাল করেন। হঠাৎ-ই একটি বিষয় মাথায় এলো। আরে, এ পত্রিকা যত না ই্িঞ্জনিয়ার আবদুল খালেকের তার চাইতেও বেশী তৎপুত্র আবদুল মালেকের। মাত্র দু’বছর বয়েসী এ পত্রিকাকে লালনপালন করে ৫২বছর পেরিয়ে ৫৩ বছরে পা ফেলা চাট্টিখানি কোন কথা তো নয়!
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের সুযোগ্য-পুত্র মোহাম্মদ আবদুল মালেক সুষ্ঠুভাবে সংবাদপত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্ধশতক বা সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ করে ফেলেছেন! আমাদের দেশ কিংবা এ উপমহাদেশে এ ঘটনা বিরল। মহাজ্ঞানী-মহাগুনী মানুষদের ভীড়ে তাঁর কথা বেশীরভাগ লোকেরাই হয়তো খেয়াল করেন নি।
দুই বছরের শিশু ‘আজাদী’কে হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে শিখিয়েছেন, সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন। দিনে দিনে মফস্বলের ‘আজাদী’ মহা মহীরুহ হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে। সমাজ বিনির্মাণে সাহস জুগিয়েছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। আগামীদের আসর খুলে ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্বার খুলে দিয়েছে। আর এ মহা মহীরুহের গোড়ায় নীরবে-নিভৃতে, রোদে-খরায় বারি সিঞ্চন করে গেছেন মোহাম্মদ আবদুল মালেক, সাধারণ্যের এম. এ. মালেক।
সুযোগ থাকলে বেহেশ্তে বসেও আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক তাঁর এ সন্তান নিয়ে গর্ববোধ করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।