আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আম্মু তুমি

ভাবিয়া না করিলে কাজ, করিয়া ভাবিও মা কে নিয়ে কতো শত গল্প ,কবিতা গান ,চলচিত্র এমনকি আত্নদান হয়েছে কিন্তু আমি একটি সাধারণ পরিবারের সাধারণ মেয়ে। তাই সহজ ভাষায় শুধু কয়েক ছত্র লেখতে পারি। আর সেটাই আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করছি আম্মু চাকুরি করতেন। আমি গর্ভে আসার পর প্রথম যে ত্যাগটি তিনি স্বীকার করেন তা হল দীর্ঘ চার বছরের সরকারী চাকরি টা ছেড়ে দেন। আমার আগের বড় ভাইটি মারা যাওয়ার কারনে সবসময় প্রয়োজনের বেশি আদর পেয়েছি বলা যায়।

এই কারনে দিনকে দিন আমি একটু জেদী আর একরোখা স্বভাবের হয়ে উঠেছিলাম । আমার পিঠাপিঠি আরেকটা ছোট ভাই( চেয়ারম্যান০০৭) ছিল তাই আম্মুর চাকরীটা আর করা হয়নি দুইজন কে একসাথে বড় করতে আম্মুর অনেক কষ্ট হয়েছিল। ছোট বলে আমার চাইতে ও বরাবর‌ই সবার বেশি আদর পেত। এ নিয়ে আমার অভিযোগ ছিল নিরন্তর । ও ছেলে বলে মাগরীবের আযানের পরেও আরো বাড়তি কিছুক্ষন সময় মাঠে খেলার অনুমতি ছিল ।

আর আমি তখন হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসার প্রস্তুতি নিতাম আর ভাবতাম দুইজনের ক্ষেত্রে দুই নিয়মের প্রবর্তনকারিনী আমার মহিয়সী মাতা কবে আমার দিকে একটু সদয় হবেন । এদিকে ভাই আমার একহাতে ফুটবল আরেকহাতে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প নিয়ে বিশ্বজয়ীর ভংগীমায় গৃহাবর্তন! ওর মুখনিসৃত স্বর্বদন্ত বিকশিত হাসির সাথে এক প্রজাতীর মাছের মিল খুঁজে পেতাম তখন !!! নিত্যদিনের নতুন নতুন অনিয়ম(আমার দৃষ্টিতে))যেন আমার অভিযোগের থলিকে আরো ভারী করছে। আমার সকল অভিযোগ জানাতাম আব্বুকে । কারন একমামাত্র আব্বুই মন দিয়ে শোনে আমার সব অভিযোগ। আমার অভিযোগ গুলোর মধ্যে ছিলো (১)আমাকে সবার সাথে নদীতে নেমে গোসল করতে দেয়া হয়না(যদিও সাঁতার জানিনা ) (২)সন্ধ্যার পর আমাকে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেয়না আম্মু ।

(৩)স্কুল থেকে দূরে কোথাও পিকনিক এ নিয়ে গেলে আমাকে যেতে দেয় না আম্মু। যেখানে ছোট হওয়া সত্বেও আমার ভাইটা ঠিক ই যেতে পারত!! (৪)এলাকার ছেলে বন্ধুদের সাথে খেলাধূলা করা বন্ধ শিশু মন সান্তনা পায় এবার বুঝি আব্বু আমার সমস্যাগুলার আশু সমাধানে কান্ডারীর ভুমিকায় অবতীর্ন হবেন ! কিন্তু হায়!!!! সব শুনে আব্বু বল্ল আম্মু যা বলে ভালর জন্যই বলে একদিন বুঝবা.... আব্বুর ভবিষ্যত বানী ঐ সময় আমার ছোট মস্তিস্কের এন্টেনা ধরতে পারে নাই । অনেক বড় হয়ে গেছি আজ বুঝতে পারি আম্মুর শাসন বারণ কোনটাই অমূলক ছিলনা। অন্যদের চাইতে স্বাধীনতা হয়ত কম পেয়েছি কিন্তু আর আট দশজন এর চাইতে জীবনে ভুল অনেক কম করেছি শুধু আম্মুর কঠিন শাসনের কারণে এটা স্বগর্বে বলতে পারি। সত্যের সাথে কখনো আপোষ করতে দেখিনি আম্মুকে।

বান্ধবীদের সাথে ঝগড়া করে বাসায় এসে আম্মুর কাছে বিচার দিয়ে উল্টা কত যে বকা খেয়েছি...আর ওদের কে পরের দিন ডেকে আদর করে দিত। কাজের মানুষ দের কে ঘুম থেকে ডেকে কাজ করাতে দিতো না কখনো। বলতেন নিজের কাজ নিজে কর। তখন ভাবতাম আমার চাইতে ওরাই কত ভাগ্যবান!! আজ অনেক বড় হয়ে গেছি। নিজের সংসার হয়েছে...আম্মুকে যতই বলি শ্বাশুরী তোমার মতই আদর করে।

তারপর ও বুঝতে পারি মমতাময়ী মায়ের চোখজোড়া খুঁজে বেড়ায় তার মেয়ের মুখে কোথও কাল মেঘ আছে কিনা...। ছোট বেলার মত বানিয়ে বানিয়ে আবার মিথ্যা বলছে নাতো মেয়ে!!!! মা তো মা ই । এমন বন্ধুসুলভ মা পেয়ে সত্যি অনেক গর্ব বোধ করি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এমন মা এর কাছাকাছি একজন মা বানিয়ে দিও আমাকে। উৎসর্গ-- সদা উচ্ছল শিপু ভাই, পুচ্চি পার্লিনমনি, আর পরীর মত সুন্দরীতমা ভাবীকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।