আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমণ এবং নেপাল থেকে দার্জিলিং - ৩

সবার আগে দেশপ্রেম শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে পাহাড়ী পথে যে মাইক্রো বাস গুলো চলে সবই ব্রান্ডনিউ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির প্রতিটি চাকায় গিয়ার থাকে। নতুন গাড়ীগুলো কিছুদিন পরে পুরানো হয়ে গেলে আর এই রাস্তায় চালানো যায়না। এসব কথা আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আমাদের বলছে। আমি খুব আনন্দে আছি শুধু কথা বলা নিয়ে।

আজ আমি মনের সুখের বাংলায় কথা বলছি, বাংলায় কথা শুনছি। যা গত পনের দিনে আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। গাড়ি সাই সাই করে পাহাড় বেয়ে পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরি রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। আমরা সবাই প্রাণ ভরে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরি রাস্তা গুলো দেখে অবাক হচ্ছি এগুলো কিভাবে তৈরি করা হলো।

রাজু বলল, এগুলো সব ব্রিটিশদের অবদান। ব্রিটিশরা না হলে এই রাস্তা এই দার্জিলিং শহর কিছুই হতোনা। ছিদ্দিক ওর নামটা যাই হোক ওকে এখন আমি ছিদ্দিক বলেই বলব যার একটাই গুণ কৌতুক বলে কিংবা হাস্যরসাত্তক কিছূ বলে আমাদের হাসিতে ফাটিয়ে দেয়। অন্যেরা হাসতে হাসতে লাফাতে লাফাতে বলে ফাটাফাটি বলেছো আবার একটা কিছু বল। ছিদ্দিক সুযোগ করে এলাল্ড জোক বললেই আবার লাফালাফি শুরু হয়ে যায়।

এলাল্ড জোক একটা বলেই ছিদ্দিক অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে যাতে আমি ওই সময় তাকে কিছু বলতে না পারি। আমার বড় বড় দাড়িগুলো আমাকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে শ্রদ্ধাশীল করে রেখেছিল। এলাল্ড জোকের হাসি শুনে রাজু বলল, বেশি হাসাহাসি বন্ধ করে এবার আল্লাহ আল্লাহ শুরু করো সামনে বিপদ আছে। আমরা ও দেখলাম আমাদের গাড়ী এখন এমন খাড়া ভাবে উপরের দিকে উঠছে যে মনে হয় যে কোন সময় উল্টে পিছনের দিকে পরে যাবে। আমরা সত্যি সত্যি মনে আল্লাহ আল্লাহ জিকির শুরু করে দিয়েছি।

এতক্ষণ এত হাসাহাসি অথচ এখন সবাই চুপচাপ। একবার জানালা দিয়ে তাকাতে চেষ্টা করলাম। আমার মাথা ঘুরে উঠলো। মনে হয় যে কোন মুহুর্তই একটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। চোখ বন্ধ করে রাখলাম।

রাস্তার খাড়া ভাব আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। নেপালের পাহাড়ী রাস্তায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে এঅবস্থা আমার জন্য আরও কষ্টকর হতো। গাড়ী এখন ঝুকিমুক্ত ভাবে চলছে। আমরা সবাই সাভাবিক হলাম। বাইরের দিকে তাকাচ্ছি।

প্রকৃতির অপরূপ রূপ যেন কত অনন্দকর তাই দেখছি। দেখছি আমাদের পাশদিয়েই চলছে ন্যাড়ো এঙ্গেল রেল। মনে হলো এই রাস্তায় রেলে চড়া হয়তো আরও ভয়ঙ্কর। হাত বাড়িয়ে বাইরের বাতাস স্পর্শ করতে চাইলাম। ঠান্ডা শিতল বাতাস আমার হাত স্পর্শ করে গেল।

একটা শিহরণে মনটা নেচে উঠলো। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। সবাই নিজের মতো করে উপভোগে ব্যস্ত। ছিদ্দিক মনে হয় কখনো চুপ করে থাকার ছেলে নয় কোন না কোন গল্প করে কাটানো যার সভাব সেও চুপ করে চারদিকটাকে দেখছে। আমিই আমার হাতটাকে বাইরে ঝুলাতে ঝুলাতে বললাম, কি আনন্দ তাই না।

একটার পর একটা বাড়ী দেখতে পেলাম। পাহাড়ের চা বাগান অপরূপ যেন স্বপ্নের শহর আমরা দার্জিলিং শহরে এসে পড়েছি। পাহাড়ের গায়ের সাথে হেলে দুলে ভুপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০০ ফিট উপরের পাহাড়ের চুড়ায় কিভাবে একটা শহর হতে পারে তা দার্জিলিং না গেলে বোঝানো সম্ভব নয়। আকাশে হালকা হালকা মেঘ। মেঘ শুধু উপরের আকাশে নয় নিচের আকাশেও।

নিচের দিকে তাকিয়ে মেঘ দেখছি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখছি । মেঘগুলো পাহাড়কে ছুয়ে ছুয়ে ছুটে যাচ্ছে। গাড়ির সামনে হালকা কুয়াশার মতো মনে হলো। আমার হাততো বাইরেই রাখা। হাত ছুয়ে গেল হালকা পানির ঝলক।

আহা কুয়াশাতো নয় মেঘ। মেঘ শুধু উপরে আর নিচেই নয়। আমার হাতেও। আমাদের গাড়ী ছুয়ে গেল একঝাক মেঘ। গাড়ী গুটে চলছে দার্জিলিং শহরের ভিতরের দিকে।

রাজু তাকে বলল, কোন হোটেলের সামনে গিয়ে আমাদের রাখবেন। ড্রাইভার তাই করলো। আমরা গাড়ী থেকে নেমে আমাদের জিনিস পত্র সব একত্রে জড়ো করলাম। রাজু আর ছিদ্দিক সাথে আমিও আমার লাগেজ হাতে একটা একটা করে তিনটি হোটেলে ঢুকে রুম খোজলাম। হোটেলগুলো লোকেলোকারন্য নয়।

রুমও পাওয়া যায় পছন্দ মতো। গায়ে নেপাল থেকে পড়ে আসা পোশাক গুলো এখনো জড়ানো। নেপালে কত গরম। সেদিন আগষ্টের ১০ তারিখ। শিলিগুড়িতে যখন গাড়ীতে উঠছিলাম ঘামে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম।

আর এখন দার্জিলিং এ। কেমন যেন শীত শীত করতে লাগলো। হেটেলের ভাড়া খাওয়া খরচ একত্রে হওয়ায় মেনু দেখে একটা হোটেলের তিনটি রুম দশ জনের জন্য নিয়ে নিলাম। (চলবে) ... ... নেপাল ভ্রমনের সবগুলো লেখা এবং নেপাল থেকে দার্জিলিং লেখার লিংক সমূহ: নেপাল থেকে দার্জিলিং - ২ :: নেপাল থেকে দার্জিলিং :: নেপাল ভ্রমন : চতুর্দশ পর্ব :: নেপাল ভ্রমন : ত্রয়োদশ পর্ব :: দ্বাদশ পর্ব :: প্রথম পর্ব ::দ্বিতীয় পর্ব :: তৃতীয় পর্ব :: চতুর্থ পর্ব :: পঞ্চম পর্ব :: ষষ্ট পর্ব :: সপ্তম পর্ব :: অষ্টম পর্ব :: নবম পর্ব :: দশম পর্ব :: একাদশ পর্ব  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।